সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’ উদ্বোধন আজ

সানশাইন ডেস্ক: আজ বৃহস্পতিবার বহুল প্রত্যাশিত ‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। এদিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-১ ইসমাত মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক চিঠির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাস হয়। ৩১ জানুয়ারি আইনটিতে সম্মতি দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে ১৩ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আইন অনুযায়ী, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির প্রবাসী স্কিমে প্রবাসী বাংলাদেশি, প্রগতি স্কিমে বেসরকারি চাকরিজীবী, সুরক্ষা স্কিমে স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি এবং সমতা স্কিমে স্বল্প আয়ের নাগরিকরা অংশ নেবেন। আপাতত সীমিত আকারে পেনশন কর্মসূচি চালু করা হবে।
এ কর্মসূচির আওতায় ১৮ থেকে ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা থাকবে। মাসিক চাঁদা হবে সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। তবে, কর্মসূচি পরিবর্তন এবং চাঁদার পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ থাকছে। পেনশন ব্যবস্থায় নগদ টাকায় কোনো লেনদেন হবে না। সব কর্মকাণ্ড হবে অনলাইনে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করেও চাঁদা দেওয়া যাবে।
সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে এ কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। কর্তৃপক্ষের জন্য একটি স্বতন্ত্র অফিস প্রতিষ্ঠা করা হবে। বর্তমানে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইয়াজদানি খানকে নিজ দায়িত্বের বাইরে পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে অর্থ বিভাগ। বিধি অনুযায়ী এই দায়িত্ব পালন করার কথা সচিব পদমর্যাদার কোনো ব্যক্তির।
চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকেই দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। নানা জটিলতার কারণে জুলাইয়ে তা কার্যকর করা যায়নি। কিছুটা দেরি হলেও সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু হচ্ছে।
পেনশন কর্মসূচি চালুর আগে পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের। এগুলো হচ্ছে—নির্বাচন কমিশন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড। ইতোমধ্যেই এসব এমওইউ‘র খসড়া তৈরি করা হয়েছে। শুধু এমওইউ’র মাধ্যমেই এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যাবে না। দরকার অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই)। এপিআই হচ্ছে এক ধরনের সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে একটির সঙ্গে একাধিক কম্পিউটারের যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।
দেশের সর্বস্তরের জনগণকে টেকসই পেনশন কাঠামোয় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩’ প্রণয়ন করেছে সরকার। আইন অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিক পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। যিনি ধারাবাহিকভাবে ১০ বছর চাঁদা দেবেন, তিনি পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে আজীবন পেনশন দেওয়া হবে। পঞ্চাশোর্ধ্বরা ১০ বছর চাঁদা দেওয়া শেষে যে বয়সে উপনীত হবেন, সেই বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন।
প্রত্যেক চাঁদাদাতার জন্য একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র পেনশন হিসাব থাকবে। কর্মস্থল পরিবর্তন হলেও নতুন হিসাব খোলার প্রয়োজন হবে না। পেনশন কর্তৃপক্ষ সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারণ করবে। মাসিক চাঁদা দিতে দেরি হলে বিলম্ব ফিসহ পেনশন হিসাব চালু রাখা যাবে।
৭৫ বছর বয়সের আগে কোনো পেনশনার মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়কালের পেনশন প্রাপ্য হবেন। ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে কোনো পেনশনার মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ নমিনিকে দেওয়া হবে। কোনো প্রয়োজনে চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে নেওয়া যাবে এবং নির্ধারিত ফিসহ তা পরিশোধ করতে হবে। বিনিয়োগ বিবেচনায় পেনশনের চাঁদা কর রেয়াতযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। মাসিক পেনশনবাবদ পাওয়া অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।
পেনশন বাবদ জমাকৃত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একটি ‘সর্বজনীন পেনশন তহবিল’ গঠন করা হবে। এ তহবিলে চাঁদা জমা, হিসাব সংরক্ষণ, পুঞ্জীভূত অর্থের সুষ্ঠু ও নিরাপদ বিনিয়োগ এবং পেনশন দেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদিত হবে। এক বা একাধিক তফসিলি ব্যাংকে তহবিলের অর্থ রাখা যাবে।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা পরিচালনায় আইন অনুযায়ী, একটি ‘জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং এর প্রধান কার্যালয় হবে ঢাকায়। কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবেন। তারা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। তাদের চাকরির মেয়াদ ও শর্ত বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে। কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন নির্বাহী চেয়ারম্যান। কর্তৃপক্ষসহ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সরকার বহন করবে।
পেনশন কর্তৃপক্ষ স্থাবর বা অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন এবং সম্পত্তি অধিকারে রাখতে ও হস্তান্তর করতে পারবে। সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে নিজ নামে ঋণ নিতে পারবে। কর্তৃপক্ষ নিজ নামে মামলা দায়ের এবং আদালতের মাধ্যমে সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব ক্রোক করতে পারবে। পেনশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুযোগও রাখা হয়েছে আইনে।
অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের একটি পেনশন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, এফবিসিসিআই’র সভাপতি, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি প্রমুখ এর সদস্য হবেন।


প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ