বাগমারায় নৌকার ভোট করায় অধ্যক্ষ্যের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: রাজশাহীর বাগমারায় গোড়সার বি.এম কলেজের অধ্যক্ষ্যের হাতে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন জালাল উদ্দিন নামের এক প্রভাষক। অপরদিকে গোরসার উচ্চ বিদ্যালয়ের আবু বকর সিদ্দিক নামের কম্পিউটার ল্যাবের এক শিক্ষককেও অকথ্য ভাষা ব্যবহার সহ মারধরের হুমকী দিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় লাঞ্ছিতের শিকার ওই দুই শিক্ষক সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও বাগমারা থানায় অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে, একই স্থানে গোরসার উচ্চ বিদ্যালয়, গোরসার মহাবিদ্যালয় এবং গোরসার বি.এম কলেজ নামের তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেটা নিয়ন্ত্রণ করেন গোরসার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ। আব্দুর রশিদ পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ভোট করেন। ভোটে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নিকট পরাজিত হন।
এদিকে তার প্রতিষ্ঠান সহ তিনি যে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নৌকা প্রার্থীর ভোট করেন। তার প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে তাকে ভোট না দিয়ে কেন অন্য প্রার্থীর হয়ে কাজ করলো।
এমন অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদের নির্দেশনায় তারই প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম লাঞ্ছিত করে কম্পিউটার ল্যাবের আবু বকর সিদ্দিককে স্কুল থেকে বের করে দেন।
তাকে ২ জানুয়ারি থেকে আর বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেননি। এর আগে ২০২১ সালে জানুয়ারি মাসের বেতনটাও আটকিয়ে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ। বেতন চাইলে চাকুরীচ্যুত করার পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকী দেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই অভিযোগে।
অন্যদিকে গোরসার মহাবিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে ইতিহাস বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মতর রয়েছেন জালাল উদ্দিন। গত সোমবার কলেজে গেলে গোরসার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরাজিত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদের শ্যালক গোরসার বি.এম কলেজের অধ্যক্ষ শাহজানান আলী শেখ সম্্রাট অবৈধ ভাবে গোরসার কলেজে প্রবেশ করে অতর্কিত ভাবে হামলা করে জালাল উদ্দিনের উপর।
এ সময় জালাল উদ্দিনকে শাহজাহান আলী শেখ সম্্রাট ও তার ছোট ভাই গোলাম মোস্তফা এলোপাথাড়ী ভাবে মারপিট থাকে। সেই সাথে প্রতিষ্ঠান চলাকালীন সময়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালিও করেন। জালাল উদ্দিন নরদাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য বলে জানাগেছে। নৌকায় ভোট করায় পূর্ব থেকে তারা হুমকী প্রদান করে আসছিলেন।
লাঞ্ছিতের শিকার গোরসার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের একক আধিপত্য চলে। এখানে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস রাখে না। তিনি ইচ্ছা করেই আমার বেতন আটকিয়ে রেখেছেন। বেতন চাইলে চাকুরীচ্যুত করার ভয়ভীতি দেখায়।
ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক তার ইচ্ছামতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। আমি শুনেছি তার এক মাসের বেতন এখনও পরিশোধ করা হয়নি। আমি সভাপতি হলেও আমার কথার কোন মূল্য নেই।
সেই সাথে বোন জামাই গোরসার মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি হওয়ার সুবাধে প্রতিষ্ঠান চলাকালীন সময়ে প্রবেশ করে প্রভাষক জালাল উদ্দিনকে মারপিট করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর শাহজাহান আলী শেখ সম্্রাটের নিকট জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন।
তিনি বলেন প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যার কারণে তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রভাষককে কেন মারপিট করা হয়েছে তার কোন উত্তর তিনি দেননি। এদিকে গোরসার মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ রেজাউল করিমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গোরসার মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদের নিকট মোবাইল ফানে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি জালাল উদ্দিনের সাথে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। তবে কি কারনে সেটা আমার জানা নেই। আমি সে সময় বাহিরে ছিলাম।
এদিকে আব্দুর রশিদ গোরসার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেও তিনি গোরসার মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার শ্যালক গোরসার বি.এম কলেজের অধ্যক্ষ। তিনটি প্রতিষ্ঠান আব্দুর রশিদের নিয়ন্ত্রণে চলছে বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারীরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক সুফিয়ানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানে দুই শিক্ষককে লাঞ্চিতের বিষয়ে দুটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২২ | সময়: ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ