সর্বশেষ সংবাদ :

অভিযোগের পর অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে 

 

স্টাফ রিপোর্টার

 

অভিযোগ ১ .
২১শে অক্টোবর ২০২০। ১৮ লক্ষ বকেয়া টাকা বেতন বাকি পরিশোধের দাবিতে সচিব স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়,রাজশাহী জেলা প্রশাসক, দূর্গাপুর ইউএনও, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন আলাউদ্দিন ও রবিউল নামের দুই ইউপি সদস্য। অভিযোগে জানানো হয় ৩৫ মাসের বেতন পরিশোধ করেননি দূর্গাপুর উপজেলার ৪নং দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রেন্টু। অথচ ইউনিয়ন পরিষদের আয়ের কয়েকটি পথ রয়েছে। বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ লাভে থাকলেও চেয়ারম্যান বেতন দিচ্ছেন না তাদের।

 

অভিযোগ ২.
পুঠিয়া উপজেলার ব্যবসায়ীর নিকট থেকে ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন চেয়ারম্যান রিয়াজুল। বিনিময়ে তাকে চেকের পাতা দেন। পরবর্তীতে টাকা দিতে অস্বীকার করার আক্কাস আলী চেয়ারম্যান রিয়াজুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন জালিয়াতির। পরে মিমাংসার মাধ্যমে টাকা গুলো ফেরত দেন চেয়ারম্যান রিয়াজুল। কিš‘ সেসময় আক্কাস আলীর কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ও ছবি নিয়ে রাকাব দূর্গাপুর শাখায় একটি ভূয়া হিসাব খোলেন ব্যাংকের কর্মকর্তার মাধ্যমে। চেয়ারম্যান রিয়াজুল তার ভাই সাইদুর রহমানকে দিয়ে সেন্টু আহমেদের ভূয়া হিসাব খোলেন। সেখানে জাল স্বাক্ষর করেন সাইদুর। এরপর আক্কাস আলীর ছেলে সেন্টুর একাউন্টে সাইদুর ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক পাঠান। কিš‘ সেন্টুর একাউন্টে সেই পরিমাণ টাকা না থাকায় চেকটি ফেরত পাঠানো হয়। এরপর সেই চেক দিয়ে জালিয়াতির মামলা করেন সাইদুর। ফলে সেই মামলায় দূর্গাপুর আদালত থেকে সেন্টুর নামে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি হলে তারা জানতে পারেন কৃষি ব্যাংক দূর্গাপুর শাখায় একটি ভূয়া হিসাব খুলে তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করার কথা। আক্কাস আলী খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন এমন কান্ডের মূল হোতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রেন্টু, তার ভাই সাইদুর রহমান ও ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুর রহমান। আক্কাস আলী তাদের তিনজনের নামে মামলা করলে সেই মামলায় জামিন নিতে গেলে চেয়ারম্যান ও তার ভাইকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

 

অভিযোগ ৩ :
অবৈধভাবে ফসলী জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে পুকুর খনন করায় প্রথমে সতর্ক করা হলেও গুরুত্ব না দেয়ায় পরবর্তীতে আবারো পুকুর খনন করায় ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সমর কুমার পাল। তবে জনপ্রতিনিধি হয়েও শিক্ষা নেননি ৪নং দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রেন্টু।

 

অভিযোগ ৪:
ডিড জালিয়াতির মাধ্যমে ৭৬ বিঘার একটি পুকুর জবর দখল। সেখানে কৌশলে তের মাসে এক বছর করে নিয়ে পুকুর করছেন। চলতি মাসের ৮ আগস্ট পুকুরের মালিকরা দেলুয়াবাড়ী ইউপির আংরার বিলে মানব বন্ধন করেন। পুকুর লিজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও জোরপূর্বক দখল ও কৃষকের কাছ থেকে লিজ নেয়ার ডিড জালিয়াতি করে ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রেন্টু পুকুরটি জবর দখল করে নিয়েছেন বলে মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়।

 

একই অভিযোগে গত ১ আগস্ট ৪ নং দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রেন্টুর বিরুদ্ধে দূর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন পুকুর মালিকরা।

 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দূর্গাপুর উপজেলার ৪ নং দেলুয়াবাড়ী গ্রামের সাথে আংরার বিলে গ্রামের কৃষকদের ৭৬ বিঘার একটি পুকুর ১০ বছর আগে ৬০ জন কৃষকের কাছে থেকে ১০ বছরের জন্য দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রেন্টু লীজ নেয়। সেই সময় মাত্র ৯ হাজার টাকা বিঘা প্রতি বছর চুক্তিতে ১০ বছরের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান রেন্টু কৌশলে লীজ নিয়েছিলেন। পুকুর লীজ নেয়া ১০ বছর পূর্তি হলেও তিনি ১৩ মাসে এক বছর মেয়াদে ডিড করে নেয়। কিন্তু ডিডের কাগজ কোন কৃষককে দেখাননি তিনি। এমনকি ১৩ মাসে এক বছর হিসাবে পুকুর লীজ নেয়ার বিষয়টি সবার কাছে গোপন রাখেন তিনি।

 

সেই পুকুরে উপজেলার নারায়নপুর জামে মসজিদেরও ২ বিঘা ৫ কাঠা জমি রয়েছে বলে মানববন্ধনে জানানো হয়। গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় গ্রামের সালিসে চেয়ারম্যান রেন্টুকে নিয়ে পুকুরের জমির মালিকরা বৈঠকে বসলে তিনি জমির মালিকদের চাপের মুখে পড়ে পুকুরের দখল ছেড়ে দেয়ার কথা বলে চারদিন সময় নেন। কিš‘ু সময় অনেক আগেই অতিবাহিত হলেও তিনি এখন পর্যন্ত পুকুর দখল করে রেখেছেন। একইসঙ্গে তিনি আরও ১০ মাস পুকুর দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

 

মোকাদ্দেস, আব্দুল হান্নান, আব্দুল মান্নান, কাউছার আলী, হোসেন আলীসহ একাধিক ভুক্তভোগী পুকুর মালিক মানববন্ধনে জানান, লীজের মেয়াদ শেষ হলেও চেয়ারম্যান রেন্টু জোর করে দখল করে রেখেছে আমাদের পুকুর। তাছাড়া বর্তমান বাজারে ৫০ হাজার টাকা বিঘা প্রতি বছর হিসাবে চুক্তি হচ্ছে এমন একাধিক পুকুর এলাকায়। প্রায় ৬০ জন কৃষকের জমি চেয়ারম্যান রেন্টু জালিয়াতি ও জবর দখল করে তার ক্ষমতার বলে দখল করে রেখেছে। উল্টো হুমকির মুখে রেখেছেন পুকুর মালিক কৃষকদের। কৃষকদের জিম্মি করে রেখেছে রেন্টু। চেয়ারম্যান রেন্টুর দখল থেকে মুক্ত ও গ্রামের ৬০ জন কৃষকের জমিতে পুকুর তার হাত থেকে উদ্ধার ও ন্যায্য পাওনার টাকা পুকুর মালিকদের বুঝিয়ে দিতে হবে বলে ৬০ জন পুকুরের জমির মালিক সাক্ষর দিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দূর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। ওই লিখিত অভিযোগের অনুলিপি রাজশাহী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, দূর্গাপুর সহকারী কমিশনার ভূমি ও দূর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয় যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ অস্বীকার করে রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার ৪ নং দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রেন্টু বলেন, এই পুকুরটি লিজ নেয়া ৬৭ জনের কাছ থেকে। সেসময় ৬৩ জনের সই ছিলো। প্রথমে ২৫ /২৬ জন আমার কাছে আসে সেসময় আমি বলেছিলাম ৭০০০ টাকা বিঘা করে নিতে। পরবর্তীতে মসজিদ কমিটির লোকজন ও কয়েকজন মালিক রাজি না হয়ে দশ হাজার টাকা করে বছরে চুক্তির দাবি করলে ৯০০০ টাকায় আপোষ হয়। তেরো মাসে বিষয়টি হ”েছ বছরে একবার করে বিষ দিতে হয় পুকুরে ফলে একমাস মাছ ছাড়া যায় না। সেই হিসেব করে ১৩ মাসে এক বছর ধরা হয়েছিলো। এখন কিছু পুকুর মালিক এটি মানতে চা”েছন না। বর্তমানে বৈধভাবেই পুকুর আমার দখলে আছে। ডিডেরও টাইম আছে। আমি সব সংস্থাকেই ডকুমেন্ট দিয়েছি। যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বেড়াচ্ছে তাদের কাগজপত্র ভুয়া।

চেক জালিয়াতির মামলা বিষয়ে জানান সেটি রাজশাহীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে চলমান। সেটি তার ভাইয়ের নামে মামলা ও ব্যাংকের বিষয়।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২২ | সময়: ১০:২৭ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine