পেঁয়াজের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা

সানশাইন ডেস্ক: দেশি পেঁয়াজের মজুদ কমে যাওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি, ভারতের নাসিক রাজ্যে বন্যা ও রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে দেওয়ার অজুহাতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। গত দুইদিনের ব্যবধানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। দাম বেড়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
দুইদিন আগেও এই দাম ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৮ থেকে ৭৮ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে দেশি পেঁয়াজে ১০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজে ১৫ টাকা বেড়েছে। এতে বিপদে পড়েছে সাধারণ মানুষ। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ এবং ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি কম হওয়ায় দাম বাড়ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে পেঁয়াজের সরবরাহ না বাড়ালে সামনে দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, দেশি পেঁয়াজ মৌসুম প্রায় শেষের দিকে, ফলে দেশি পেঁয়াজের মজুদ কমে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ভারতের নাসিক রাজ্যে বন্যায় পেঁয়াজ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বৃদ্ধি ও রপ্তানিমূল্য বৃদ্ধির কারণে আমদানি খরচ বেশি পড়ছে ফলে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। একই সঙ্গে বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় ঘাটতি রয়েছে।
রোববার পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি মানভেদে ৪৫ থেকে ৫৬ টাকায়। গত দুইদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৮ টাকায়। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭৮ টাকায়। যা দুই দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। যা দুই দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। দুই দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
সূত্রাপুরে বাজার করতে আসা মো. এনামুল শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ৯০ টাকার নিচে বাজারে দেশি পেঁয়াজ নেই। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন আমদানি পেঁয়াজ কম আসচে। ভারতে বন্যা। ফলে পেঁয়াজ আমদানি কমে গেছে। আবার দেশি পেঁয়াজেরও মৌসুম শেষের দিকে। এসব অজুহাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছেন। তবে দেশে এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তারপরও কেন দাম বাড়বে সেটি বুঝি না। নিত্যপণ্যের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে আমরা একদিন না খেয়ে মারা পড়বো।
এ বিষয়ে শ্যামবাজারের মেসার্স রাজিব বাণিজ্য ভান্ডারের সেলেস ম্যানেজার মো. নাজমুল হুদা বলেন, পেঁয়াজের বাজার গত দুইদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী। চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম। এছাড়া ভারতে বন্যা ও পেঁয়াজের বুকিং দর বাড়ার কারণে দাম বাড়ছে। আমাদের দেশে ৯০ শতাংশ এখন ভারতীয় পেঁয়াজ। ভারত থেকে পেঁয়াজের বড় সরবরাহ আসে নাসিক থেকে। শুনেছি সেখানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা হয়েছে। তাই সেখানে পেঁয়াজের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
রাজ বাণিজ্য ভান্ডারের বিপ্লব সাহা বলেন, সরবাহে ঘাটতি রয়েছে। দেশি পেঁয়াজ প্রায় শেষ। ভারতেও স্থানীয় বাজারে দাম বেশি। পাশাপাশি তাদেরও পেঁয়াজের মৌসুম শেষের পথে। বর্তামানে ভারতে ২৭ থেকে ২৯ রূপি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভারত যদি অন্যান্য বছরের মতে এবারও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেয় তাহলে আমো ২০০ টাকা দিয়েও পেঁয়াজ পাবো না। সরবরাহে ঘটতি আমদানিতেও একটা আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য বলা যায় সেপ্টেম্বর থেকে দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আলী ট্রেডাস ম্যানেজার সুজন সাহা বলেন, এ সময়ে প্রতিবছর পেঁয়াজের দাম একটু বেশি থাকে। কারণ আমাদের দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে। একই সঙ্গে ভারতের পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বেড়ে যাওয়ায় আমদানিও কম হচ্ছে। ফলে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে পেঁয়াজের বাজার বাড়বে ছাড়া কমবে না। ভারত বন্ধ করে দিলে পেঁয়াজের দাম বাড়ার আশঙ্কা। ৪ থেকে ৫ মাস চলার মতো পেঁয়াজ মজুদ নেই। কয়েক দিন আগে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। আর ভারতের পেঁয়াজ মানভেদে ৩৭ থেকে ৪২ টাকা ছিল। বর্তমানে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে দেশি ৬৮ থেকে ৭৩ টাকা, আমদানি ৪৫ থেকে ৫৬ টাকা পর্যšন্ত।
সূত্রাপুর বাজারের খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলরাম পোদ্দার বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। তবে দুইদিন ধরে দাম অনোা বেশি। আমরা পাইকারি বাজারে আমাদের কেনাই বেশি পড়ছে। যে কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাবে পড়েছে। মাল কিনতে গেলে বড় ব্যবসায়ীরা বলেন পেঁয়াজের আমদানি কম, দেশি পেঁয়াজ প্রায় শেষ, তাই দাম বাড়তি। এখন আমরা প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতের পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ড. গোলাম রহমান বলেন, আমাদের দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে। তারা এক সময় একেক অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করে থাকেন। এখন ব্যবসায়ীরা বলছেন–ভারতে বন্যা হয়েছে তাই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এখন আমাদের কথা হচ্ছে, বাজারে বর্তমানে যেসব পেঁয়াজ আছে, সেগুলো তো দুই সপ্তাহ আগে আমদানি করা। এখন ভারতের বন্যার অজুহাত দেখিয়ে আবারো ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের পকেট কাটছে। প্রশাসনের উচিত পেঁয়াজের ক্রয় মূল্য ও বিক্রয়মূল্য যাচাই করে অভিযান পরিচালনা করা। না হলে ব্যবসায়ীরা আবারও পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তুলবেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের মোট চাহিদা রয়েছে ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার টন। তবে উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। গড়ে ৩০ শতাংশ নষ্ট হলেও মোট উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৪ লাখ টন। সেই হিসাবে ২ থেকে ৪ লাখ টনের ঘাটতি থাকে। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে। অথচ এর চেয়ে বেশি পরিমাণে আমদানি হয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ ৩৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।


প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৩ | সময়: ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ