মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: তীব্র গরমে ঘণ্টায় ঘণ্টা বিদ্যুতের যাওয়া আসার মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে যাচ্ছে। কয়লার অভাবে সোমবার বেলা ১২টার দিকে বন্ধ হয়ে গেছে পটুয়াখালীর পায়রার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটটিও। এর ফলে বিদ্যুতের সরবরাহ আরও কমবে ছয় শতাধিক মেগাওয়াট।
গত ২৫ মে বন্ধ হয় এই কেন্দ্রের আরও একটি ইউনিট। কেন্দ্রের সহকারী ব্যবস্থাপক শাহমনি জিকো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়লা না আসা পর্যন্ত কেন্দ্র চালু করা যাবে না।” প্রতিদিন এ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হত। কেন্দ্রটি পুরোদমে চালাতে প্রতিদিন কয়লার ১২ হাজার টন প্রয়োজন।
গত কয়েক মাসে তীব্র লোডশেডিংয়ের সময় দৈনিক এক হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি পরিমাণ উৎপাদন করে দক্ষিণাঞ্চলের লোডশেডিং সংকট নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রেখেছিল পায়রার আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে উৎপাদন ধীরে ধীরে কমছিল। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ সংকটের পরিমাণও দিনে দিনে বাড়ছে। আগে যেসব এলাকায় দিনে এক ঘণ্টা করে দুইবার লোডশেডিং হত, রোববার ও সোমবার দিনের বেলায় তিন দফায় বিদ্যুৎ গেছে, রাতে গেছে আরও কয়েকবার।
বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি-পিজিসিবির তথ্য থেকে দেখা যায়, রোববার দুপুর ১২টায় লোডশেডিং ছিল ২২০০ মেগাওয়াট। সোমবার দুপুর ১২টায় লোডশেডিং বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬০০ মেগাওয়াট। এ নিয়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দুই জন কর্মকর্তা দিয়েছেন দুই ধরনের তথ্য। কবে নাগাদ কেন্দ্রটি চালু হবে জানতে চাইলে কেন্দ্রের সহকারী ব্যবস্থাপক শাহমনি জিকো বলেন, “এ মাসে চালু হবে না। আগামী মাসে কয়লা এলে চালু করা সম্ভব হবে।”
তবে কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল হাসিব সাংবাদিকদের বলেছেন, “কয়লা আনার জন্য এলসি খোলা হয়েছে। আশা করছি এই মাসের শেষের দিকে কয়লাবাহী প্রথম জাহাজ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এসে পৌঁছাবে। তখন আবার পুনরায় চালু হবে পায়রা।”
এক মাস আগেই কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে জানিয়ে বাংলাদেশ-চায়না বিদুৎ কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মে মাসের মধ্যবতী সময় থেকে দৈনিক ১০ মিলিয়ন ডলার করে ১০০ মিলিয়ন ডলার কয়লা সরবরাহকারীকে দিয়ে বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। “সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ফের নতুন এলসি খোলা হয়েছে। ২০-২২ দিনের মধ্যে কয়লা আসবে তখন বিদুৎ কেন্দ্র চালু করা যাবে।”
বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান সিএমসির মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালিত হত। পরে দুই প্রতিষ্ঠানের সমান মালিকানায় বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) নামে আলাদা একটি কোম্পানি গঠিত হয়। কেন্দ্রটিকে ৬ মাস বাকিতে কয়লা দিয়েছে সিএমসি। পরে আরও ৩ মাসের বকেয়াসহ ৯ মাসে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় অন্তত ৩৯ কোটি ডলার। এই বকেয়া ডলার সংকটের কারণে পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যে কারণে চীন থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ডলার সংকট মেটাতে কয়েক দফা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেও সমাধানে আসতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক একশ কোটি ডলার দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অবশ্য দুই সপ্তাহ সময় চেয়ে বলেছেন, এরপর লোডশেডিং কমে আসবে। রোববার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, “সামাল দেওয়ার একটা ব্যবস্থা হয়ে গেছে। সেই সময়টা আমাদের দিতে হবে। এক/ দুই সপ্তাহ হয়ত কিছুটা কষ্ট করতে হবে।”