সর্বশেষ সংবাদ :

দুর্গাপুরে স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রাখছেন এমপি ডা. মনসুর

স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর: রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী ইস্তেহার অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে বদ্ধপরিকর।
সাংসদ মনসুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ কথা দিয়ে কথা রেখেছে। ইতিহাসের পাতা থেকে দেখতে পাই আওয়ামী লীগ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঠিক করে এবং সেভাবে এগিয়ে যায়। এই দল সেই ১৯৬৪ সালেই সম্মেলনে ঘোষণা করেছিল যে, তারা ক্ষমতায় গেলে এমন একটি অর্থনীতি চালু করবে যেখানে মানুষ, বিশেষ করে গরিব মানুষে খাদ্য-শিক্ষা-বাসস্থান-চিকিৎসাসহ বাঁচার পরিবেশ পাবে। আওয়ামী লীগ সে কথা রেখেছে।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশটির হাল ধরলেন তখন সারাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল বেহাল। তিনি গরিব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করেন। তখন মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চিকিৎসক হওয়ার আগ্রহ থাকলেও পাস করার পর তাদের চাকরির নিশ্চয়তা ছিল না।
বঙ্গবন্ধু চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে সব মেডিক্যাল কলেজে মেধাবীদের ভর্তির ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসকরা তখন সরকারী চাকরিতে ১ম শ্রেণির মর্যাদা পেতেন না। বঙ্গবন্ধু চিকিৎসকদের ১ম শ্রেণির মর্যাদা দিলেন। শাহবাগ হোটেল বন্ধ করে দিয়ে সেটিকে ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন এ্যান্ড রিসার্চ ও হাসপাতালে (পিজি হাসপাতাল) রূপান্তরিত করেন। দেশের একমাত্র কলেরা হাসপাতাল ও আইসিডিডিআরবিকে সাংগঠনিক রূপ দেন। ম্যালেরিয়ার বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল স্থাপন করেন। তখন সারাদেশে হাসপাতাল ছিল মাত্র ৬৭টি।
তিনি সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রতি থানায় একটি করে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবে সারাদেশে ৩৭৫টি থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল নির্মাণ করেন। এসব হাসপাতালের প্রতিটির শয্যাসংখ্যা ছিল ৩১। শুধু চিকিৎসক ও হাসপাতালই নয়, বঙ্গবন্ধু গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধের দিকেও নজর দিয়েছিলেন।
এ জন্য তিনি জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন। যার লক্ষ্য ছিল ক্ষতিকর, অপ্রয়োজনীয় ও বেশি দামী ওষুধ আমদানি বন্ধ এবং ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা। ক্ষতিকর বিধায় তিনি অনেক ওষুধ বাতিল করেছিলেন।
সেইসঙ্গে তিনি ওষুধের উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ওষুধ প্রশাসন পরিদফতর গঠন করেন। বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলো কর্তৃক মামলা করার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি ওষুধের পেটেন্ট আইন না মানার ঘোষণা দেন। ফলে মানুষ কম দামে ওষুধ খেতে পারত, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। এভাবে তিনি পূর্ণাঙ্গ না হলেও ওষুধ নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালা তৈরি করেছিলেন। যাকে বাংলাদেশের প্রথম ছায়া ওষুধনীতি বলা হয়।
সাংসদ ডা. মনসুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এলে স্বাস্থ্য খাত পুনরায় জনবান্ধব হতে থাকে। তিনি স্বাস্থ্যকে গণমুখী ও জনবান্ধব করার জন্য ১৯৯৮ সালে দরিদ্র মানুষের প্রতি লক্ষ্য রেখে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীকে একত্র করার ফলে সেবা পাওয়া আরও সহজ হয়।
তিনি আইপিজিএমআরকে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করেন এবং হাসপাতালকে উন্নততর সেবায় সজ্জিত করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালগুলোকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করেন। ফলে বিশেষত গরিব মানুষ উন্নত সেবা পেতে থাকে। প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য ১টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন শুরু করেন, যা ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দেয়।
বঙ্গবন্ধুকন্যা ২০০৯ সালে পুনরায় সরকারে আসার পর গরিব মানুষের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন কাজ পুনরায় চালু করেন এবং এ পর্যন্ত সারাদেশে মোট ১৩ হাজার ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে যেগুলোতে ৩১ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। কিছু সমস্যা সত্ত্বেও সরকারী হাসপাতালগুলো এখনও গরিব মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার জায়গা।
বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি এসব করেছেন। সেইসঙ্গে তিনি সব সরকারী হাসপাতালে রোগীপ্রতি খাবারের বরাদ্দ দ্বিগুণ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া নতুন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৩৬টি। দেশে এই প্রথম জেলা হাসপাতালগুলোতে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শহরের নিম্ন আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্তদের জন্য নতুন হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া উন্নত বিশ্বের মতো নতুন বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
উপজেলা ও জেলা হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছেন। প্রত্যন্ত গ্রামের হাসপাতাল থেকে ভিডিও কনফারেন্স করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
ডা. মনসুর রহমান আরো বলেন, ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন’ প্রকল্পে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সুবিধা তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে গ্রামের রোগীরাও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত পাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। রোগীরা এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে কম যাচ্ছে এবং জটিল ও দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা দেশেই গ্রহণ করতে শুরু করেছে। আগে যেখানে শুধু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৫ শয্যার একটিমাত্র বার্ন ইউনিট ছিল এখন সেখানে আলাদা ভবনে উন্নত ও সম্প্রসারিত বার্ন ইউনিট করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতিটি সরকারী ও বেসরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা হাসপাতালে বার্ন ইউনিট খোলা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। নার্সদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী তাদের সরকারী ২য় শ্রেণীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
এ রকম আরও বিভিন্ন জনবান্ধব ও গরিব মানুষমুখী কাজের ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত আজ তৃতীয় বিশ্বের রোল মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে।
ডা. এমপি মনসুর বলেন, এই সরকারের আমলে জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সুপারিশে মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন, ক্যান্সার-কিডনি-লিভার সিরোসিস রোগীদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান ইত্যাদি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীও দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রভূত অবদান রাখছে।
সরকারের সাফল্য তুলে ধরে সাংসদ বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করছেন। ডিজিটাল ক্ষেত্রে তিনি নতুন আইডিয়া ও কর্মসূচী দিয়ে সরকারকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে নিচ্ছেন। এক সময় যারা ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতেন তারাও আজ এই সাফল্যকে মেনে নিয়েছেন। সরকারের অসংখ্য কর্মসূচীতে তিনি জড়িত রয়েছেন। মানুষ শুধু শহর নয়, বরং প্রত্যন্ত এলাকাতেও ডিজিটাল সেবা পাচ্ছেন, এটি কম কথা নয়।
প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম সচেতনতায় সারাবিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেনতিনি যখন এসব অবদানের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হন এবং এসব পুরস্কার উৎসর্গ করেন দেশের মানুষ ও ডিজিটাল কর্মীবাহিনীর হাজারও তরুণের উদ্দেশে তখন গর্বে আমাদের মন ভরে ওঠে।
শুক্রবার সকালে রাজশাহীর দুর্গাপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আইক্যাম্প উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন সাংসদ প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ও লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের উদ্যোগে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত আইক্যাম্পে প্রায় দেড় হাজার সাধারণ মানুষ চক্ষুসেবা নিয়েছেন। উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ চক্ষুসেবা পেয়ে সাংসদ ডা. মনসুর রহমানের এমন মহতি উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আইক্যাম্প অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা, জেলা পরিষদের সদস্য আবুল কালাম আজাদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বানেছা বেগম, দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক, দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম, পৌর যুবলীগের সভাপতি বেলাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল খান, সাধারন সম্পাদক আতিকুর রহমান রিপন প্রমুখ।


প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩ | সময়: ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ