বদলগাছীতে ম্যানেজারের প্রতারণায় বর্গাদার সেজে জমি দখল ও বিক্রির চেষ্টা 

বদলগাছী প্রতিনিধিঃ

নওগাঁর বদলগাছীতে বর্গাদার সেজে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে আতোয়ার রহমান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তিনি বদলগাছীর শেরপুর গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হক সোনারের ছেলে। জমির প্রকৃত মালিক মৃত ডা. ইসতিয়াক চৌধুরীর স্ত্রী নিঘাত সুলতানা ও তার সন্তানেরা।

 

 

 

তথ্য সংগ্রহকালে জানা যায়, আতোয়ার রহমান ২০২১ সালে এক বছরের জন্য ২ একর ৬৯ শতক জমি বর্গা নেন নিঘাত সুলতানার ম্যানেজার আব্দুস সালামের কাছ থেকে। একবার বোরো ধান আবাদ করার পর তিনি দাবি করেন ম্যানেজারের সাথে ৬০ লাখ টাকার চুক্তি করে ৫৫ লাখ টাকা প্রদানের মাধ্যমে জমিগুলো কিনে নিয়েছেন। এ কথা শুনে জমির মালিক নিঘাত সুলতানা আতোয়ারকে বাদ দিয়ে আগের বর্গাদার মহসীন আলীকে জমি চাষাবাদ করতে বলেন। মহসীন চলতি বছরের ২৫ আগস্ট জমি চাষাবাদ করতে গেলে আতোয়ার রহমান স্ত্রী-সন্তান’সহ ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল নিয়ে মহসীনের উপর হামলা করে। এতে মহসীনসহ অন্যান্য ক্ষেত মজুর গুরুতর আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। এ ঘটনায় মহসীন আলী বাদী হয়ে আতোয়ার রহমান’সহ পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

 

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ডা. ইসতিয়াক চৌধুরী তার পৈত্রিক সূত্রে শেরপুর ও সোহাসা দুুই মৌজা মিলিয়ে মোট ২২ বিঘা জমি পান। পেশাগত কারণে এলাকায় না থাকায় ২০০৮ সাল থেকে নওগাঁর বক্তারপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুস সালামকে ম্যানেজারের দায়িত্ব দেন, তিনি জমিগুলো গ্রামের বিভিন্ন মানুষের কাছে বর্গা দেন এবং বর্গার টাকা নিয়মিত মালিককে দেন। ২০১২ সালে ডা. ইসতিয়াক চেীধুরী মারা গেলে উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক হন তার স্ত্রী নিঘাত সুলতানা ও সন্তানেরা। ম্যানেজার সালাম তখন থেকে নিঘাত সুলতানাকেই বর্গার টাকা দিতেন। ২০২০ সাল পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ ম্যানেজার আব্দুস সালামের মাথায় প্রতারণার ভূত মাথাচারা দিয়ে ওঠে। তিনি এলাকায় প্রচার করেন নিঘাত সুলতানা সব জমি বিক্রয় করে দেবেন। এই খবরে সুইট হোসেন, আব্দুস সালাম, আবু বক্কর, হেলাল হেসেন, আতোয়র রহমান ও রফিকুল ইসলাম জমি কেনার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

এদের মধ্যে শেরপুর গ্রামের সুইট হেসেন ১৪ কাটা জমির জন্য তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রদান করেন। সোহাসা গ্রামের আব্দুস সালাম এক বিঘা ১৭ কাটা জমির জন্য ১০ লাখ টাকা চুক্তি করে আট লাখ টাকা প্রদান করেন। শেরপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম সাড়ে পাঁচ বিঘা জমির জন্য ২২ লাখ টাকা চুক্তি করে ১৪ লাখ টাকা প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে ছয় লাখ টাকা কৌশলে ফেরত নেন। শেরপুর গ্রামের আতোয়ার রহমান এক বিঘা জমির জন্য ছয় লাখ টাকা প্রদান করেন।
এসব টাকা ম্যানেজার আব্দুস সালাম জমির মালিক নিঘাত সুলতানাকে কোন কিছু না জানিয়ে নিজেই টাকাগুলো হাতিয়ে নেন। জমির ক্রেতারা জমি রেজিস্ট্রির কথা বললে ম্যানেজার আব্দুস সালাম জানান নিঘাত সুলতানার জমি কিনতে হলে আগে টাকা পরিশোধ করতে হবে তার পরে রেজিস্ট্রি। সব মিলিয়ে ম্যানেজার আব্দুস সালাম প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

 

এ বিষয়ে সোহাসা গ্রামের ভুক্তভোগী আব্দুস সালাম বলেন, নিঘাত সুলতানার ম্যানেজার আব্দুস সালামের সাথে এক বিঘা ১৭ কাটা জমির জন্য ১০ লাখ টাকা চুক্তি করে আট লাখ টাকা প্রদান করি। জমি রেজিস্ট্রির কথা বললে ম্যানেজার বিভিন্ন রকম তালবাহানা করেন। পরবর্তীতে প্রতারণার শিকার হয়েছি বুঝতে পেরে কোর্টে একটি মামলা করেছি।

 

শেরপুর গ্রামের আতোয়ার রহমান বলেন, আমি ম্যানেজার সালামের সাথে ১০ বিঘা জমির জন্য ৬০ লাখ টাকা চুক্তি করে ৫৫ লাখ টাকা প্রদান করে জমিটি ক্রয় করি। নিঘাত সুলতানার কাছ থেকেই তিনি জমি কিনেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দেননি। এবং জমি দখলের জন্য নিঘাত সুলতানার বর্গাদার মহসীন আলীর উপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।

 

এ বিষয়ে জমির মালিক নিঘাত সুলতানা বলেন, ম্যানেজার আব্দুস সালাম দীর্ঘদিন যাবত আমাদের ম্যানেজার ছিলেন। কিন্তু তিনি আমাদের কিছু না জানিয়ে বিভিন্ন জনের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। আমি ওর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি। ম্যানেজার সালামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

 

 

এ বিষয়ে বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান বলেন, জমির মালিক নিঘাত সুলতানা। সেখানে আতোয়ার রহমান নামে এক ব্যক্তি বর্গাদার সেজে অবৈধভাবে নিজের জমি দাবি করে দখল করার চেষ্টা করে। নিঘাত সুলতানার কেয়ারটেকার মহসীন আলী থানায় অভিযোগ করলে আমরা অবৈধ দখলদারদের সেই জমি থেকে সরিয়ে দেই।

 

 

সানশাইন/তৈয়ব

 


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ | সময়: ১০:৩৩ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine