ঈশ্বরদীর রূপপুর-বগুড়া গ্রিড লাইনে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সঞ্চালন শুরু

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি: পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বগুড়া পর্যন্ত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রিড লাইন মঙ্গলবার পরীক্ষামুলকভাবে চালু করা হয়েছে। প্রায় ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই গ্রিডে সফলভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
এজন্য পাবনা, নাটোর ও বগুড়া জেলায় বিশেষ সতর্কতা জারি করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
এতে বলা হয়, মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে নবনির্মিত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লাইনটি সার্বক্ষনিকভাবে চালু থাকবে। এ অবস্থায় নবনির্মিত ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের টাওয়ারে আরোহন, গবাদিপশু বাঁধা, টাওয়ারে রশি বেঁধে কাপড় শুকানো, লাইনের নিচে ও পাশে বাঁশঝাড় ও বড় গাছ রোপণসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সবাইকে ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন থেকে নিরাপদ (উভয় পাশে ২৩ মিটার) দুরুত্বে থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। উচ্চ ভোল্টেজের এই সঞ্চালন লাইন বা টাওয়ারের সংস্পর্শে এসে কেউ বিদ্যুতায়িত হলে পিজিসিবি কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
সুত্র জানায়, পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী, সলিমপুর ও মুলাডুলি ইউনিয়ন। নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর, নগর, মাঝগাঁও ও বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন। গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়ন এবং সিংড়া উপজেলার চামারী, কলম, চৌগ্রাম ও রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়ন। এছাড়া বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার নন্দীগ্রাম ও ভাটগ্রাম ইউনিয়ন এবং কাহালু উপজেলার জামগ্রাম ইউনিয়ন এই নির্দেশনার আওতাভুক্ত ছিল।
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী মোঃ মাসুদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ঈশ্বরদীর রূপপুর থেকে বগুড়া পর্যন্ত ৪০০/২৩০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র পর্যন্ত ৪০০ কেভি সিঙ্গেল সার্কিট সঞ্চালন লাইনে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয়।
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রিড লাইন পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করার পর বড় কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। রূপপুর প্রকল্পের জন্য লাইনটি নির্মাণ করা হলেও পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সঞ্চালন করেছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পিজিসিবি। লাইন হস্তান্তরের আগে পিজিসিবি ও রূপপুর কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করবে। এর আগে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন কার্যকর ভাবে পরিচালনা করার জন্য পাবনা, নাটোর ও বগুড়া জেলায় বিশেষ সর্তকতা জারি করা হয়।
পিজিসিবির প্রকল্প কর্মকর্তা মাসুদুল ইসলাম জানান, গ্রিড লাইন নির্মাণের অবশিষ্ট কাজ শেষ করে চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে তিনটি গ্রিড লাইন হস্তান্তর করা হবে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিট চালু করতে রূপপুর-ঢাকা পর্যন্ত ১৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন চালু করতে হবে। যার মধ্যে ১৪ কিলোমিটার যমুনা নদী পারাপারের কাজ রয়েছে।
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার জন্য রূপপুর-বাঘাবাড়ি পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার লাইন, ১০২ কিলোমিটার রূপপুর-বগুড়া লাইন এবং ১৪৪ কিলোমিটার রূপপুর-গোপালগঞ্জ লাইন প্রয়োজন হবে।
এরমধ্যে রূপপুর-গোপালগঞ্জ লাইন চালু করতে পদ্মা নদীতে দুই কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করতে হবে। এর আগে রূপপুর-বাঘাবাড়ি লাইনের পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয়।
পিজিসিবি সুত্র জানিয়েছে, প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে রূপপুর-বাঘাবাড়ি লাইনের মাধ্যমে তা সঞ্চালন করা হবে। রূপপুর-বগুড়া লাইন এ সময় কার্যকর রাখা হবে, প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাবহার হবে।
রূপপুর প্রকল্পের পরিচালক জাহিদুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, সব প্রস্তুতি শেষ হলে এ বছরের ডিসেম্বরেই প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।


প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৪ | সময়: ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ