‘নিরাপত্তার ভয়ে’ ক্যাম্পাস ছাড়লো রাবির সেই শিক্ষার্থী

রাবি প্রতিনিধি : ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না পাওয়া এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন ছাত্রলীগের দুই নেতার মারধরে কানের পর্দা ফেটে যাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম। শুক্রবার (৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করার পর বাসযোগে রাত সাড়ে ১০টায় নিজ বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাসায় চলে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আসলে ন্যায়বিচার কারো কাছ থেকে আশা করতে পারিনা। এতো জায়গায় অভিযোগ দিলাম, তারপরও ন্যায়বিচার পেলাম না। শেষমেশ হতাশ হয়েই ক্যাম্পাস ছেড়ে আসা লাগলো। আর আমিতো মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমারতো কানের চিকিৎসা করাতে হবে। তাদের (অভিযুক্তদের) আশায় বসে থাকলে তো আমার হচ্ছেনা। তারা আমার কোনো খোঁজখবরই রাখছেনা। আমিতো আর আমার জীবনটাকে শেষ করে করে দিতে পারিনা। কানতো স্পর্শকাতর একটা জিনিস।’
নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। যেহেতু ঘটনাটার এখনো কোনো মীমাংসায়ই হয়নি, সেহেতু কিভাবে কনফিডেন্স নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াবো। তারাতো আমাকে আবারও মারতে পারে। যেদিন মেরেছিল, সেদিনই হুমকি দিয়েছিল যে,‘যদি কাউকে বলিস, তাহলে তোকে আবার মারবো।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে ক্যাম্পাসে ফিরবেন জানিয়ে ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি বর্তমানে পারিবারিকভাবে বাসায় কানের চিকিৎসা করাচ্ছি। আসার পরই ডাক্তার দেখিয়েছি আজও ডাক্তারের কাছে গেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আমাকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে আমি ক্যাম্পাসে ফিরবো। এর আগে আমি ফিরবোনা।’
এদিকে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ ড. হাবিবুর রহমান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেই শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন হলের আবাসিক শিক্ষক ড. আশরাফুল ইসলাম, ড. শাহ্ মো. শাহান শাহরিয়ার এবং ড. শাহ্ মোখ্তার আহমদ। তদন্ত কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে।
নিরাপত্তার ভয়ে ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম বাসায় চলে যাওয়ার প্রসঙ্গে প্রাধ্যক্ষ বলেন, সে চলে গেছে কি আছে, আমাকে কিছুই জানায়নি। সে ন্যায়বিচার না পাওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে চলে গেছে দাবি করলে, আমি বলবো সে সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা কথা বলছে। নিরাপত্তাহীনতা থাকলে তারতো উচিত ছিল প্রাধ্যক্ষকে জানানো। গতকাল ও পরশু আমার সাথে যখন তার কথা হয়েছে, তখন কিন্তু সে বলেনি তার কানে সমস্যা হচ্ছে। তার কানের সমস্যার কারণেই ছয়-সাত মাস আগে তার আবেদনের প্রেক্ষীতে তিনতলার পরিবর্তে নীচতলায় রুমের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আমি তার রুমে আধাঘন্টা ছিলাম, তখনও সে আমাকে বলেনি যে সে নিরাপত্তাহীনতা ভুগছে। সেখানে সাংবাদিকসহ ১০-১৫ জন ছেলে ছিল। সে আমার কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। সে প্রক্টর বরাবর অভিযোগ জানিয়েছে। সেটার একটা অনুলিপি গতকাল আমাকে দিয়েছে। আমি বুধবারে তার সাথে কথা বলেছিলাম। সে বলেছিল, ‘স্যার, মিটমাট হয়ে গেছে’। তারপর রাতে মোবাইল করে খোঁজখবর নিয়ে পরেরদিন (বৃহস্পতিবার) দেখা করতে বলেছিলাম। সে দেখা না করেই প্রক্টরের কাছে চলে গেছে। সে আমাকে কিছু জানাচ্ছে না। তার বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছ থেকে আমি শুনছি। সাংবাদিকদের কাছে সে যেসব কথা বলছে, সেগুলো আমাকে কেনো বললোনা? এর পিছনে আসলে কি উদ্দেশ্য আছে, কারা আছে বা কি আছে আমি জানিনা।
এরআগে, গত মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের অতিথি কক্ষে বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ সায়েম জেমস এবং সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক উপ-সম্পাদক আল-আমিন মারধর করে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম। এঘটনায় বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযো দেন তিনি। নজরুল ইসলাম রাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা ফজলুল হক হলে আবাসিক শিক্ষার্থী এবং হলা শাখা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক। যদিও বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করছেন তিনি।


প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৩ | সময়: ৬:০১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর