রাতে ফাঁসি কার্যকরের পর সকালেই জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যামামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত ১২টার দিকে মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে কারা কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জাহাঙ্গীর আলমের দাফন সম্পন্ন করা হয়। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজশাহী নগরীর খোঁজাপুর ইদগাঁহ মাঠে জানাজা এবং খোঁজাপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়। জাহাঙ্গীর আলমের তার পারিবারিক সুত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দাফনের সময় জাহাঙ্গীর আলমের বড় ভাই সোহরাব হোসেন, ছোট ভাই মিজানুর রহমান মিজানসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় ওই এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মতিহার থানার ওসি রুহুল আমিন জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জাহাঙ্গীরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে রাজশাহী কারাগারে একসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। রাত ৯টার দিকে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি জানানো হয় দুই আসামিকে। ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন- কারাগারের ডিআইজি প্রিজন, সিনিয়র জেল সুপার ও জেলার ছাড়াও জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন এবং রাজশাহী মহানগর পুলিশের প্রতিনিধিরা।
গত ২৪ জুলাই দুই আসামির সাথে শেষ সাক্ষাৎ করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। ওইদিন জাহাঙ্গীরের পরিবারের ৪০ সদস্য তার সঙ্গে দেখা করেন। আর মহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন স্ত্রীসহ তার পরিবারের চার সদস্য।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টার থেকে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন অধ্যাপক তাহের আহমেদ। ২ ফেব্রুয়ারি তাঁর লাশ বাসার পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার হয়। এই হত্যা মামলার তদন্তে উঠে আসে, পদোন্নতি না পাওয়ার ক্ষোভে অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন একই বিভাগের শিক্ষক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এ মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেন। এছাড়া দুজনকে খালাস দেন আদালত।
পরে সাজাপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও আসামি নাজমুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেন। আপিলে সাজা কমে যাবজ্জীবন হওয়া দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ই বহাল রাখেন। অন্যদিকে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির স্বজনরাও দণ্ড কমাতে একের পর এক আইনগত প্রক্রিয়া চালিয়ে যান।
তবে সবখানেই দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। সবশেষ জাহাঙ্গীরের ভাই সোহরাব জাহাঙ্গীরের আটকের বৈধতা নিয়ে একটি রিট করেছিলেন। শুনানি শেষে গত ১৭ জুলাই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই রিট খারিজ করে দেন। পরে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চাওয়া হয়। সেই আবেদন মঙ্গলবার সকালে খারিজ করে দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করেছেন রাষ্ট্রপতি। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করা হয়।


প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৩ | সময়: ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ