মান্দায় ২ কোটি টাকার পণ্য মজুত, ব্যবসায়ী আটক

মান্দা প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দায় আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে মজুতকৃত বিপুল পরিমাণ ভোজ্য তেল, মুড়ি, আটা, গম, ছোলা, বুট, চিনিসহ ২ কোটি ১৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৩৩ টাকা মূল্যের খাদ্যপণ্য জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে দিবাগত রাত ২টা পর্যন্ত উপজেলার পরাণপুর ইউনিয়নের সোনাপুর ও কালিতলা বাজার এলাকার মাসুদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দুইটি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে এসব পণ্য জব্দ করেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু। একই সঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য অবৈধভাবে মজুতের দায়ে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মাসুদ রানাকে (৪৫) আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আটক মাসুদ পরাণপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের মুনসুর আলীর ছেলে।
মজুতবিরোধী এই অভিযানে অন্যদের মধ্যে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায়, মান্দা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাকির মুন্সী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মান্দা সার্কেল) মতিয়ার রহমান, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থ্যার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যায় পরাণপুর ইউনিয়নে বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য মজুতের সন্ধান পায় উপজেলা প্রশাসন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে মজুতবিরোধী অভিযান চালানো হয় সোনাপুর গ্রামের মাসুদ এন্টারপ্রাইজের গোডাউনে। ওই গোডাউন থেকে ১৩ হাজার ১৩৫ লিটার সয়াবিন তেল, ১ লাখ ২৮ হাজার কেজি গম, ৮ হাজার কেজি আটা, ২৭ হাজার ১৭৫ কেজি এ্যাংকর ডাল (ছোলা), ৪ হাজার ৫০ কেজি চিনি, ৪ হাজার ৭০০ কেজি বুট, ৫ হাজার ৯২০ কেজি পামওয়েল এবং ১ হাজার ২০০ কেজি লবণ জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭০ টাকা।
অভিযান শেষ না হতেই ওই মুহূর্তে তার আরও একটি গোডাউনের তথ্য আসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মাসুদ রানার কালিতলা বাজার এলাকার দোকান সংলগ্ন গোডাউনে দ্বিতীয় দফায় রাতভর অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সেখান থেকে আরও ৭ হাজার ৪৭৪ কেজি ময়দা, ৮২৫ কেজি এসিআই ব্র্যান্ডের লবণ, ৩ হাজার ৮৫০ কেজি মোটা লবণ (গো খাদ্য), ৯০০ কেজি বস্তাজাত খোলা লবণ, ৩ হাজার ৬৬৭ লিটার সরিষার তেল, ১ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কেজি গম, ৫ হাজার ৪০৪ লিটার পামওয়েল, ৪ হাজার ৫৩ লিটার সয়াবিন তেল, ১ হাজার ৬০০ কেজি মুড়ি, ২৩ হাজার ৭৫ কেজি এ্যাংকর ডাল (ছোলা), ৯০০ কেজি খৈল (গো খাদ্য), ৮ হাজার ৬৮০ কেজি ভুষি (গো খাদ্য), ৫ হাজার ৮১০ কেজি তুষার ভুষি (গো খাদ্য), ৫ হাজার ৮৫০ কেজি ব্রয়লার ফিড (মুরগির খাদ্য), ১৩ হাজার ৬৪০ কেজি চাকি আটা (গো খাদ্য), ৩৭৫ কেজি ছোলা, ৪ হাজার ৫৭৫ কেজি মসুর ডাল এবং ৮ হাজার ৭০০ কেজি চিনি জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি ৯ লাখ ৫৯ হাজার ৯৬৩ টাকা।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, ব্যবসায়ী মাসুদ রানা দীর্ঘদিন যাবত লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাতভর মজুতবিরোধী অভিযান চালিয়ে তার অবৈধ ২টি গোডাউন থেকে প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৩৩ টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য জব্দ করা হয়েছে। পরে গোডাউনগুলো সিলগালা করা হয়। এ ধরনের অপরাধে আর্থিক জরিমানা যথেষ্ট নয়। তাই মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর ৪ ধারা অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে বাদী হয়ে ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জব্দকৃত খাদ্যপণ্য পরবর্তীতে কী করা হবে সে বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।
মান্দা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক কাজী বলেন, মজুতবিরোধী অভিযানে কোটি টাকা মূল্যের খাদ্যপণ্য জব্দের পর ওই ব্যবসায়ীকে আটক করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অনুমতিক্রমে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। বর্তমানে ব্যবসায়ী মাসুদ রানা পুলিশের নজরদারিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাদী হয়ে মামলা করলে মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
এদিকে মিডিয়া সেলে পাঠানো এক বার্তায় নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা জানান, আসন্ন রমজান মাসকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যপণ্য মজুত করে মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে। মালামালগুলো মাসুদ এন্টারপ্রাইজ নামে ক্রয় করা হলেও ওই নামে তার কোনো ব্যবসায়িক লাইসেন্স সেই। মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করাই তার মূল ব্যবসা। এ ধরনের মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৪ | সময়: ৪:১৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ