সাপাহারে চাষ হচ্ছে তামিলনাড়ুর বারো মাসি সজিনা

 

সাপাহার  প্রতিনিধিঃ

 

পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর বারোমাসি সজিনার চাষ বাণিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে নওগাঁর সাপাহারে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সজিনার চাষ করছেন সাপাহার সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আকবর আলী। বর্তমানে তার এ বাগানটিতে গাছ গুলোর বয়স সাড়ে ৩ মাস। গাছ গুলোতে ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে মুকুল।

 

আকবর আলী জানান, নতুন কিছু করার জন্য ইউটিউবে সার্চ করেন বিভিন্ন সবজি চাষের জন্য। এরই মধ্যে চোখে পড়ে বারোমাসি সজিনা চাষের ভিডিও মুলত সেখান থেকেই আগ্রহ বাড়ে সজিনা চাষের। উপজেলার ফুরকুটিডাংগা এলাকার বেশ কিছু পতিত জমিতে শুরু করেন সজিনা চাষ। সাড়ে ৩ মাসের সজিনা গাছ দেখে তিনি বেশ খুশি।

 

তিনি আরও বলেন, ভারতের তামিলনাড়ু থেকে ওডিসি-৩ জাতের বীজ সংগ্রহ করে শুরু করেন সজিনার চাষ। বর্তমানে তার জমিতে প্রায় ২শ গাছ রয়েছে। সম্পূর্ণ জৈব সার ব্যবহার করে সামান্য পরিচর্যায় বীজ বপনের সাড় ৩ মাসের মধ্যেই প্রতিটি গাছে ফুল-ফল আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাগানের গাছ গুলোতে অল্প পরিমানে ঝুলছে সজিনা ডাটা ও ফুল। আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে সজিনা পুরোদমে আসতে শুরু করবে। বাজারে সজিনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

 

পুষ্টি বিজ্ঞানীরা সজিনা গাছকে অলৌকিক গাছ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এর পাতায় আট রকম অত্যাবশ্যক এমাইনো এসিডসহ ৩৮% আমিষ থাকে যা বহু উদ্ভিদে নাই। সজিনার পাতা পুষ্টিগুণের আধার। এছাড়া শুকনো সজিনার পাতায় উচ্চ মাত্রায় পুষ্টি থাকে। সজিনার বীজের তেলে সে এসিড থাকে তা বহু রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এ গাছের প্রতি গ্রাম পাতায় গাজরের চারগুণ বেশি ভিটামিন এ, দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ক্যালশিয়াম, কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পটাসিয়াম, কমলালেবুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন, দইয়ের চেয়ে ২ গুণ বেশি প্রোটিন আছে। বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, সজিনা পাতায় ৪২% আমিষ, ১২৫% ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনেসিয়াম, ৪১% পটাশিয়াম, ৭১% লৌহ, ২৭২% ভিটামিন-এ এবং ২২% ভিটামিন -সিসহ দেহের আবশ্যকীয় বহু পুষ্টি উপাদান থাকে। ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতাসহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতিজনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।

 

সজিনার পাতাকে এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি বলা হয়। ৪৬ রকমের এন্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান। এরমধ্যে ভিটামিন-সি, বিটা ক্যারোটিন, কিউরেকটিন এবং ক্লোরোজেনিক এসিড বিদ্যমান। উল্লেখ্য, এসব উপাদানই মানবদেহের জন্য উপকারী। বিশেষ করে ক্লোরোজেনিক এসিড রক্তের চাপ ও শর্করা কমাতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে এবং পালং শাকের চেয়ে তিনগুণ বেশি আয়রন বিদ্যমান, যা এ্যানেমিয়া দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সজনে শরীরে কোলস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও অন্যতম অবদান রাখে। ৩ মাসের ব্যবহারে এটি কোলস্টেরল লেভেল অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে।

 

তিনি বর্তমানে ওডিসি-৩ জাতের সজিনার বীজ থেকে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার চারা উৎপন্ন করেছেন। এগুলো তিনি নতুন চাষীদের মাঝে স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করতে চান। চারা বিক্রিতে যদি ভালো সাড়া পান তাহলে আরও কয়েক হাজার চারা উৎপন্ন করতে চান বলেও জানান।

 

 

সানশাইন/তৈয়ব


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ | সময়: ৭:৩৮ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine