স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই রাজশাহীতে

স্টাফ রিপোর্টার : করোনা সংক্রমের হার বৃদ্ধি পেলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই বিভাগীয় শঞর রাজশাহীতে। মানুষের জটলা, আড্ডা সবই আছে তবে নূন্যতম স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে সবখানে। বাজার-ঘাট থেকে শুরু করে কোথায় মানুষ ব্যবহার করছেনন না সুরক্ষা সামগ্রী।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে দাঁড়িয়ে ফল কিনছিলেন আরিফুজ্জামান নামের এক চাকরিজীবী। কিন্তু ফলের দরদাম করার সময় তার মুখেও যেমন মাস্ক ছিল না, তেমনি ওই ফল বিক্রেতার মুখেও কোনো মাস্ক ছিল না। তাদের সাফ জবাব আর কত মাস্ক পরবো?। নগরীর একটি ওষুধের দোকানে আসা ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তির মাস্ক দেখা যায় তার থুতনিতেই রয়েছে। নাম জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন ‘আমার নাম শামসুল আলম। বাড়ি দরগাপাড়ায়। মাস্ক মুখে না দিয়ে থুতনিতে ঝোলানো কেন প্রশ্নে তিনি বলেন- মাস্ক পরলে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। কিন্তু এখন থেকে মাস্ক না পড়লে জরিমানা করা হবে। তাই থুঁতনিতে কোনোভাবে মাস্ক ঝুলিয়ে নিয়ে বাইরে বের হয়েছেন। কেউ ধরলে মুখে টেনে নেবেন। এর আগেও মুখে মাস্ক পরেননি। আর তার করোনাও হয়নি বলে জানান।
শুধু আরিফুজ্জমান বা শামসুল আলমই নন, করোনা ঝুকির মধ্যে মৃত্যু ও আক্রান্তের পরও বেশিরভাগ মানুষেরই প্রায় একই কথা। আর মানুষের এমন অভিব্যক্তির মধ্যে দিয়েই ইতিমধ্যে রাজশাহীতেও শুরু হয়েছে প্রশাসনের বিধিনিষেধ প্রতিপালন। কিন্তু রাজশাহীর বেশির ভাগ মানুষকে এখনও মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর পর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার কিংবা সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাসও এখন আর কোথাও নেই।
বাংলাদেশেও ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সামাজিক সংক্রমণ) শুরু হয়েছে। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের প্রথম দিনই দেখা গেছে ঢিলেঢালাভাব! বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা না গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন ইতিমধ্যে হাসপাতালে আবারও চাপ বাড়তে শুরু করেছে। এখনই মানুষ নিজেদের সুরক্ষায় সতর্ক না হলে আগামীতে ফের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। চিকিৎসাসেবা পাওয়া তখন ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের এমন আশঙ্কার কথা জানালেও তৃণমূল পর্যায়ে এর কোনো প্রভাবই পড়ছে না। অথচ এরই মধ্যে রাজশাহীতেও বেড়েছে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত।
ইতিমধ্যে মাঝারি মাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে রাজশাহীসহ সীমান্তবর্তী ছয় জেলা। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- রাজশাহী ও নাটোর জেলা। রাজশাহী বিভাগের এই দুই জেলাকে হলুদ জোনের আওতায় রাখা হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক হাবিবুল আহসান তালুকদার জানান, এখনও রাজশাহী বিভাগে ওমিক্রন শনাক্ত হয়নি। তবে জানুয়ারির শুরু থেকে করোনার শনাক্ত বাড়ছে। পরীক্ষা কম হওয়ার পরও শনাক্তের হারটা বেশি। এরই মধ্যে রাজশাহী ও নাটোর এই দুই জেলাকে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে হলুদ জোনের (মাঝারি ঝুঁকি) আওতায় আনা হয়েছে। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যে কোনো সময় এ সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। আর বছরের শুরুতে সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তার মানে এটা করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ হওয়ারই আশঙ্কা বেশি।
ওমিক্রন খুব মারাত্মক না হলেও এই ধরন দ্রুত ছড়াচ্ছে। তাই ঘরের বাইরে বের হলেই মাস্ক পরার পাশাপাশি সরকারি সব বিধিনিষেধ অবশ্যই মানতে হবে। আর যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে করোনা টিকাও নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন- স্বাস্থ্য পরিচালক।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২২ | সময়: ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ