সর্বশেষ সংবাদ :

‘সামর্থ্য নেই, তবে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ পেলে আমিও ফ্রিল্যান্সার হতে পারবো’- আদিবাসী তরুণী শিলারানী

স্টাফ রিপোর্টার

দরিদ্র শিক্ষিত তরুন-তরুনীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ‘কর্মমুখী সমাজ ও বিকশিত জীবন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের সহযোগীতায়, ‘আত্ম ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা’ (আসাউস)’র তত্বাবধানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর দেড় শতাধিক তরুন তরুনীদের ৩মাসব্যাপী কম্পিউটার প্রশিক্ষন শেষে সনদপত্র বিতরন করা হয়েছে।

 

সনদপত্র হাতে পেয়ে সংখ্যালঘু এ সম্প্রদায়ের তরুন তরুনীরা বলছেন, আমাদের পরিবারের সামথ্য নেই টাকা ব্যায় করে প্রশিক্ষন করানোর। তবে, এখানে আমরা বিনামূল্য প্রাথমিক কম্পিউটার প্রশিক্ষন পেয়েছি। আগামীতে আমাদেরকে যদি এমন আরো প্রশিক্ষনের আওতায় নিয়ে আসা যায় তাহলে আমাদের জন্য খুব ভালো হবে। বিনামূল্যে প্রাথমিক কম্পিউটার প্রশিক্ষন শেষে সনদ পাওয়া শিলারানী মারান্ডী (১৮) বলেন, আগে কখনো কম্পিউটার চালাই নি। কম্পিউটার চালাতেও পারতাম না। কিন্তু, এ প্রশিক্ষন শেষে আমার ইচ্ছে, আমিও একদিন ফ্রিল্যানসার হবো। আমাকে যদি এমন আরো প্রশিক্ষন দেয়া যায় তবে আমি খুব ভালো কাজ করতে পারবো। আমার বাবা মায়ের সামর্থ্য কম তাই ই”ছা থাকলেও টাকা ব্যায় করে প্রশিক্ষন নিতে পারি না।

 

 

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বেলা ১২ টায় কাকঁনহাট পৌরসভার অডিটোরিয়ামে সংখ্যালঘু এ সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক তরুন তরুনীদের মাঝে প্রশিক্ষন পরবর্তী সনদপত্র বিতরনকালে এসব কথা বলেন সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীরা। প্রশিক্ষনটির সমাপনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী সদর ২আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা (এমপি)। এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আজকে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম ছিলো। তাও আমি সেই প্রোগ্রামের থেকে এসকল সুবিধাবঞ্চিত তরুন-তরুনী ও সমাজের পিছিয়ে পরা আদিবাসী জনগোষ্ঠির কাছে এসেছি। এর একমাত্র কারণ হলো, আজ আদিবাসী সম্প্রদায় অবহেলিত। তাদের ভাষার পার্থক্যের কারণে তারা ক্রমেই পিছিয়ে পরে। তবে, আমি জানি কম্পিউটারের ভাষা এক। তাই কম্পিউটার প্রশিক্ষন নিয়ে তারা সাবলম্বী হতে পারবে। আমি আমার দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো তাদের জন্য কিছু করার।

 

 

অন্যদিকে কাঁকনহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল মজিদ এসকল সুবিধাবঞ্চিত তরুন তরুনীদের মাঝে এমন আরো প্রকল্প নিয়ে আসার প্রত্যয়ব্যাক্ত করেন। তিনি বলেন, আদিবাসীরাই আমাদের আদি গোষ্টি। তবে, চতুর সমাজ তাদেরকে তাদের (আদিবাসী) ভাষা এবং সংস্কৃতির জন্য আলাদা করে দিয়েছে। আমরা এ শিকল ভাঙ্গতে চাই। নতুন প্রজন্মের এই তরুন তরুনীদের মাঝে টেকনোলজিক্যাল শক্তি ছড়ি দেয়ার চেষ্টা করবো আমরা। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের ৬ মাসের এই প্রশিক্ষন প্রকল্পে ১ম মেয়াদে ৭৫ জন তরুন তরুনীকে এবং ২য় মেয়াদে আরো ৭৫ জনকে ৩ মাসের প্রাথমিক কম্পিউটার প্রশিক্ষন দেয়া হয়। ৫ লক্ষ টাকা বাজেটের এই বিনামূল্য প্রশিক্ষন প্রকল্প কর্মশালার মেয়াদ শেষ হয় সনদপত্র বিতরনের মাধ্যমে।

 

আত্ম ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক ও প্রকল্পটির তত্বাবধায়ক দেবাশীষ প্রামানিক দেবু, সরকারকে দেশব্যাপী এমন আরো প্রকল্প দেয়ার আহ্বান জানান। প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া সহ কম্পিউটারের উপর নতুন নতুন কোর্স সম্বলিত কর্মশালার বিষয়ে মন্ত্রনালয়ে আবেদন দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। সংশ্লিষ্টদের মতে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তরুন-তরুনীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হলে, এসকল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে উঠে আসবে সম্ভাবনাময় মেধাশক্তি।

 


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ | সময়: ১০:২২ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine