বিশ বছর চাকুরী করে পদ হারালেন শিক্ষিকা

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: বাগমারায় চরম জালিয়াতি করে নিজ প্রতিষ্ঠানে স্ত্রীকে অবৈধ ভাবে নিয়াগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। এতে বৈধ ভাবে নিয়োগ পাওয়া সহকারি শিক্ষিকা বিশ বছর চাকুৃরী করে এখন পদ হারাতে বসেছেন। এ ঘটনায় বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সদস্য স্কুলের শিক্ষক কর্মচারী অভিভাবক সহ এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে নিজ পদে নিয়োগ বহাল রাখার দাবীতে পদ হারানো ওই শিক্ষিকা রাজশাহীর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরের উপপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের এই অনুলিপি জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছেও প্রেরণ করা হয়েছে।
অভিযোগ ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সূত্রে জানা গেছে, শাহানাজ পারভীনকে ঝিকরা আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ২০০২ সালে সহকারি শিক্ষক বিএ (সমাজ বিজ্ঞান) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই সময় থেকে তিনি অদ্যাবদি ওই পদে সুনাম ও দক্ষতার সাথে চাকুরি করে আসছেন। ওই সময় শাহানাজ পারভীন সহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হয়। এ সময় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের তথ্য পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম।
এ পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম তার স্ত্রী সাহারা খাতুনকে চাকুরী দিতে চরম প্রতারণার আশ্রয় গ্রহন করেন। তিনি নিয়োগ বোর্ডে সাহারা খাতুনকে উপস্থিত না করে পরবর্তীতে তার নামে ভূয়া নিয়োগ পত্র তৈরি করেন। পরে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হওয়ায় শাহানাজ পারভীনের স্থলে সাহারা খাতুনের নিয়োগ দেখিয়ে এমপিও’র কাগজপত্র পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। বিষয়টি পদ বঞ্চিত শাহানাজ পারভীন অবগত হওয়া পর প্রধান শিক্ষকের কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি শাহানাজ পারভীনের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন এবং এসব নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করতে।
এদিকে বিশ বছর চাকুরী করে বেতন বঞ্চিত ও পদ হারানোর আশংকার চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন শাহানাজ পারভীন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জীবনের সবকিছুই এই প্রতিষ্ঠানের জন্য উজাড় করে দিয়েছি। ২০০২ সালে চাকুরীর জন্য প্রতিষ্ঠানে জমি ও টাকা দিয়েছে। আজ এতবছর চাকুরী জানতে পারছি প্রধান শিক্ষক আমার পদে জালিয়াতি করে তার স্ত্রীকে নিয়োগ দিয়ে এখন তার কাগজপত্র বেতনের জন্য পাঠানোর পাঁয়তারা শুরু করেছেন।
তিনি দাবী করে বলেন ২০০২ সালে তার নিয়োগকালীন সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটির অনেক সদস্যরা এখনও জীবিত আছেন তারাও বিষয়টি অবগত আছেন।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের তৎকালিন সভাপতি আবেদ আলী জানান, শাহানাজ পারভীনকে সহকারি শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) পদে আমার হাত দিয়ে নিয়োগ। ওই সময় তাকে মহিলা কোঠায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী সাহারা খাতুনের নিয়োগ নিয়ে কোন কথাই ওঠেনি। অথচ এখন জানতে পারছি সাহারা খাতুনকে ওই সময় ২০০২ সালে নিয়োগ দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক তার নামে বেতন আনার জন্য অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেছেন। বিষয়টি চরম দুর্নীতি ও অমানবিক বলে দাবী করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, প্রধান শিক্ষক খুব ধূর্ত প্রকৃতির লোক। শাহানাহ পারভীন আপা দীর্ঘ বিশ বছর ধরে আমাদের সাথে শ্রম দিয়ে আসছেন। তিনি চাকুরীর জন্য প্রতিষ্ঠানে জমি ও টাকা অনুদান দিয়েছেন। আজ তিনি প্রধান শিক্ষকের ষড়যন্ত্রে পদ বঞ্চিত হতে চলেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকরা জানান, শাহানাজ পারভীনকে শুরুতে সহকারি শিক্ষক বিএ (সমাজ বিজ্ঞান) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন সাহার খাতুন স্কুলের কোন পদেই ছিলেন না। পরে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিজ স্ত্রীকে ভূয়া একটি নিয়োগ বোর্ড দেখিয়ে গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
শিক্ষকরা আরো জানান, শাহানাজ পারভীন প্রথম নিয়োগ বোর্ডের নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক। বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত হলে তিনিই সহকারি শিক্ষক বিএ (সমাজ বিজ্ঞান) পদটিতে নিয়োগ ও এমপিও ভুক্তির দাবীদার। কিন্তু ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হলে নিজ স্ত্রীর নাম ও এমপিও শীটে অন্তভুক্ত করার জন্য প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম চরম জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহন করেন।
এলাকাবাসীর মতে, প্রধান শিক্ষক শুধু শাহানাজ পারভীনের পদ পদবী কেড়ে নিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি এখন স্ত্রীর প্রলোভনে পড়ে চরম হিংসাত্নক হয়ে শাহানাজ পারভীনকে বিদ্যালয় ছাড়া করতে ওঠেপড়ে লেগেছেন। তাকে বিদ্যালয়ে যেতে ও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতেও বিভিন্ন ভাবে বাধা ও হুমকি প্রধান করে চলেছেন প্রধান শিক্ষক। এমনিক গত এক মাস যাবৎ তাকে হাজিরা খাতায় কোন স্বাক্ষর করতে দেননি।
এদিকে বিশ বছর চাকুরী করে এখন চাকরী সহ প্রতিষ্ঠানের নামে দেওয়া জমি ও অনুদানের টাকা সব কিছু হারিয়ে চরম মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন শাহানাজ পারভীন। তিনি প্রধান শিক্ষকের হুমকির বিষয়টি পুলিশকে অবিহত করেছেন পরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানান।
জালিয়াতি অনিয়ম ও অবৈধ ভাবে নিজ স্ত্রীকে নিয়োগ দান ও শাহানাজ পারভীনকে পদ বঞ্চিত ও ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম অভিযোগের আংশিক স্বীকার করে বলেন, প্রথম নিয়োগ বোর্ডে তার স্ত্রী সাহারা খাতুনকে হাজির করা হয়নি। কিন্তু একি সার্কুলারে পরবতীকে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তিনি দাবী করেন। তবে এই দাবীর বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে প্রতিষ্ঠানের তৎকালিন সভাপতি আবেদ আলী বলেন, কোন ভাবেই তার স্ত্রীকে ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহমুদুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তবে নোটিশ করলেও প্রধান শিক্ষক হাজির না হওয়ায় তদন্ত হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদা খানম বলেন, বিষয়টির দ্রুত করে যথাযত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা থানার ওসি রবিউল ইসলাম বলেন, ওই শিক্ষিকার বিদ্যালয়ে যাওয়া ও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নিয়ে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিষয়ে এখনো কোন লিখিত অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২২ | সময়: ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ