মানব পাচারে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় স্তরে

স্টাফ রিপোর্টার: “মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এবং জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২২ কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার সংক্রান্ত বিশ্ব প্রতিবেদনে, এখন বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় স্তরে উঠে এসেছে।
এ বছরসহ পরপর তিনবার বাংলাদেশ মানব পাচার সংক্রান্ত বিশ্ব প্রতিবেদনে তার এই অবস্থান সুরক্ষিত করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সরকারের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনের সকল কর্মকান্ড সমন্বয় ও নেতৃত্ব প্রদান করে চলেছে।
বৃহস্পতিবার মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২২ বাস্তবায়ন ও হালনাগানকরণ বিষয়ক রাজশাহী বিভাগীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম মুখলেছুর রহমান (রাজনৈতিক ও আইসিটি অনুবিভাগ) এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রায় ৩ হাজার আইন রয়েছে কিন্তু সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইন, ২০১২ কে। এই আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ ও সমস্যার কারণে মানুষ পাচারকারীদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে, তা নিরসনেও কার্যকর কর্মসূচির প্রয়োজন। এই বিবেচনা থেকেই, বাংলাদেশ সরকার মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১২-২০২২ প্রণয়ন করেছে। এটি এমন একটি অনন্য দলিল যাতে সকল ধরনের মানব পাচার বিরোধী কর্মকান্ডের রূপরেখা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এসডিজি লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের বিভিন্ন টার্গেট পূরণ করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানদন্ডে আমাদের ভালো করতে হলে মানব পাচার প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি মানব পাচারকে আধুনিক দাসত্ব এবং সংঘবদ্ধ অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে তিনি জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটিগুলোকে স্থানীয় পর্যায়ে সক্রিয় হওয়া ও অন্যান্য সরকারি দফতর, বেসরকারি সংস্থা এবং প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সাথে একযোগে কাজ করার আহবান জানান এবং জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮- ২০২২ এর নির্দেশনাগুলো মেনে চলার ও নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন চলমান কোভিড-১৯ বৈষিক মহামারির মুখে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কিছুটা ধীর হয়ে পড়লেও, কোভিড-১৯’এর প্রকোপ কমে আসার সাথে সাথে আমরা দ্রুততর সময়ে পিছিয়ে পড়া কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে, উইন্রক ইন্টারন্যাশনাল এর বাস্তবায়নে ফাইট স্লেভারী অ্যান্ড ট্রাফিকিং-ইন-পারসনস্ (এফএসটিআইপি) অ্যাকটিভিটি’র কারিগরি সহযোগিতায় জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভাগীয় কমিশনার, রাজশাহী এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে হোটেল এক্স, রাজশাহী- এ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ্ এনডিসি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আব্দুল বাতেন বলেন, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ ও জয়পুরহাট জেলাগুলো সীমান্তবর্তী হওয়ায় ভারতে কাজের উদ্দেশ্যে চলে যায়। তারা সে¦চ্ছায় সেখানে যায় তাই কেউ অভিযোগ করে না। কিন্তু যখন ভারতে গিয়ে তারা বিপদে পড়েন তখন মামলা করে। মামলা হলেই আমরা কেবল জানতে পারি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বলেন আমাদের একজন ছাত্র, একটি পরিবার দায়িত্ব নিতে হবে। তবেই এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়বে।
সভায় অতিথি অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক আবু হাসান মো: তারিক পিপিএম বলেন, দেশের প্রতিটা পুলিশ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে তাদের সংবেদনশীলতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা প্রয়োজন। বর্তমানে আমরা প্রায় ৪৫০০ জন কন্সটেবলকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তারাই একেবারে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।
সভার শুরুতেই সকলের উদ্দেশ্যে রাজশাহী অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) স্বাগত বক্তব্য রাখেন মো: জিয়াউল হক। সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উইন্রক ইন্টারন্যাশনাল’র ফাইট স্লেভারী অ্যান্ড ট্রাফিকিং-ইন-পারসনস্ (এফএসটিআইপি) অ্যাকটিভিটি’র চীফ অব পার্টি মিস লিসবেথ জোনাভেল্ড। পাশাপাশি তিনি সভার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন।
বিভাগীয় কর্মশালার উদ্দেশ্য ও কার্যপত্র: মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮- ২০২২ বিষয়ক একটি বিশ্লেষণধর্মী উপস্থাপনা তুলে ধরেন এ কে এম মাসুদ আলী, নির্বাহী পরিচালক, ইনসিডিন বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন আবু হাসান মো: তারিক, পিপিএম, অতিরিক্তি পুলিশ মহাপরিদর্শক ও প্রিন্সিপাল, পুলিশ একাডেমী, সারদা, রাজশাহী। এ কে এম মাসুদ আলী, নির্বাহী পরিচালক, ইনসিডিন বাংলাদেশ এর পরিচালনায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮- ২০২২ বাস্তবায়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপর একটি ওয়ার্কিং সেশনে অংশগ্রহণ করেন রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রে, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির সদস্যবৃন্দ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম মুখলেছুর রহমান (রাজনৈতিক ও আইসিটি অনুবিভাগ) এর পরিচালনায় উন্মুক্ত আলোচনায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮- ২০২২ বাস্তবায়ন এর অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপর অংশগ্রহণকারীদের মতামত গ্রহণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল ও অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক, বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জাতিসংঘ প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের এনজিও প্রতিনিধি, স্থানীয় সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ।
মো: মিজানুর রহমান, যুগ্ন-সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ (রাজনৈতিক -২ অধিশাখা), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মানব পাচার প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।


প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২২ | সময়: ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ