বাগাতিপাড়ায় ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ৩ জনের যাবজ্জীবন

বাগাতিপাড়া প্রতিনিধি: নাটোরের বাগাতিপাড়ার একটি হত্যা মামলাসহ পৃথক দুটি ধর্ষণ মামলায় সাইফুল ইসলাম (৫০) ও আব্দুল কুদ্দুস (৩৮) নামে দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে সাইফুলকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং আব্দুল কুদ্দুসকে একলাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আদালত জরিমানার সমুদয় টাকা ভিকটিম ও তাদের পরিবারকে দেওয়া নির্দেশ দেন। সোমবার দুপুরে নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম এই আদেশ দেন।
এসময় দণ্ডপ্রাপ্ত সাইফুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন আর আব্দুল কুদ্দুস আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। কুদ্দুস ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত সাইফুল ইসলাম উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য ওই গ্রামের বাসিন্দা এবং আব্দুল কুদ্দুস একই উপজেলার খাটখৈইর গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে।
নাটোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. আনিসুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ২০০৩ সালের ১৪ অক্টোবর উপজেলার জামনগর গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা এক ভিকটিমকে প্রতিবেশী চাচা ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম গার্মেন্টসে চাকরি দেওয়ার নাম করে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে তারা একটি হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় রাত্রি যাপন করেন। রাত্রি যাপন কালে সাইফুল ইসলাম ভিকটিমকে জোর করে ধর্ষণ করেন। পরে চাকরি খোঁজার নাম করে সেখান থেকে পালিয়ে যান সাইফুল ইসলাম।
ঘটনার পর ভিকটিম বাড়িতে ফিরে এসে ২০ অক্টোবর নিজে বাদী হয়ে বাগাতিপাড়া থানায় সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলার দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে মামলার ২০ বছর পর আদালত সোমবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় সাইফুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এছাড়া একই মামলায় তাকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
অর্থাৎ দুই ধারায় তাকে ৩০ হাজার করে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং জরিমানার টাকা ভিকটিমকে দিতে বলা হয়। সেই সঙ্গে আদালত আরও আদেশ দেন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড শেষ হওয়ার পর ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড শুরু হবে।
অপরদিকে, একটি শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় আব্দুল কুদ্দুস নামে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২০ জুন দুপুরে বাগাতিপাড়া উপজেলার খাটখৈর গ্রামের আট বছরের এক শিশু কন্যাকে বাদাম খাওয়ানোর কথা বলে আখ ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আব্দুল কুদ্দুস নামে ওই বখাটে। ধর্ষণের ঘটনাটি যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য ধর্ষণের পর ওই শিশুটিকে গলা টিপে হত্যা করে আব্দুল কুদ্দুস।
ঘটনায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে বাগাতিপাড়া থানায় একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন।
ওই মামলার দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আদালতের বিচারক অভিযুক্ত আব্দুল কুদ্দুসকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। একই সঙ্গে জরিমানার টাকা ভিকটিমের পরিবারকে প্রদানের আদেশ দেন আদালত।
রোববার, বাগাতিপাড়ায় গৃহবধূকে ধর্ষণের মামলায় বেনজামিন নামে এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা ভুক্তভোগীকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিমের আদালত এই রায় প্রদান করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত বেনজামিন উপজেলার বিহারকোল এলাকার সাবেক কাউন্সিলর আয়েজ উদ্দিনের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৭ আগস্ট দুপুরে ভুক্তভোগী গৃহবধূ গোসল শেষে কাপড় শুকাতে দেওয়ার সময় অভিযুক্ত যুবক তাকে জোরপূর্বক বাড়ির রান্না ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩ | সময়: ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর