সর্বশেষ সংবাদ :

বাঘায় অধরাই থাকলো চার হত্যাকাণ্ড, তদন্তে গতি ধীর

স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা: রাজশাহীর বাঘায় নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর সুলতানপুর এলাকার একটি পেয়ারা বাগান থেকে সেন্টু আলী নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছিলো বাঘা থানা পুলিশ। গত ১৪ মে ২০২২ সকালে লাশটি উদ্ধার করা হয়। প্রায় একবছর অতিবাহিত হলেও আলোচিত এই হত্যা মামলার কোনো কিনারা মেলেনি। একই ভাবে গত সাড়ে চার বছরে কিনারা হয়নি এ রকম আরো পৃথক তিনটি হত্যা মামলার, যার তদন্তভার নিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত ও গোয়েন্দা বিভাগের সিআইডি এবং পিবিআই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের মৃত আজের উদ্দিন চৌকিদারের ছেলে সেন্টু আলী (৫০) বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হন। তারপর থেকে তিনি আর বাড়ি ফিরে আসেননি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সবশেষ নিখোঁজের তিনদিন পর শনিবার সকাল ৮ টার দিকে সুলতানপুর এলাকার একটি ব্রীজের পাশে আবদুল খালেকের পেয়ারা বাগানে তার লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। এরপর বাঘা থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা ঐ লাশ উদ্ধার করেন। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে মামলাটি রাজশাহী জেলা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু অদ্যাবধি এর মামলার কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি তারা।
এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রাজশাহীর বাঘায় নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন পর শিশু ঈশা খাতুনের (৬) গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আড়ানী রেল স্টেশন এলাকার একটি গম খেত থেকে এই লাশ উদ্ধার করা হয়। শিশু ঈশা খাতুন উপজেলার আড়ানী পৌরসভার রেলস্টেশন সংলগ্ন নুরনগর গ্রামের ইউসুফ আলীর মেয়ে।
এ মামলাটি বর্তমানে রাজশাহী সিআইডি পুলিশের কাছে তদন্তাধীন রয়েছে। প্রথমিক ভাবে বাঘা থানা পুলিশ ধারনা করেছিলো, একটি স্বর্ণের চেইন সিনিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে কতিপয় নেশাখর তাকে ধর্ষণের পর এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও আজঅবধি এর কোন কিনারা হয়নি। এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভুগী পরিবার সহ স্থানীয় ব্যক্তিরা।
অপরদিকে গত ২৬ জানুয়ারি ২০২০ সালে রাজশাহীর বাঘার পদ্মার চরে শনিবার সকালে জাকির হোসেন (২১) নামে এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ঐদিন রাতে জাকির হোসেনের বাবা আবদুল খালেক মোল্লা বাদি হয়ে বাঘা থানায় একটি হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
মামলাটি বর্তমানে দেখভাল করছে রাজশাহী গোয়েন্দা পুলিশ সিআইডি। তবে অদ্যাবধি এ মামলার কোন রহস্য তারা উদঘাটন করতে পারেনি। এনিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে ?
এরপূর্বে ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর বাঘায় খাল থেকে আগুনে দগ্ধ এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হতভাগ্য ওই যুবকের নাম আরিফ হোসেন। তার পিতার নাম মহির উদ্দীন। বৃহপতিবার সন্ধ্যায় নিজ গ্রাম উপজেলার রুস্তমপুর এরাকার পূর্ব ভারতিপাড়া এলাকা থেকে এই লাশ লাশ উদ্ধার করা হয়।
মরহুমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি থেকে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন আরিফ (১৯)। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। পরিবারের লোকজন ধারনা করছিল আরিফ হয়তো তার কোন বন্ধু কিংবা মামার বাড়ি যেতে পারে।
কিন্তু শেষপর্যন্ত তাকে কোন আত্মীয় বাড়িতেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে বাড়ির পাশে দুটি আম বাগানের মাঝখানের একটি খালে দগ্ধ ও উলঙ্গ অবস্থায়। এ মামলাটি তদন্তে রয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ পিবিআই। তবে গত সাড়ে চার বছরেও এর কোন রহস্য উদঘাটন হয়নি।
অনেকেই ধারণা করছেন, এসব মামলার আর কোন রহস্য উদঘাটন হবে না। তবে মামলার তদন্তে ধীরগতির কারণে সমাজের অভিজ্ঞ মহলের লোকজন পুলিশের উপর ব্যাপক ক্ষোভ ও দুখ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সিআইডি উপ-পরিদর্শক নুর ইসলাম ও পিবিআইবির (উপ-পরিদর্শক) মনিরুজ্জামান বলেন, এই মামলাগুলো প্রথমে থানা তদন্ত করেছে। তারা ৭-৮ মাসে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে ব্যার্থ হওয়ায় মহামান্য আলালত আমাদের অপর দায়িত্ব অর্পন করেন। আমরা সঠিকভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছি। হয়তো আরো কিছুদিন সময় লাগবে।


প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৩ | সময়: ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ