১৪ বছরে বদলেছে সিরাজগঞ্জের চিত্র

তানিয়া ইসলাম রুমা, সিরাজগঞ্জ: উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ ছিল একসময় অবহেলিত। এখন এই জেলার গ্রামীণ অবাকাঠামো উন্নয়ন দৃশ্যমান বিষয়। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তাঘাট-ব্রীজ কালর্ভাট, স্কুল কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, সবই শোভা পাচ্ছে। অবহেলিত গ্রামের মোড়ে মোড়ে এখন চায়ের স্টল, অতিসহজে যত্রতত্র মেলে নিত্যপণ্য। এলাকার মানুষ এখন আনন্দচিত্য।
সংশি¬ষ্ট অফিস সুত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, প্রত্যেকটা গ্রামই শহরের সুযোগ সুবিধা পাবে। সেই অঙ্গীকার সামনে রেখে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের মাধ্যমে কাজিপুর, সদর, কামারখন্দ, রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সমান তালে উন্নয়ন কার্যক্রম করছে।
গত ১৪ বছরে বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিবাড়ীতে ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মন্দির নির্মাণ, সদর উপজেলায় ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্বাধীনতা বিজয় সৌধ নির্মাণ এবং ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্বাধীনতা স্কয়ারে মুক্তমঞ্চ, ওয়াশরুম ও গ্রীনরুম নির্মাণ, সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ৯৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাস ভবন নির্মাণ, সয়দাবাদে ৩৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে যাত্রী ছাউনী নির্মাণ, ৪৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে সদর ডাকবাংলো ভবন নির্মাণ, ৩৮ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সদর ডাকবাংলোর গ্যারেজ পার্কিংওয়ে, ড্রেন নির্মাণ, ৫৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সিরাজগঞ্জ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় নির্মাণ।
কাজিপুর উপজেলায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজিপুর ডাকবাংলো নির্মাণ, এছাড়া ৯ কোটি ৪৯ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে উপজেলায় জেলা পরিষদের জমিতে ৫০০ আসন বিশিষ্ট শহীদ এম মনসুর আলী আধুনিক অডিটরিয়াম নির্মাণ। শাহজাদপুরে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বারিয়াপুর সুপার মার্কেট নির্মাণ। তাড়াশ উপজেলায় ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ক্ষিরশীন আটচালা মন্দির নির্মাণ।
উল্লাপাড়া উপজেলায় প্রেসক্লাব ভবন ৩১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ, ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কানসোনা মুক্তিযুদ্দ সংগ্রহশালার ঘর নির্মাণ, উল্লাপাড়া, বেলকুচি উপজেলায় দেলুয়ায় ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেবাশ্রম নির্মাণ, বেলকুচিতে ২১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান নির্মাণ, ৩৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মুকুন্দগাতী যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, বেলকুচিতে তালুকদার মেটুয়ানী শীতলমারী খালের উপর ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আরসিসি কালভার্ট নির্মাণ, বেলকুচি মেঘুল্লা শোলাকুড়ায় ৪৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে কবরস্থানের বাউন্ডারীওয়াল নির্মাণ, বেলকুচি সুবর্ণসাড়া সাহাপুর বাজার হয়ে ডাকহ্যাচারী পর্যন্ত ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাস্তা নির্মাণ, চৌহালী উপজেলাধীন এনায়েতপুর বায়তুল নুর জামে মসজিদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করণ মেঝে টাইলস বাবদ ৫৭ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ।
এছাড়া জেলার ৯টি উপজেলায় ৬৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গৃহহীনদের মাঝে ২২টি গৃহ নির্মাণ, ছাড়াও জেলায় প্রতি বছর এডিপি ও অন্যান্য আয় থেকে মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, কবরস্তান, সেবাশ্রম, আর সিসি রাস্তা, কালভার্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ করে থাকে।
সিরাজগঞ্জ জেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং বর্তমানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ বিশ্বাস জানান, আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন করেছে, তা অতিতের কোন সরকার করতে পারেনি। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ নিয়ে কাজ করছে সিরাজগঞ্জেও।
সিরাজগঞ্জ -১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেন, কাজিপুর উপজেলায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগে আছে। আপনারা দেখবেন, শহর রক্ষা বাঁধ, জেলার রাস্তাঘাট, থানা স্থাপন ও তার আধুনিকায়ন, পাসপোর্ট অফিস, ভূমি অফিস, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও জেলায় সকল স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ঠ হাসপাতল এবং এর প্রকৌশল অফিস ও স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বের কারণে জেলার সকল কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ-২ (সদর ও কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাক্তার হাবিবে মিল্লাত মুন্না বলেন, ১৪ বছরে সিরাজগঞ্জ ও কামারখন্দে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দৃশ্যমান, আরো কাজ চলমান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু রেল সেতু, ইকোনোমিক জোন, বিসিক শিল্পপার্ক, শেখ হাসিনা ট্রমা সেন্টার, শেখ হাসিনা নাসিং কলেজ, সিরাজগঞ্জ ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি, শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও ৫শ শয্যার হাসপাতাল, চীফজুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণসহ জেলায় বিভিন্ন রাস্তা ঘাট, ব্রীজ কালভার্টসহ অসংখ্য স্থাপনা উন্নয়নে কাজ চলমান।
সিরাজগঞ্জ জেলা আ’লীগের সভাপতি হোসেন আলী হাসান জানান, সিরাজগঞ্জের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতাসীন হলে মোহাম্মদ নাসিম প্রথমে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এসময় ঘরেযায় সিরাজগঞ্জবাসীর ভাগ্যের চাকা।
নদীভাঙনের হাত থেকে সিরাজগঞ্জ শহরবাসীকে রক্ষার জন্য নির্মাণ করা হয় আড়াই কিলোমিটার শহর রক্ষা বাঁধ। বাঁধটি নির্মাণে দুইযুগ ধরে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে সিরাজগঞ্জ শহর। তার প্রচেষ্টায় সিরাজগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবন, সোনালী ব্যাংক ভবন, অত্যাধুনিক শহীদ এম মনসুর আলী অডিটোরিয়ামসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। শহরের প্রধান সড়ক এসএস রোড ও মুজিবসড়ক প্রশস্তকরণসহ নির্মিত হয় নতুন নতুন সড়ক, সেতু স্কুল-কলেজ ভবন। আইনশৃংখলা রক্ষার স্বার্থে জেলার এনায়েতপুর ও সলঙ্গায় দুটি থানা প্রতিষ্ঠা করেন নাসিম। ভাঙ্গনকবলিত দুস্থ মানুষের পুনর্বাসনের জন্য সয়দাবাদ ও একডালায় দুটি পুরনর্বাসন কেন্দ্রও নির্মাণ করেন।
লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারি শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য দৃষ্টিনন্দন শেখ রাসেল শিশু পার্ক প্রকল্প হাতে নেন তিনি।


প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৩ | সময়: ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ