কৃষিকে রপ্তানিমুখী করতে বিনা ধান-২৫ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে

নুরুজ্জামান,বাঘা : বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহা-পরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেছেন, সরকারের আসল উদ্দেশ্য কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ ও রপ্তানিমুখী করা। এ জন্য দেশে কৃষিপণ্যের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানী বাড়াতে হবে।এ দিক থেকে বিনা ধান-২৫ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই ধান আবাদ করলে কৃষক দ্বিগুণ লাভবান হবেন। সম্প্রতি বাঘার একজন কৃষক পরীক্ষা মূলক ভাবে এ ধান চাষ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন।

বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান জানান,বাঘায় প্রথমবারের মতো বিনা ধান-২৫ চাষ করে লাভবান হতে চলেছেন উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের শিক্ষিত যুবক কৃষক মো: এনামুলল হক। এই ধান ইতোমধ্যে সারাদেশে শেখ রাসেল ধান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আমি বুধবার সকালে সরেজমিন এনামুলের জমিতে ধান কাটার সময় উপস্থিত ছিলাম। এটি খুবই ভালো জাত এবং আগামিতে বোরো মৌসুমে অত্র উপজেলায় এর আবাদ উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, বিনা ধান-২৫ দেশের চাহিদা অনুসারে সরু ও চিকন (প্রিমিয়াম কোয়ালিটি) চাল। বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশ্যে আমাদের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ বিনা ধান-২৫ উদ্ভাবন করেছেন । ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর বিনা ধান-২৫ জাতের ছাড় করা হয়। পাকিস্থান ও ভারতে এ ধরনের বাসমতি টাইপের জাত আছে। বিনা ধান-২৫ থেকে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য সরু ও চিকন বাসমতি (প্রিমিয়াম কোয়ালিটি) চাল পাওয়া যাবে। কৃষক এই ধান চাষে আগ্রহ দেখিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এই চাল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। এর ফলে দেশে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির চালের চাহিদা পুরণ হবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তরের সাবেক মহা-পরিচালক কৃষিবীদ হামিদুর রহমান বলেন, বিনা ধান-২৫ প্রিমিয়াম কোয়ালিটি ও উন্নত গুণাগুণ সম্পন্ন উচ্চফলনশীল এবং স্বল্প মেয়াদী (১৩৮-১৪৮ দিন) বোরো ধানের জাত। এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, সরু ও মধ্যম, রং গাঢ় সবুজ। ধান পরিপক্ক হওয়ার পরও ডিগাপাতা গাঢ় সবুজ এবং খাড়া থাকে।এ জাতের গাছ লম্বা কিন্তু শক্ত বলে হেলে পড়ে না । পূর্ণ বয়স্ক গাছের উচ্চতা ১১৬ সে.মি.।প্রতি গাছে ১০-১২টি কুশি থাকে। ছড়ার দৈর্ঘ্য গড়ে ২৭.০ সে.মি. লম্বা। প্রতি শীষে পুষ্ট দানার পরিমাণ ১৫০-১৫৫টি। ১০০০ টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ১৯.৭ গ্রাম। এ ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৫.১ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৬.৬ ভাগ। ভাত সাদা, ঝরঝরে ও সুস্বাদু ফলে বাজারমূল্য বেশি এবং রপ্তানী উপযোগী।

বাঘার কৃষক এনামুল হক বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লা সুলতান আমাকে এ ধান চাষে উৎসাহিত করেন। তিনি আমাকে বীজ সরবরাহ করে পরীক্ষমূলক ভাবে বিনা ধান-২৫ চাষ করতে বলেন। আমি তার উপদেশ মত এ ধান চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়। আমার বিশ্বাস সরকারি সহায়তা পেলে এর উৎপাদন আগামিতে আরো অনেক বেশি হবে।


প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৩ | সময়: ৪:৫৭ অপরাহ্ণ | সানশাইন