নওগাঁর গুমারদহ গ্রামে লাঠিখেলা ও গুটার বিলে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ

স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ: গ্রাম বাংলার নানা উৎসব-পার্বনে একসময় বিনোদনের খোরাক যোগাতো লাঠিখেলা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে খেলাটি হারিয়ে যেতে বসেছে। ঐতিহ্যবাহী এই খেলাকে ধরে রাখতে নওগাঁয় হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা।
শুক্রবার বিকেলে নওগাঁর সদর উপজেলা শৈলগাছী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম গুমারদহে এই লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও গুটার বিলে অনুষ্ঠিত হয় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। এই উৎসবের আয়োজন করেন গুমারদহ মেলা পরিচালক কিমিটি।
এদিকে, লাঠি খেলা ও নৌকাবাইচের আয়োজন ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে ছিল উৎসবের আমেজ। দীর্ঘদিন পর বিলুপ্তপ্রায় লাঠি খেলা দেখে উচ্ছ্বসিত গ্রামবাংলার মানুষেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ও নৌকাবাইচ দেখতে দুপুরের পর থেকেই দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসে নানা বয়সী মানুষ। একটি বাড়ির আঙিনায় স্থানীয় কয়েকজন লাঠিয়াল একত্রিত হন। সেখানে লাঠিয়ালদের গানের তালে তালে ঢাক, ঢোল আর কাঁসার ঘন্টার শব্দে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
খেলায় ঢাকের তালে তালে লাঠিয়ালরা প্রথমে শারীরিক কসরত ও অঙ্গভঙ্গি দেখান। বেশ কিছুক্ষণ চলে এই কসরত। এরপরই শুরু হয় মূল আকর্ষণ। ২ জন লাঠিয়াল শব্দের তালে তালে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন একে অন্যের উপর।
এ সময় প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চলে প্রতিপক্ষকে হারানোর অদম্য চেষ্টা। এমন দৃশ্য দেখে আনন্দে উচ্ছাসিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসী ও দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসা দর্শনার্থীরা।
জিল্লুর রহমান নামে এক দর্শক বলেন, অনেক ছোট থাকতে একবার লাঠি খেলা দেখেছিলা। অনেক দিনপর আজকে দেখলাম খুবই ভালো লাগলো। আজকের বিকেলটা সত্যি অনেক সুন্দর কাটলো।
আরেক দর্শক ইসমাইল হোসেন বলেন, ছোটবেলায় আমরা গ্রামে গ্রামে লাঠিখেলাসহ বিভিন্ন ধরনের খেলা দেখতে পেতাম। কিন্তু এখন সেসব খেলা হারিয়ে গেছে। অনেকদিন পরে আজকে লাঠি খেলা দেখলাম। বেশ ভালো লাগছে।
সুমাইয়া আক্তার নামে ১০ বছরের এক স্কুল শিক্ষার্থী বলে, এই প্রথম লাঠিখেলা দেখলাম। খুব আনন্দ লাগছে। বাবার সঙ্গে এসেছি। লাঠিখেলা দেখে নৌকাবাইচ দেখবো।

লাঠিয়াল আব্দুর রহমান বলেন, আগে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে গিয়ে লাঠি খেলতাম অনেক জমজমাট হতো। লাঠি খেলে আমরাও যেমন আনন্দ পেতাম গ্রামের মানুষও আনন্দ পেতো। কিন্তু আগের মতো এখন আর এই খেলার আয়োজন হয় না। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা বন্ধু, বড় ভাই-ছোট ভাইরা মিলে খেলাটি ধরে রেখে বছরে দুই-একবার খেলে থাকি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করলে আবারও এই খেলা আগুও মতো চালু হবে।
এদিকে প্রতিযোগিতা শেষে সন্ধ্যায় বিজয়ীদের মাঝে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরষ্কার বিতরণ করেন নওগাঁ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক রেজাউল করি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কালের বিবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে বিনোদনের উৎস গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ও নৌকাবাইচ। এসব খেলাধুলাকে আবারও সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে এমন আয়োজন। লাঠিখেলা ও নৌকাবাইচ দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি দর্শকরাও মুগ্ধ হয়েছে। আগামীতে এই ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখা হবে।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৩ | সময়: ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ