সর্বশেষ সংবাদ :

১১৮ রানের পুঁজি নিয়েও চট্টগ্রামের জয়

স্পোর্টস ডেস্ক: বাদ পড়া দুই দলের লড়াই ঘিরে আগ্রহ এমনিতেই ছিল কম। মাঠের ক্রিকেটও জমল না তেমন একটা। বাজে ব্যাটিং, আলগা ফিল্ডিং, ক্যাচ মিসের ছড়াছড়ি মিলিয়ে নিম্নমানের প্রদর্শনী মেলে ধরল দুই দলই। চমক থাকল কেবল ম্যাচের ফলে। জিয়াউর রহমানের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ছোট পুঁজি নিয়েও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতে নিল চট্টগ্রাম।
বিপিএলে মঙ্গলবার দিনের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৫ রানে হারাল ঢাকা ডমিনেটর্সকে। ১১৮ রানের পুঁজি নিয়েও এই জয়কে সুস্পষ্ট ব্যবধানের জয়ই বলতে হবে! মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে আরফাত সানির ৪ উইকেট চট্টগ্রামকে আটকে রাখে ১১৮ রানে। এই রান তাড়ায়ও পুরো ২০ ওভার খেলে ঢাকা করতে পারে স্রেফ ১০৩ রান।
ম্যাচের প্রথম ভাগে চট্টগ্রামের যখন একশ হওয়া নিয়েই টানাটানি, জিয়াউর রহমান তখন ৯ নম্বরে নেমে ২০ বলে খেলেন ৩৪ রানের ইনিংস। পরে বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রানে নেন ২ উইকেট। ১২ ম্যাচে ৩ জয় আর ৯ পরাজয় নিয়ে শেষ হলো ঢাকার নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম আসর। চট্টগ্রামের জয়ও ৩টি, তবে একটি ম্যাচ এখনও বাকি আছে তাদের।
স্কোরলাইন যেমন বলছে, ম্যাচের উইকেট ততটা কঠিন ছিল না। বোলিংও আহামরি কিছু হয়নি। কিন্তু দুই দলই যেন নেমেছিল প্রতিযোগিতায়, কে কতটা খারাপ ব্যাটিং ও ফিল্ডিং করতে পারে। বাজে খেলার সেই লড়াইয়ে শেষপর্যন্ত ‘জিতে’ ম্যাচ হারল ঢাকা। টস জিতে চট্টগ্রাম ব্যাটিংয়ে নামে নতুন উদ্বোধনী জুটি নিয়ে। তবে মেহেদি মারুফ ও ইরফান শুক্কুরের সেই জুটিতে আলোর দেখা পায়নি দল। উইকেট বেশ ভালো থাকার পরও প্রথম চার ওভারে তারা তুলতে পারে স্রেফ ১৭ রান।
পঞ্চম ওভারে আক্রমণে এসেই দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন আরাফাত সানি। স্লগ সুইপ করে আরিফুল হকের হাতে ধরা পড়েন ইরফান (৯ বলে ৭)। পরের ওভারে অ্যালেক্স ব্লেইকের দুর্দান্ত ফিল্ডিং আর সরাসরি থ্রোয়ে ফেরেন আরেক ওপেনার মারুফও। ২১ বল ধুঁকে তিনি করতে পারেন কেবল ৮ রান।
ওই ওভারে বিদায় নেন উন্মুক্ত চাঁদও। ভারতের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিপিএল খেলতে আসা এই ব্যাটসম্যান ব্যর্থ অভিযান শেষ করলেন শূন্য রানে আউট হয়ে। আগে তিন ইনিংস খেলে তার রান ছিল ৫, ১৬ ও ১৬। পাওয়ার প্লেতে চট্টগ্রাম করতে পারে স্রেফ ২০ রান, ৬ ওভারে বাউন্ডারি আসে কেবল ১টি!
পাওয়ার প্লে শেষ হতে না হতেই জোড়া ধাক্কা। এবার সানি এক ওভারেই বিদায় করেন আফিফ হোসেন ও শুভাগত হোমকে। চট্টগ্রামের রান তখন ৭ ওভারে ৫ উইকেটে ২৮। পাঁচে নামা উসমান খান ও সাতে নামা কার্টিস ক্যাম্পার সেখান থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন দলকে। লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেনের আলগা কিছু ডেলিভারি পেয়ে তিনটি বাউন্ডারি মারেন উসমান। নিজের দ্বিতীয় ওভারে তিন বলের মধ্যে দুটি বিমার মেরে বোলিং থেকে সরে যেতে বাধ্য হন জুবায়ের।
জুবায়েরের জায়গায় বোলিংয়ে আসা আমির হামজা হোতাক ভাঙেন ৪১ রানের এই জুটি। পেছন দিকে অনেকটা দৌড়ে ডাইভ দিয়ে অসাধারণ ক্যাচে ক্যাম্পারকে (১৬ বলে ১১) ফেরান আরিফুল হক। পরের ওভারে উসমানকে (২৯ বলে ৩০) থামিয়ে সানি পূর্ণ করেন ৪ উইকেট। সপ্তদশ ওভারের প্রথম বলে যখন রান আউট হলেন দারভিস রাসুলি, চট্টগ্রামের তখন একশ নিয়েই টানাটানি। ৮ উইকেট হারিয়ে তাদের রান ৮০। এক পর্যায়ে টানা ৫১ বলে আসেনি কোনো বাউন্ডারি।
শরিফুল ইসলামের বলে জিয়াউর রহমানের বাউন্ডারিতে কাটে সেই খরা। শেষ দুই ওভারে জিয়ার দুটি করে চার ও ছক্কায় শেষ পর্যন্ত ১২০ রানের কাছাকাছি যেতে পারে চট্টগ্রাম। জিয়া অপরাজিত থাকেন ২০ বলে ৩৪ করে। রান তাড়ায় চট্টগ্রামের শুরুটাও হয়নি ভালো। দুই দফায় জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি সৌম্য সরকার। ক্যাম্পারের বলে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হন তিনি ১৬ বলে ২১ রান করে। আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ আল মামুন তো বিদায় নেন আগেই।
প্রমোশন পেয়ে তিন নম্বরে নামা আরিফুল হক যখন আউট হন ১২ বলে ৭ রান করে, ৭ ওভারে ঢাকার রান তখন ৩ উইকেটে ৩৯। নাসির হোসেন ও অ্যালেক্স ব্লেইক সেখান থেকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন দলকে। তবে খুব বেশি তাড়না দেখা যায়নি কারও ব্যাটিংয়ে। ব্লেইক ১৩ রানে সীমানায় ধরা পড়েন নিহাদউজ্জামানের বলে।
নাসির ২১ রানে জীবন পান আফিফ হোসেনকে সহজ ক্যাচ দিয়েও। তবে ঢাকা অধিনায়ক একটু পরই বিদায় নেন কার্টিস ক্যাম্পারের বলে। পয়েন্ট থেকে অনেকটা পেছন দিকে ছুটে সামনে ঝাঁপিয়ে যে ক্যাচ নেন মারুফ, এবারের আসরের তা সেরা ক্যাচগুলির একটি। ২৪ রান করতে নাসির খেলে ৩৩ বল।
তার পরও লক্ষ্যটা খুব কঠিন ছিল না ঢাকার জন্য। শেষ ২৪ বলে প্রয়োজন ছিল ৩১ রান, উইকেট তখনও বাকি ৫টি। কিন্তু বিস্ময়করভাবে পরের পথটুকুতে হোঁচট খেল তারা বারবার। রান গেল আটকে। ক্যাম্পার-মৃত্যুঞ্জয়-জিয়ার বোলিংয়ে উইকেট হারাতে থাকল তারা একের পর এক। ম্যাচও ক্রমে ফসকে গেল হাত থেকে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩ | সময়: ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ