সর্বশেষ সংবাদ :

পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেটের বড় জয় ভারতের

স্পোর্টস ডেস্ক: এশিয়া কাপের ম্যাচে রোহিতের দল পাকিস্তানকে হারিয়েছে ৫ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়েছে। তবে এই জয়টা সহজ হয়নি ভারতীয়দের। স্নায়ুক্ষয়ী এই লড়াই চলে শেষ ওভার পর্যন্ত।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা অবশ্য শুরুতেই একটা ‘জয়’ তুলে নিয়েছিলেন। টসভাগ্যটা হেসেছিল তার পক্ষেই, বেছে নিয়েছিলেন বোলিং। যদিও একে তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ ছিলেন রোহিত। কেন, সে কারণটা তো তার দলের রান তাড়া করা দেখেই বোঝা হয়ে গেছে অনেকটা! একটু এদিক ওদিক হলেই যে ম্যাচটা জিতে যেতে পারত পাকিস্তানও!
টস জিতে অধিনায়ক রোহিত জানিয়েছিলেন, উইকেটে থাকা ঘাসের ব্যবহারটা করতে চান তিনি। হার্দিক পান্ডিয়া, ভুবনেশ্বর কুমাররা সেটা করলেনও! তৃতীয় ওভারে ভুবনেশ্বরের শর্ট বলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে ১০ রানে বিদায় নেন বাবর আজম। এরপর আবেশ খানের লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাট আলতো ছুঁইয়ে ফখর জামানের ‘ওয়াক’, কিংবা ইনিংসের ১৩তম ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার লিফটারে ইফতিখার আহমেদের বিদায়, অথবা এক ওভার পর সেট ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেট, তার সবকটি উইকেটেই কৃতিত্ব ছিল ভারতীয় বোলারদের করা শর্ট বলের। ১০০ ছোঁয়ার আগে যে বিদায় নিলেন খুশদিল, সেটাও ছিল এক শর্ট বলেই।
রিজওয়ান, ইফতিখার আর খুশদিলকে ফিরিয়ে পাকিস্তানকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন পান্ডিয়া। বাকি কাজটা সেরেছেন ভুবনেশ্বর। শুরুতে বাবরকে ফেরানো এই পেসার এরপর একে একে ফিরিয়েছেন বিপদজনক আসিফ আলি আর শাদাব খানকে। তাতে পাকিস্তানের গড়পড়তা সংগ্রহও দুষ্কর বলে মনে হচ্ছিল। ১২৮ রানেই যে খুইয়ে বসেছিল ৯ উইকেট! সেখান থেকে শাহনেওয়াজ দাহানির দুই ছক্কায় করা ৬ বলে ১৬ আর হারিস রউফের ৭ বলে ১৩ রানের ছোট্ট দুই ক্যামিওতে দেড়শ ছোঁয়া সংগ্রহ পায় দুই বারের এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়নরা। ভারতের সামনে লক্ষ্যটা দাঁড়ায় ১৪৮ রানের।
জবাবে শুরুতেই লোকেশ রাহুলকে হারিয়ে বসে ভারত। ধীরগতির উইকেটে ১৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করার কাজটা সহজ নয়। কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায় যখন দলের ওপেনার ফেরেন শূন্য হাতে, শুরুর ওভারেই। নাসিম শাহর শিকার হয়ে রাহুলের ফেরাটা ভারতকে অবশ্য অত ভাবায়নি। উইকেটে যে রোহিত-কোহলি ছিলেন! কোহলি শুরুতে অনেকটা নড়বড়ে থাকলেও সময়ের সাথে সাথে তিনি উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন বেশ। রোহিত শুরুতে নড়বড়ে না থাকলেও খেলছিলেন বেশ ধীরগতিতে।
তবে তিনি খোলস ছেড়ে বেরোনোর চেষ্টা করেন অষ্টম ওভারে। সে ওভার করতে আসা মোহাম্মদ নওয়াজকে চতুর্থ বলে লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান তিনি। এর এক বল পর তিনি আবারও ছক্কা হাঁকাতে চাইলেন, এবার লং অফ দিয়ে। তবে ডাউন দ্য উইকেটে এসে তার টাইমিংটা মিলল না এবার। বলটা গিয়ে সোজা জমা পড়ল ইফতিখার আহমেদের হাতে। অষ্টম ওভার শেষে ৫০ রানে ভারত হারায় তাদের দ্বিতীয় উইকেট।
পরের ওভারে কোনো বিপদ হয়নি দলটির। হলো দশম ওভারের শুরুর বলে। আগের ওভারের শেষ বলে রোহিতকে বিদায় করা নওয়াজ এবার শিকার করেন কোহলিকে। দশম ওভারের শুরুর বলে তাকে রোহিতের মতোই লং অফ দিয়ে সীমানাছাড়া করতে চেয়েছিলেন কোহলি। টাইমিং হয়নি ঠিকঠাক, বলটা সোজা গিয়ে জমা পড়ে সেই লং অফে থাকা ইফতিখারের হাতে। নিজের পরপর দুই বলে রোহিত-কোহলিকে ফিরিয়ে ভারতকে রীতিমতো নাড়িয়েই দেন নওয়াজ।
তবে ভারতের ভরসা ছিল তাদের ব্যাটিং লাইনআপের গভীরতা। শেষ কিছু দিনে দারুণ ফর্মে থাকা সূর্যকুমার যাদব নামলেন পাঁচে, রবীন্দ্র জাদেজারও পরে। তিনি অবশ্য আজ পাকিস্তানের বোলিংয়ের সামনে নড়বড়ে ছিলেন বেশ, ১৮ বলে ১৮ রান করে তিনি ফেরেন নাসিম শাহর শিকার হয়ে। এরপরই দৃশ্যপটে হার্দিক পান্ডিয়ার আগমন। বোলিংয়ে পাকিস্তানের বড় রানের আশা গুঁড়িয়ে দেওয়া এই অলরাউন্ডার ব্যাটিংয়েও হয়ে যান ভারতের বড় ভরসার নাম। জাদেজাকে নিয়ে তার গড়া ২৯ বলে ৫২ রানের জুটিই ভারতকে নিয়ে যায় জয়ের খুব কাছে।
শেষ ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৭ রান। মোহাম্মদ নওয়াজের করা সেই ওভারের প্রথম বলে ছয় মারার নেশায় উইকেট খুইয়ে বসেন জাদেজা। এরপর দীনেশ কার্তিক এসে প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক ফিরিয়ে দেন পান্ডিয়াকে। তৃতীয় বলে রান পাননি, ভারতের প্রয়োজনটা গিয়ে ঠেকে ৩ বল থেকে ৬ রানের। তখনই এক ছক্কায় ম্যাচের সব রোমাঞ্চ শেষ করে পান্ডিয়া ভারতকে এনে দেন ৫ উইকেটের জয়। ১০ মাস আগের সেই হারের প্রতিশোধটাও নেওয়া হয়ে যায় তাতে।


প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২২ | সময়: ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর