হিলি বন্দরে আটকা ৯ হাজার টন চাল

সানশাইন ডেস্ক: দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানির অনুমতি পান ব্যবসায়ীরা। এরজন্য তাদের আমদানি শুল্কেও ছাড় দেওয়া হয়। ৬২.৫ ভাগ থেকে কমিয়ে শুল্ক নির্ধারণ হয় ২৫ ভাগ। তবে ব্যবসায়ীরা এই শুল্কেও ছাড় চান। এরজন্য হিলি দিয়ে আসা ৯ হাজার টনের বেশি চাল বন্দর থেকে ছাড় করাচ্ছেন না তারা। এ কারণে রবিবার পর্যন্ত ২২৭টি ট্রাকে ৯ হাজার ২৭০ টন আমদানি হওয়া চাল বন্দরে পড়ে রয়েছে। চাল খালাস না করায় ভারত থেকে চাল নিয়ে আসা ট্রাকচালকরাও বিপাকে পড়েছেন।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, শুল্ক কমানোয় ও আমদানির অনুমতি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে চাল আনা শুরু করেছে। কিন্তু ভারতের ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে আগের চেয়ে ডলার রেট বাড়ার কারণে চাল আমদানি করে আমাদের লোকসান হচ্ছে। যে কারণে আমদানিকারকরা বন্দর থেকে চাল খালাস করছেন না। এতে বন্দরের অভ্যন্তরে প্রায় দুইশ’র বেশি চালের ট্রাক আটকা পড়েছে। ব্যবসায়ীরা আশায় আছেন, হয়তো সরকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নেবে। চালের ওপর আরোপিত ২৫ ভাগ শুল্ক প্রত্যাহার করলে ব্যবসায়ীরা চাল খালাস করে নেবেন। এতে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ায় দামও কমে আসবে।
আরেক আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, ডলার রেটের উঠানামার কারণে আমরা এক দামে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করছি, আর ব্যাংকে বিল ছাড়তে হচ্ছে বাড়তি মূল্যে। এতে করে আমদানি হওয়া চাল নিয়ে আমাদের লোকসানে পড়তে হচ্ছে। স্থলবন্দরের সিআ্যন্ডএফ এজেন্ট রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমদানিকারকরা বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত রেখেছেন। তবে তারা শুনেছেন সরকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নেবে, এই আশায় তারা চাল খালাস করছেন না। কেউ কেউ চাল খালাস করেছেন, তবে তা পরিমাণে কম। তারা ভয় করছেন সরকার যদি শুল্ক কমায় তাহলে তারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
হিলি বাজারের চাল ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে চাল আমদানি হলেও সেগুলো বাজারে আসছে না। সব চাল বন্দরের ভেতরেই আটকে পড়েছে। সরকার শুল্ক কমাবে এই আশায় আমদানিকারকরা চাল খালাস করছেন না। বন্দর থেকে চাল খালাস হয় তাহলে আমদানি করা চাল বাজারে প্রবেশ করবে। এতে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এদিকে চাল নিয়ে এসে আটকে পড়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ভারতীয় ট্রাকচালকরা। চালক গোলাম রাব্বানি বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা চাল নিয়ে স্থলবন্দরে আসার ২১ দিন পার হয়েছে। তবে এখনও ট্রাক থেকে চাল নামানোর কোনও নাম-গন্ধ নেই। আমরা সঙ্গে করে যে খাবার নিয়ে এসেছিলাম, তাও শেষ। সঙ্গে আনা টাকা-পয়সাও শেষে দিকে। এ অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিন-রাত পার করতে হচ্ছে আমাদের।
স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, চালের আমদানি শুল্ক কমানোয় গত ২৩ জুলাই থেকে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আসা শুরু হয়। প্রথমের দিকে চাল কম এলেও বর্তমানে আমদানি বেড়েছে। প্রথমের দিকে ৩-৫ ট্রাক চাল আমদানি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ২০-২৫ ট্রাক হয়েছে। তবে আমদানি বাড়লেও চাল খালাস হচ্ছে না। বন্দরে বর্তমানে ২২৭ ট্রাকে ৯ হাজার ২৭০ টন আমদানি হওয়া চাল হল্টেজ অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া বন্দর দিয়ে ২৩ জুলাই থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ২৬২টি ট্রাকে ১০ হাজার ৬৩২ টন সিদ্ধ চাল ও ১৪২টি ট্রাকে পাঁচ হাজার ৮১২টন আতপ চাল আমদানি হয়েছে। প্রসঙ্গত, দেশীয় কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সরকার চালের আমদানি শুল্ক বাড়ানোয় গত বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি দেশীয় চালের সরবরাহ কমের অজুহাতে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে চালের বাজার। এ অবস্থায় সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি শুল্ক ৬২.৫ ভাগ থেকে কমিয়ে ২৫ ভাগ করে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। পরে ২৩ জুলাই থেকে বন্দর দিয়ে পুনরায় চাল আমদানি শুরু হয়।


প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২২ | সময়: ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ