লাইনচ্যুত ওয়াগনের তেল খাল ছাড়িয়ে কর্ণফুলীতে

সানশাইন ডেস্ক: চট্টগ্রামে লাইনচ্যুত ওয়াগন থেকে পড়া তেল পাশের মহেশখালে ছড়িয়ে পড়েছে। এই খালটি মিশেছে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে। ফলে সেখানেও তেল ছড়িয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের দুটি দল মহেশখালের বন্ধ থাকা স্লুইস গেটের দুই পাশ থেকেই পানির নমুনা সংগ্রহ করেছে। তারা নদীর পানিতেও খালি চোখে কিছু তেলের উপস্থিতি দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর হালিশহর এলাকার রেলওয়ে গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) এলাকায় একটি ট্রেনের তেলবাহী তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়। সেগুলোতে ডিজেল ছিল। ওই তিনটি ওয়াগনের মধ্যে দুটি থেকে তেল বাইরে ছড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা। তবে কী পরিমাণ তেল ছড়িয়েছে সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত তারা স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
বেলা ১টা পর্যন্ত সিজিপিওয়াই এলাকায় লাইনুচ্যুত ওয়াগন লাইনে তোলার কাজ চলছিল। তখন পর্যন্ত দুটি ওয়াগন তোলা সম্ভব হয়। সে সময় শেষ ওয়াগনটি লাইনে তুলতে রেলের কর্মীরা কাজ করছিলেন। ইয়ার্ড এলাকায় বেশ কয়েকটি রেল লাইন। যে লাইন থেকে ওয়াগনবাহী ট্রেনটি লাইনুচ্যত হয় তার পাশেই ইয়ার্ডের পাকা নালা। লাইনচ্যুত হওয়া ওয়াগনগুলো থেকে তেল সরাসরি ওই নালায় গিয়ে পড়েছে। এই নালাটির ৩০ গজের মধ্যে মহেশখালের শাখা। ওই শাখাটি বেসরকারি ইসহাকের ডিপোর পার্শ্ববর্তী এলাকায় গিয়ে পড়েছে।
খালে দেখা গেল বিভিন্ন বয়সী ২০-৩০ জন লোক ফোম-বালতি-বোতল নিয়ে তেল আহরণ করছেন। বুধবার রাত থেকেই তারা এভাবে তেল সংগ্রহ করছেন। সেই তেল পাশে রাস্তার উপর ড্রামে রাখা হচ্ছে। জ্বালানি তেল বিক্রির খোলা দোকানগুলোতে সেগুলো বিক্রিও করা হচ্ছে। লোকমান হোসেন নামের একজন বললেন, “তেল পড়েছে শুনে আমরা দেখতে আসি রাতে। অনেকে তেল তুলছিল। তাই আমরাও তুলেছি। ৮-১০ লিটার তুলতে পেরেছি।”
লাইনচ্যুত হওয়া ওয়াগনগুলোর প্রতিটিতে ৩০ হাজার লিটার তেল ধরে। রেলওয়ের পূর্ব বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমান বলেন, “তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হলেও তেল পড়েছে দুটি থেকে। তবে সব তেল পড়েনি। আজ সকালে ওয়াগন সরিয়ে নেওয়ার সময় দেখা গেছে, অল্প কিছু তেল পড়েছে। কীভাবে ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়েছে জানতে চাইলে রেল কর্মকর্তা আবিদুর রহমান বলেন, “ঘটনা তদন্তে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তাকে (ডিটিও) প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারাই দেখবেন কী ঘটেছিল।”
সিজিপিওয়াইয়ের মাস্টার আবদুল মালেক বলেন, “বেশি তেল পড়েনি। অল্প কিছু তেল পড়েছে। ইয়ার্ডের ভেতর থাকা খাল (মহেশখালের শাখা) হয়ে সেগুলো মহেশখালে চলে গেছে।” রেলওয়ের ব্যবহারের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ডিজেলের ওই চালান ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। পরিবেশ অধিপ্তরের পরিদর্শক মো. মনির বলেন, “মহেশখাল যেখানে কর্ণফুলী নদীতে মিশেছে, সেখানকার স্লুইস গেটটি গতকাল (বুধবার) থেকে বন্ধ ছিল। আমরা গেটের ভেতরের দিকে খাল থেকে নমুনা নিয়েছি একাধিক।
“খালের পানিতে ভালো পরিমাণে তেলের উপস্থিতি আছে। গেটের ওপর পাশে নদীর পানির নমুনাও নিয়েছি। নমুনা পরীক্ষার পর বলা যাবে তেল নদীতে ছড়িয়েছে কি না। তবে খালি চোখে নদীর পানিতে খুব অল্প পরিমাণ তেল দেখা গেছে।” স্থানীয় ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহরের কাউন্সিলর মো. আবদুল মান্নান বলেন, “খালে অনেক তেল ছড়িয়েছে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় সেগুলো তুলে না নিলে দূষণ ছড়িয়ে পড়বে পানিতে।
“নদীতে তেল যদি নাও গিয়ে থাকে খালের পানিতে তো মিশেছে। জোয়ার ভাটার টানে সেগুলো পরে নদীর পানিতে চলে যেতে পারে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হবে। যেভাবে লোকজন তেল তুলছে তাতে তাদের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হতে পারে।” পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, “ইতোমধ্যে তেল মহেশখালে ছড়িয়েছে। জোয়ার ভাটায় সেখান থেকে কর্ণফুলীতে যাবে। পরে নদী হয়ে সাগরের উপকূল দিয়ে এর বিচরণ থাকবে। “স্লুইস গেট বন্ধ থাকলে প্রতিক্রিয়া কিছুটা কম হবে। তবে পানির উপরিভাগ থেকে সম্পূর্ণভাবে এটিকে শুষে নেওয়া যাবে- এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।”


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ