তামিমের অবসর : সমালোচনার তীর পাপনের দিকেও

স্পোর্টস ডেস্ক: তামিম ইকবালের হঠাৎ জাতীয় দল থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় গোটা জাতি হতাশ। হতাশার চাদরে ঢাকা গোটা দেশ। দেশের বিশিষ্ট কোচ, ক্রিকেটবোদ্ধা, বিশেষজ্ঞ, বিশ্লেষক নাজমুল আবেদিন ফাহিমও যারপরণাই মর্মাহত। বিমর্ষ।
বৃহস্পতিবার পড়ন্ত বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন নাজমুল আবেদিন ফাহিম। কথা বলতে বলতে অবসরের পেছনে কারণ কী হতে পারে, তারও একটা ধারণা দিয়েছেন তিনি।
ফাহিম বলেন, ‘ঘটনাটি একদম অপ্রত্যাশিত। তামিম ওয়ানডে অধিনায়ক। তিন মাস পর ওয়ানডে বিশ্বকাপ। আর এখন দেশের মাটিতে আফগানদের বিপক্ষে একটা ওয়ানডে সিরিজ সবে শুরু হয়েছে। তার মধ্যে সব ফরম্যাট থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। খুব অপ্রত্যশিত ঘটনা।’
তামিমের এই আকস্মিক অবসরের পেছনে কারণ কী বলে মনে করছেন? জানতে চাইলে দেশবরেণ্য ক্রিকেট বোদ্ধা ও তামিম-মুশফিক-সাকিবদের গুরু বলে ওঠেন, ‘আমি তো প্রকৃত কারণ জানি না। তবে প্রচারমাধ্যম থেকে যেটা জেনেছি, শতভাগ ফিট না থেকেও প্রথম ম্যাচ খেলার ইচ্ছে ও খেলাটাই হয়তো কাল হয়েছে তামিমের। সেটাকেই সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।’
ফাহিম মনে করেন, তামিমের অবসরের ঘোষণার পেছনে একটা বড় দায় আছে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। পাশাপাশি তিনি বিসিবি সভাপতির ভূমিকারও সমালোচনা করেন। বিষয়টি মিডিয়ায় আসা উচিত ছিল না বলেও মন্তব্য করেছেন ফাহিম।
তার কথা, ‘এটা কোনোভাবেই মিডিয়ায় প্রকাশ্যে আসা উচিত হয়নি। একজন ক্যাপ্টেন পুরোপুরি ম্যাচ ফিটনেস না থাকার পরও খেলতে চাচ্ছে, তাকে বুঝিয়েসুঝিয়ে না খেলার পরামর্শ দেওয়া এবং খেলা থেকে বিরত রাখাই হচ্ছে কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্টের প্রধান কাজ। বিসিবি সভাপতির কাছে বিচার দেওয়া বা অভিযোগ করা নয়। আবার বিসিবি প্রধানেরও তা মিডিয়ায় আনা ঠিক হয়নি।’
‘এতে করে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় বাইরে চলে এসেছে। তামিম অনেক ছোট হয়েছে। বিষয়টা জনসন্মুখে না এনে নিজেরা বসে ঠিক করা যেতো। সেটাই হতো যুক্তিযুক্ত।’
ধরা যাক, হেড কোচ হাথুরু আর বিসিবি সভাপতি পেশাদারত্বের জায়গা থেকে করণীয় কাজ করতে পারেননি। কিন্তু একটা ওয়ানডে সিরিজ সবে শুরু হয়েছে, তিনি অধিনায়ক, যত মান-অভিমান আর দুঃখই থাকুক, এসময় তামিমের কি অবসরের ঘোষণা দেওয়া ঠিক হয়েছে?
ফাহিম বললেন, ‘আমরা সবাই জানি তামিমের জীবনে ক্রিকেটই শেষ কথা। ওর জীবনে ক্রিকেট ছাড়া আসলে কিছুই নেই। ক্রিকেটই তার ধ্যানজ্ঞান। সে জানে আর মাত্র কয়েক মাস পর ওয়ানডে বিশ্বকাপ আর সে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। এমন এক সময়ে শুধু ওয়ানডে ফরম্যাট নয়, পুরো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই সরে যাওয়া মোটেই স্বাভাবিক ঘটনা না।’
‘বুঝতে হবে, অনুভব করতে হবে তামিমের জন্য পুরো ব্যাপারটা মোটেই ভালো ছিল না। এবং এমন একটা প্রতিকূলতা তামিমকে গ্রাস করেছে যে , তার আসলে অবসরের ঘোষণা দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।’
ফাহিম মানছেন, শতভাগ ম্যাচ ফিটনেস না থাকার পরও তামিমের খেলার সিদ্ধান্তটাও সঠিক ছিল না। তবে সেটা অন্যভাবে উপস্থাপিত হতে পারতো।
তিনি বলেন, ‘দলের ভেতরকার কথা নিজেরা বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিসিবি সভাপতির কাছে অভিযোগ আকারে ফোন করা বিরাট অসম্মানের ব্যাপার (তামিমের জন্য)। এটা রীতিমত অপমানজনক। আমি কিছুতেই মানতে পারছিনা যে এ বিষয়টা বাইরে যায় কী করে! এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে করে তামিম অনেক ছোট হয়েছেন। কষ্টও পেয়েছেন প্রচুর। মনের দুঃখে জাতীয় দল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
তামিম কি পারতেন না এ সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি সর্বোচ্চ ওয়ানডে ক্যাপ্টেন্সি না করার কথা জানিয়ে দিতে? একদম সব ফরম্যাট থেকে ক্রিকেট ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত কতটা সমর্থনযোগ্য?
ফাহিমের জবাব, ‘আমার মনে হয় পুরো পারিপার্শ্বিকতা তার পক্ষে থাকলে হয়তো তামিম এত বড় সিদ্ধান্ত নিতো না। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তামিম নিজেকে খুব অসহায় ভাবতে শুরু করেছে। এবং বোর্ড সভাপতি পাপন সাহেব আর হেড কোচ হাথুরুসিংহে তামিমকে দলে চান কিনা, আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।’
এ কথা বলা কেন? ফাহিম যোগ করেন, ‘ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা ব্যাখ্যা করি । আমার মনে হয় বিসিবি সভাপতি আর হেড কোচ কারো প্রতিই তামিম আস্থা রাখতে পারেননি। প্রথমত, হেড কোচ হাথুরুসিংহে যদি তামিমকে পছন্দ করতেন এবং তার প্রতি যদি তার ধারণা ভালো থাকতো, তাহলে বোর্ড প্রধানকে এভাবে অভিযোগ দিতেন না। নিজেই সমাধান করতেন।’
‘আর বোর্ড সভাপতিও যদি তামিমকে পছন্দ করতেন তাহলে তিনিও ব্যাপারটা নিজের ভেতরেই রাখতেন, মিডিয়ায় প্রকাশ করতেন না। এতেই পরিষ্কার, তারা দুজনই তামিমের ওপর আগে থেকেই অসন্তুষ্ট। ভাবতে খুব কষ্ট হয়, তামিমের মতো এত বড় মাপের একজন ক্রিকেটার খুব অসহায় একজন মানুষ হয়ে কান্না বিজরিত কণ্ঠে দুঃখ নিয়ে বিদায় নিলো।’


প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ