ভারতের অপেক্ষা বাড়িয়ে সিরিজ দ. আফ্রিকার

স্পোর্টস ডেস্ক: কেপ টাউন টেস্টের চতুর্থ দিনে হলো না কোনো নাটকীয়তা। ভারতের বোলাররা পারলেন না অসাধারণ কিছু করে দেখাতে। চালেঞ্জিং উইকেটে দারুণ এক ইনিংসে দলকে পথ দেখালেন কিগান পিটারসেন। দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে বাকিটা সারলেন রাসি ফন ডার ডাসেন ও টেম্বা বাভুমা। দারুণ জয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৭ উইকেটে। ২১২ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়ে ফেলে চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনে। টানা দুই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ডিন এলগারের দল জিতে নিল ২-১ ব্যবধানে। জয়ের জন্য শুক্রবার ৮ উইকেট হাতে রেখে স্বাগতিকদের দরকার ছিল ১১১ রান। পিটারসেনের উইকেট হারিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তারা।
প্রথম ইনিংসে ১৬৬ বলে ৭২ রানের দারুণ ইনিংসের পর এবার ১১৩ বলে ৮২ রান করেন পিটারসেন। ম্যাচের সেরাও তিনিই। কেপ টাউনে ভারতের বিপক্ষে অপরাজেয় যাত্রা অব্যাহত রাখল দক্ষিণ আফ্রিকা। এখানে দুই দলের ছয় ম্যাচের চারটিতে জিতল স্বাগতিকরা, অন্য দুটি ড্র। সেঞ্চুরিয়নে প্রথম টেস্ট জিতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে অধরা সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা জোরাল করেছিল ভারত। কিন্তু পরের দুই টেস্টেই হেরে অপেক্ষাটা আরও দীর্ঘ হলো তাদের।
আগের দিনের শেষ বলে আউট হয়েছিলেন এলগার। ৪৮ রানে অপরাজিত পিটারসেন দিনের দ্বিতীয় ওভারে ডাবল নিয়ে তৃতীয় টেস্ট ফিফটি পূর্ণ করেন ৬৫ বলে। মোহাম্মদ শামি ও জাসপ্রিত বুমরাহ অবশ্য দিনের শুরুতে বেশ পরীক্ষা নেন পিটারসেন ও ফন ডার ডাসেনের। কয়েকবার বল অল্পের জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি তাদের।
শামির বলে ফন ডার ডাসেনের বিপক্ষে একবার কট বিহাইন্ডের জোরাল আবেদন করেন ভারতের ফিল্ডাররা। আম্পায়ার সাড়া না দেওয়ায় কোহলি নেন রিভিউ। আলট্রা এজ-এ দেখা যায়, বল যখন ব্যাট পেরিয়ে যাচ্ছিল, একই সঙ্গে মাটিতে লেগেছিল ব্যাট। মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ পাননি থার্ড আম্পায়ার।
কোহলি ও ভারতের অন্যান্য ক্রিকেটারদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে। আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাসের সঙ্গে কথা বলেন কোহলি। ফন ডার ডাসেনকেও কিছু একটা বলেন তিনি। আগের দিন আরেকটি ঘটনায় ডিআরএস নিয়ে কোহলিদের বিভিন্ন মন্তব্যে তো শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। একটু পরেই পিটারসেনের উইকেট পেতে পারতেন বুমরাহ। কিন্তু প্রথম স্লিপে সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি চেতেশ্বর পুজারা।
তখন ৫৯ রানে ব্যাট করছিলেন পিটারসেন। পরে তাকে বোল্ড করে থামান শার্দুল ঠাকুর। ১০ চারে গড়া ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ৮২ রানের দারুণ ইনিংসটি। ভারত শিবিরে তখন হয়তো জেগেছিল কিছুটা আশা। তবে তাদের কোনো সুযোগ দেননি ফন ডার ডাসেন ও বাভুমা। অবিচ্ছিন্ন ৫৭ রানের জুটিতে দলকে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দেন দুই জন। অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বাউন্ডারিতে ম্যাচের ইতি টানা বাভুমা ৫৮ বলে ৫ চারে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। ৯৫ বলে ৩ চারে ফন ডার ডাসেন করেন ৪১ রান।
নানা প্রেক্ষাপটে সিরিজটা অনেক দিন মনে রাখবে দক্ষিণ আফ্রিকা। সাম্প্রতিক সময়ে মাঠের বাইরের নানা বিতর্কে জেরবার দলটির ক্রিকেটে মাঠের ভেতরের সময়ও ভালো যাচ্ছিল না। যে মাঠে আগের ২৭ টেস্টে তাদের হার ছিল স্রেফ ২টি, সেই সেঞ্চুরিয়নে সিরিজের প্রথম টেস্টে তারা হেরে বসে ১১৩ রানে। ম্যাচ শেষের কয়েক ঘণ্টা পর তারা খায় আরেকটি বড় ধাক্কা, আচমকা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন কিপার-ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক।
ধাক্কা সামলে জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় টেস্টে তারা ঘুরে দাঁড়ায় প্রবল বিক্রমে। ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে অধিনায়ক এলগারের অসাধারণ ইনিংসে ৭ উইকেটের জয়ে সমতা ফেরায় সিরিজে। কেপ টাউনে প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে থেকেও আরেকটি দারুণ জয়ে সিরিজ জিতে নিল তারা। জয়ের নায়ক পিটারসেনের কথা বলতেই হবে আলাদা করে। এই সিরিজের আগে তার অভিজ্ঞতা ছিল স্রেফ দুই টেস্টের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অভিষেক সিরিজে তিন ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ছিল ১৮।
সেই পিটারসেন ভারতের মানসম্পন্ন পেস আক্রমণের বিপক্ষে ফিফটি করলেন তিনটি। ৪৬ গড়ে ২৭৬ রান করে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনি। ম্যাচ সেরার সঙ্গে সিরিজ সেরার পুরস্কারও উঠেছে ২৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের হাতে। উল্লেখ করতে হয় আরেক জনের নাম। তিন টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়ে অভিষেক সিরিজ রাঙিয়েছেন পেসার মার্কো ইয়ানসেন। পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছেন যিনি, সেই কাগিসো রাবাদার শিকার সিরিজের সর্বোচ্চ ২০ উইকেট।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২২ | সময়: ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ