সর্বশেষ সংবাদ :

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাং

নুরুজ্জামান,বাঘা : কিশোর অপরাধ আজ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় অন্যতম চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী যে কোনো মানুষ যখন কোনো অপরাধে লিপ্ত হয় , তখন সেই অপরাধকে কিশোর অপরাধ বলা হয়। বর্তমান প্রেক্ষা পটে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে ইমো-বিকাশ হ্যাকার, খুন, ধর্ষন, ইপটিজিং ও মাদক-সহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে। আর এদেরকে ব্যবহার করছে কতিপয় রাজনৈতিক নেতা। যা প্রতিয়মান হয়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়।

এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, সারা দেশে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। গত ২ বছরে কিশোরদের হাতে সারাদেশে ৩৪ জন খুন হয়েছে। এসব ঘটনায় প্রায় চার শতাধিক কিশোরকে “আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত ’’ হিসাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন সাধারণ জনগণ। এরফলে চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনি-সহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে।

সম্প্রতি রাজশাহীর বাঘার পদ্মানদী এলাকায় মাত্র বিশ হাজার টাকা এবং একটি 30 হাজার টাকা মুল্যের মোবাইল সিনিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে ধুমপানের আসর বসিয়ে চার বন্ধু মিলে রাজিব নামে অপর এক বন্ধুকে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে তিনজনকে আটক করেছে বাঘা থানা পুলিশ। আটককৃতরা পুলিশের কাছে এমনটি স্বীকারুক্তি দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পুলিশ।

শুধু এখানেই শেষ নয়, রাজশাহীর সীমান্তবর্তী চারঘাট-বাঘা ও লালপুর এলাকায় কিশোর গ্যাং এর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে মাদক বানিজ্য এবং বিকাশ হ্যাকিং এর মত জঘন্যতম অপরাধ। এর মধ্যে বাঘা এবং লালপুর উপজেলা থেকে পুলিশ এবং র্যাব গত এক বছরে প্রায় দুই শতাধিক কিশোরকে “আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত’’ অপরাধে আটিক করেছেন। এরা দীর্ঘদিন যাবৎ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে প্রবাসীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের “ইমো”ব্যবহারকারীদের ইমো হ্যাক এবং পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিচিতজনদের নিকট হতে প্রতারণাপূর্বক মোবাইল ফিন্যান্সিং সার্ভিস (বিকাশ) এর মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে সুশীল সমাজের লোকজন জানান, আধুনিক বিশ্বের অসংগঠিত সমাজ ব্যবস্থায় দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়নের নেতিবাচক ফল হলো কিশোর অপরাধ। পরিবার কাঠামোর দ্রুত পরিবর্তন, শহর ও বস্তির ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ এবং সমাজ জীবনে বিরাজমান নৈরাজ্য ও হতাশা কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির প্রধান কারণ। অপসংস্কৃতির বাঁধ ভাঙা জোয়ারও এজন্য অনেকাংশে দায়ী।

এক পাঠ্য বই-এ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, “তের চৌদ্দ বছরের মতো এমন বালাই আর নেই।” এ বয়সের ছেলে-মেয়েদের সামনে থাকে অদম্য আশা আর জীবন জগৎ সম্পর্কে থাকে অতিকৌতূহল। অনেক সময় প্রতিকূল পরিবেশের কারণে আশাভঙ্গের বেদনায় হতাশার হাত ধরে নৈরাশ্যের অন্ধকারে পতিত হয় তাদের জীবন। এতে কিশোর বয়সীরা ধীরে ধীরে অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ে।এর ফলে জাতির সার্বিক কল্যাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

অপর দিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজকের কিশোর-কিশোরীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই কিশোর অপরাধের প্রবণতা দেশ, জাতি ও সমাজের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়। কিশোর অপরাধের প্রভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হয়। শিশু কিশোর দ্বারা রাস্তাঘাটে প্রকাশ্যে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, পকেটমারের মতো অপরাধ জনগণের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটায়। ছাত্রী অপহরণ, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ ইত্যাদি কারণে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। কিশোর অপরাধের কারণে সমাজে মাদকাসক্তি ও যৌনাচার বেড়ে চলেছে যা সমাজ জীবনে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটাচ্ছে।

তাঁদের মতে, কিশোর অপরাধ মোকাবিলার তাদের ভয়াবহ পরিণতি উপলব্ধি করে আমাদের সকলের উচিত কিশোরদের অন্ধকার থেকে আলোর জগতে ফিরিয়ে আনা। কিশোর অপরাধ সৃষ্টিতে শুধু কিশোররাই দায়ী নয়। এজন্য দায়ী আমাদের পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থা ও রাজনীতি। এ জন্য সরকারী প্রচেষ্টা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।


প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২২ | সময়: ৩:২২ অপরাহ্ণ | সানশাইন