সর্বশেষ সংবাদ :

দেশে চালের মজুত পর্যাপ্ত, কারসাজি না হলে বাড়বে না দাম

সানশাইন ডেস্ক: দেশের বাজারে চালের ঠিকঠাক সরবরাহ রয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল মজুতও রয়েছে। সে কারণে চাল রপ্তানিতে ভারত সরকার শুল্প আরোপ করলেও দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে দেশের ধান ও চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট অভ্যন্তরীণ মজুত ধরে রাখা ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে চাল রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত সরকার। যা অব্যাহত থাকবে আগামী ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত। ভারত সরকারের এই নির্দেশনার পর রোববার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মোটা স্বর্ণা কিংবা পায়জম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। মাঝারি মানের চাল (বিআর-২৮, বিআর ২৯ চাল) বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ কিংবা ১৫ দিন আগেও একই দরে চাল বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ঢাকা রাইচ এজেন্সির মালিক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, গত সপ্তাহ কিংবা দুই দিনে নতুন করে চালের দাম বাড়েনি। এখনো আগের দামেই চাল বিক্রি করছি। নাজিরশাইল চাল ৬৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মিনিটেক চাল ৬২ থেকে ৬৬ টাকা এবং বিআর-২৮ নম্বর চাল বিক্রি করছি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। ভারত চালের রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের পরও আমাদের বাজারে দাম বাড়েনি।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী হাজী ইসমাইল অ্যান্ড রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের দেশ ভারতের চাল আমদানি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। আমরা আমাদের জায়গায় স্থির রয়েছি। এখন দেশের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কোনো কারণে সংকট দেখা দিলে সমস্যা হতে পারে। তা না হলে যে আমদানি রয়েছে, তাতে আমাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়, মোটামুটি চলে যাবে। চিনিগুড়া চালের দাম বেড়েছে ১৫ দিন আগে। সরকারের চাল রপ্তানির ঘোষণার পর পোলাওয়ের চালের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, আমরা মিনিকেট ৩২ থেকে ৩৩শ টাকা, বিআর-২৮ নম্বর চাল ২৫শ থেকে ২৬শ টাকা প্রতি বস্তা বিক্রি করছি। আর নাজিরশাইল চাল বিক্রি করছি ৬২ থেকে ৭৮ টাকা কেজিতে। গুটি স্বর্ণা, স্বর্ণা-৫ (পায়জম) চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। সেখান থেকে দুই-এক টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরও বলেন, বাজারে চালের চাহিদা অনুযায়ী মিলাররা আমাদের সরবরাহ করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব দেখছি না। কৃত্রিম কোনো সংকট তৈরি করলে বাজারে চালের সংকট হবে। এছাড়া চালের দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ দেখছি না। এখন চাল যতটুকু মজুত রয়েছে তা ভালোভাবেই চলবে। এছাড়া সামনে অগ্রহায়ণ আসছে তখন ধান পাব। অর্থাৎ ব্যাকআপ রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সংকট না থাকলে ভালো থাকব।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, আমাদের দেশে যে চাল রয়েছে তাতে ভারত থেকে আমদানির প্রয়োজন নেই। ভারত চাল রপ্তানির সঙ্গে আমাদের দেশের চালের দাম বাড়া-কমার সম্পর্ক থাকা কথা নয়। কারণ আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়েছে। কেউ যদি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ভারত থেকে চাল আমদানি করতে চায় তা অন্য কথা। কিন্তু এই মুহূর্তে চাল আমদানির মতো কোনো কারণ দেখছি না। তিনি বলেন, পেঁয়াজের মতোই খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা যদি কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন তবে দাম চালের দাম বাড়তে পারে। তবে ভারত শুল্ক আরোপের কারণের এই মুহূর্তে চালের দাম বাড়েনি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, রপ্তানির উদ্দেশ্যে যেসব সিদ্ধ চাল ইতোমধ্যে শুল্কায়নের জন্য কোনো ভারতীয় বন্দরে রয়েছে এবং রপ্তানির জন্য ২৫ আগস্টের আগে বৈধ ঋণপত্র খোলা হয়েছে, সেসব চাল নতুন আরোপিত শুল্কের আওতার বাইরে থাকবে। সর্বশেষ এ নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সব ধরনের সাদা চাল রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করল ভারত।
উল্লেখ্য, ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া চালের প্রায় ২৫ শতাংশ সাদা চাল। তারও আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল ভারত। বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত। ২০২২-২৩ সালে ৪৫ লাখ ৬০ হাজার টন বাসমতি চাল রপ্তানি করে দেশটি। একই সময়ে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৯০ হাজার টন সাদা চাল রপ্তানি করে দেশটি। গত এক বছরে ভারতীয় চালের আন্তর্জাতিক বিক্রি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল-জুন সময়ে ১৫ লাখ ৫৪ হাজার টন সাদা চাল রপ্তানি করে ভারত। এই রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশটিতে খাদ্যপণ্যের দামও বেড়েছে। গত জুলাই মাসে ভারতে খুচরা মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এটি গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভারতের খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত এক বছরে দেশটিতে চালের দাম ১১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে শেষ পর্যন্ত সাদা চাল রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত।
বিশ্ববাজারে ভারত যে পরিমাণ চাল রপ্তানি করে, তা রপ্তানি বাজারের ৪০ শতাংশের বেশি। ফলে তারা চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় অন্য আমদানিকারক দেশে চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ বাড়তে পারে। বাংলাদেশও ভারত থেকে অবাসমতী সিদ্ধ চাল আমদানি করে। সাম্প্রতিক সময়ে আরও কিছু পণ্য রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। যেমন অভ্যন্তরীণ মজুত ও প্রাপ্যতা বাড়াতে মাত্র এক সপ্তাহ আগে পেঁয়াজের ওপর ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছে দেশটি।


প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৩ | সময়: ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ