শব্দযন্ত্রের উচ্চস্বরে জনজীবন অতিষ্ঠ, বিপাকে পরীক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা: বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী শুরু হয়েছে এইসএসসি পরীক্ষা। এজন্য পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে দুইশত গজের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুদিন আগে করা হয়েছে মাইকিং।
সেই মাইকিং-এ বলা হয়েছে, পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা পুর্ব থেকে পরীক্ষা শেষ হওয়ার একঘণ্টা পরমুহুর্ত পর্যন্ত ২০০ গজের মধ্যে কোন প্রকার আইন শুঙ্খলা অবনতি এবং উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী সকল প্রকার শব্দ যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ। এ মর্মে ১৪৪ ধারা জারি করা হলো।
তবে রাজশাহীর বাঘায় এ আইন মানা হয়নি। এখানে প্রতিদিনই চলছে উচ্চস্বরে নানা রকম প্রচার মাইক। এতে করে একদিকে মানুষের জীবন অতিষ্ট, অন্যদিকে বিপাকে পড়েছে স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ পরীক্ষার্থীরা।
বাঘার স্থানীয় লোকজন জানান, এ উপজেলায় মাইকিং এর ব্যবসা খুব জম-জমাট। পাশ্ববর্তী উপজেলা গুলো থেকে এখানে মাইক ভাড়া করতে আসে। সেই সাথে স্থানীয় বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার প্রচার-প্রসার ঘটাতে যত্রতত্র ভাবে মাইকিং করে থাকে।
বিশেষ করে যারা ক্লিনিক ও ডায়গোনিক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত তাদের নিজেস্ব মাইক রয়েছে। এরা হরেক রকম চিকিৎসার জন্য একেক দিন একেকজন ডাক্তারের নামে পেনড্রাইপ কিংবা কার্ডরিডারের মাধ্যমে রেকড করে প্রচার মাইক ব্যবহার করেন।
বাঘার বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম মামুন বলেন, আমার বাড়ি রাস্তার পাশে হওয়ায় সকালে খুম থেকে উঠেই সুখবর শুনতে পাই। রোগীদের আকৃষ্ট করতে চিকিৎসকদের প্রচার, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মুরগি, মাছ, গরু-মহিস জবাই, ছাগলের হাট, এমনকি মোবাইলের সিম বিক্রির ধামাকা অফার এবং এলিডি লাইট বিক্রির মাইকিং এর উচ্চ আওয়াজ কানে আসে। এটি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও গ্রাম এবং পাড়া মহল্লায় চলে এদের দৌরাত্ম। ভেবে ছিলাম, বৃহস্পতিবার এইসএসসি পরীক্ষা শুরু হলে অন্তত একমাস শান্তিতে কাটাবো। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেটিও কার্যকারী হয়নি। আর হবে কি না তাও বলতে পারবো না।
বাঘা রহমতুল্লা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রশান শিক্ষক বাবুল ইসলাম জানান, এখানে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাস্তার ধারে। বুধবার উপজেলা মাসিক আইন শৃংখলা মিটিং-এ মাইকিং প্রচার বন্ধ রাখার বিষয়টি আলোচনায় উঠেছিলো। আমরা শিক্ষকরা দাবি রেখে ছিলাম, একমাত্র মৃত্যু এবং সরকারি প্রচার-প্রচারাণা ছাড়া নানা বিষয়ে যারা মাইকিং করে তাদের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে হবে। সেটি আসর নামাজ পর থেকে মাগরিব নামাজের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত। কারণ এসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার এইচএসসি পরীক্ষা চলা কালে একাধিকবার মাইকিং এর আওয়াজ কানে এসেছে। এতে করে বেশি বিব্রত হয়েছে পরীক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে রাজশাহী জজ কোর্টের আইনজীবী ফিরোজ আহাম্মেদ রঞ্জু বলেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অনুমোদিত ব্যক্তি বা সংস্থা ছাড়া শব্দযন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। গ্রামাঞ্চল বা নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবেল এবং রাতে ৪০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। জনস্বার্থে উচ্চ শব্দ যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য।
এদিকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, শব্দদূষণের একটি মাত্রা আছে। অদৃশ্য শব্দ দূষণে শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। মাত্রার বেশি শব্দদূষণ হলে দীর্ঘমেয়াদী কানের শ্রবণের সমস্যা, বধিরতা, রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদযন্ত্রের জটিলতা, ঘুমের ব্যাঘাত ও মনোসংযোগ নষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার বলেন, কোথাও উচ্চ শব্দ দূষণের অভিযোগ পেলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার পরীক্ষা চলা কালিন উপজেলার আড়ানী পৌর এলাকার কেন্দ্র পরিদর্শনে ছিলাম। তবে খুই শির্ঘই তিনি মাইক ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি মিটিং করবেন বলে জানান।


প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৩ | সময়: ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ