সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর মারা গেছেন

ঢাকা অফিস: রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৮.১২ মিনিটে ভারতের উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী চিরকুমারী লতা মঙ্গেশকর ভারতের মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোভিডে ৯২ বয়সে মারা যান। লতার মৃত্যুতে ভারতে পালিত হবে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক। এসময় দেশটির জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সংগীতশিল্পী লতার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এক টুইট বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘দুঃখ প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। দয়ালু এবং যত্নশীল লতা দিদি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আমাদের দেশে একটি শূন্যতা রেখে গেছেন, যা পূরণ করা সম্ভব নয়। ভবিষ্যত প্রজন্ম তাকে ভারতীয় সংস্কৃতির একজন অকুতোভয় হিসেবে মনে রাখবে। সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করার এক অতুলনীয় ক্ষমতা ছিল ওনার।’ ২৮ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। এর আগে করোনামুক্ত হলেও শারীরিক অবস্থা ছিলো অবনতির দিকে যায়। এরপর তাকে নেয়া হয় ভেন্টিলেটর সাপোর্টে। গত ৮ জানুয়ারি লতা মঙ্গেশকরের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। ১১ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে জানা যায় কোভিডের কোভিডের পাশাপাশি নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। চার সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শিল্পী। সম্প্রতি অবস্থার উন্নতিও হচ্ছিল। কিন্তু শনিবার আচমকা তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। এর আগেও সঙ্কটজনক অবস্থায় একাধিক বার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল লতাকে। কিন্তু অনুরাগীদের আশ্বস্ত করে প্রত্যেকবারই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের ইনদোরের এক সংগীত পরিবারে জন্ম হয় লতা মঙ্গেশকর। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন মারাঠি সংগীত জগতের সুবিখ্যাত ধ্রুপদী গায়ক। বাবার থেকেই প্রথম তালিম নেওয়া। মাত্র ১৩ বছর বয়সে একটি সিনেমার জন্য প্রথমবার গান রেকর্ড করলেও, তা পরবর্তী সময়ে ছবি থেকে বাদ পড়ে। ১৯৪৫ সালে মুম্বইয়ে পাড়ি দেন তিনি। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। সেখানে উস্তাদ আমান আলি খানের কাছে ধ্রুপদী সঙ্গীতের তালিম নেন। পরের বছর একটি হিন্দি ছবির জন্য প্লেব্যাকে গান করেন।এরপর বাঙালি প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় হয় লতা মঙ্গেশকরের। তাঁর ছবি ‘শহিদ’-এ কাজের সুযোগ পেলেও সরু কণ্ঠের জন্য পছন্দ হয় না সংগীতকারের। ১৯৪৮ সালে ‘মজবুর’ সিনেমায় প্রথম বড় ব্রেক পান লতা। নেপথ্যে সংগীত পরিচালক গুলাম হায়দার। পরবর্তী সময়ে লতা মঙ্গেশকর সাক্ষাৎকারে জানান যে গুলাম হায়দার সত্যিই তাঁর গডফাদার। তিনিই তাঁর মেধার উপর পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন। ১৯৫০ থেকে দীর্ঘ কয়েক দশক ‘কোকিলকণ্ঠী’র গান মুগ্ধ করেছে দেশবাসীকে। আয়েগা আনেওয়ালা, প্যার কিয়া তো ডরনা কেয়া, আল্লা তেরো নাম, কঁহি দীপ জ্বলে – ছয় ও সাতের দশকে এসব গান জনপ্রিয়তার যে শিখর ছুঁয়েছিল, তা আজও অম্লান। বহু বিখ্যাত সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন সুরসম্রজ্ঞী। এমনকী বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই নিজের তৈরি গান লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে নতুন করে আবিষ্কার করেছেন। স্বনামধন্য সংগীত পরিচালক এ আর রহমান নয়ের দশকে ‘দিল সে’ ছবিতে তাঁকে দিয়ে গান গাওয়ান। ‘জিয়া জ্বলে’ গানটিতে আজও একক এবং অদ্বিতীয় লতা মঙ্গেশকর। তাঁর সুরে বুঁদ গোটা দেশ। সুরসাধনার পুরস্কারও  পেয়েছেন অনেক। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা ছাড়াও সিনে অ্যাওয়ার্ড অফ লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট থেকে শুরু করে পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে, ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট, ভারত রত্ন-সহ একাধিক সম্মান। বছর কয়েক ধরে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয় লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠ। অসুস্থতার জন্য খুব বেশি কাজ করতে পারতেন না।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২২ | সময়: ৪:৫৫ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ