দীর্ঘ দেড়বছর পর খুললো একটি মসজিদের তালা

মিজানুর রহমান, চারঘাট: আধিপত্য বিস্তার ও ইফতার নিয়ে কটুক্তি করাকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার জোতকার্তিক গ্রামের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ৫ শতাধিক পরিবারের একমাত্র মসজিদ ও ঈদগাহে নামাজ আদায় থেকে শুরু করে সব ধরণের কার্য্যক্রম। এমনকি গত ঈদুল ফিতরের নামাজও আদায় করতে পারেনি ওই ৫ শতাধিক পরিবারের সদস্যরা। মুসল্লীদের নামাজ আদায়, বাচ্চাদের ইসলাম শিক্ষা সবই বন্ধ দেড় বছর ধরে।
গুটিয়েক মানুষের দ্বন্দের কারণে গোটা এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ আদায় বন্ধ এটা মানতে পারছে না কেউ। তাই দ্রুত এর সমাধান করে মসজিদ ও ঈদগাহে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থার জন্য চারঘাট-বাঘার সাংসদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক সময়ের ব্যস্ততম মসজিদের ৩টি দরজায় ঝুলছে তালা। অপরিস্কারের কারনে মসজিদের ধুলাবালিতে পলেস্তার পড়েছে। আজান ও নামাজ হয় না দেড় বছর ধরে। এসি গুলোতে বেধেছে মাখড়সার জাল। এ যেন এক ভুতরে অবস্থা।
পরে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, জোতকার্ত্তিক জামে মসজিদের ইমাম সাহেবকে বাদ দেয়াকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান সভাপতি এএইচএম কামর্জুামান মুকুল গ্রুপের সঙ্গে সাবেক সভাপতি আসাদুল ইসলাম সেলিম গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৮ এপ্রিল বিকেলে ওই গ্রামে দুগ্রুপের ইফতার চলছিল। এসময় মুকুল গ্রুপের লোকজন সেলিম গ্রুপের ইফতার রান্না করাকে কটুক্তি মুলক কথা বললেও বিরোধ বেধে যায়। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ।
সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় সেলিম গ্রুপের খোকন আলী নামে এক ব্যাক্তি। আহত হয় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন। এরপর নিহতর স্ত্রী রুপা বেগম বাদী হয়ে চারঘাট মডেল থানায় বর্তমান সভপতি মুকুলকে প্রধান আসামী করে ৩৪ জনের নামে একটি হত্যা দায়ের করেন।
ওই মামলায় বর্তমানে মুকুলসহ ৪ জন জেল হাজতে বন্দী রয়েছেন। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এ দিকে মামলাটি বিচারাধীন থাকলেও গত দেড় বছর ধরে ওই গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের একমাত্র নামাজ আদায়ের মসজিদটি রয়েছে তালাবদ্ধ। ঈদগাহও রয়েছে বন্ধ।
এ কারণে ওই গ্রামের মানুষ চরম কষ্টে আশে পাশের বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে গিয়ে শুনতে হচ্ছে অনেকের কটু কথা। অনেকেই আবার নামাজ আদায় বন্ধ করে দিয়েছেন। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের নামাজও আদায় করতে পারেনি ওই গ্রামের মানুষ। ফলে আবারও চরম ক্ষোভ দানা বাধছে গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে।
ওই গ্রামের সাধারণ মানুষের দাবি দোষ করবে গুটিয়েক মানুষ। আর সেই দোষের ভাগি হবে সারা গ্রামের মানুষ এটা তো মানা যায় না। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে এর সুষ্ঠ সমাধান করে মসজিদ ও ঈদগাহে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থার জন্য চারঘাট-বাঘার সাংসদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
সরজমিন ওই গ্রামে গেলে সুমন (৪৫) এক ব্যাক্তি জানান, দীর্ঘদিন থেকে মসজিদটি বন্ধ থাকার কারনে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ আশে পাশের গ্রামে েিগ নামাজ আদায় করেন। অনেকেই আবার দুরে মসজিদ হওয়ায় নামাজ পড়াই ছেড়ে দিয়েছেন। গুটি কয়েক মানুষের দ্বন্দ্বের কারণে এ গ্রামের মানুষ আজ ধর্মবিমুখ হয়ে পড়ছে। আর জন্য যে পাপ হচ্ছে। এ পাপের ভাগীদার কে হবে? প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।
ওই মসজিদের সাবেক সভাপতি আফাজ উদ্দিন বলেন, আমরা ধর্মপ্রাণ মানুষ। আমরা চাই যে কোন সমাধানে মসজিদটি খুলে দেয়া হোক। যাতে করে এ গ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। গত ঈদুল ফিতরের নামজ আদায় করতে পারেনি এ গ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসলরা। আবার সামনে ঈদুল আযহা আসছে। তাই ঈদের আগেই সব ধরণের জটিলতা দুর করে যাতে করে এ গ্রামের মানুষ ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করতে পারে সেজন্য চারঘাট-বাঘার অভিভাবক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপির সুদৃষ্টি কামনা করেছেন জোতকার্ত্তিক গ্রামের সর্বস্তরের জনগণ।
নিমপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে মসজিদটি খুলে দেয়া নিয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। দ্রুত এর একটি সমাধান হওয়া জরুরী বলে মনে করেন তিনি।


প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৩ | সময়: ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ