জোট-দল মিলিয়ে সমন্বিত লিয়াঁজো কমিটির আভাস জামায়াত প্রসঙ্গ তোলায় বিএনপির ‘ধমক’

সানশাইন ডেস্ক: প্রথমবারের মতো মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষনেতারা। বৈঠকে ১২ দলীয় জোটের শরিক একটি দলের নেতা জামায়াত প্রসঙ্গ তোলায় ব্যাপক ধমকের মুখে পড়েন। এই ঘটনায় বিব্রত ১২ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতারাও।
রবিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির সঙ্গে ১২ দলীয় জোটের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানান। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের অফিস সকাল ১১টা ১০ মিনিটে বৈঠকটি শুরু হয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা চলে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানান, ১২ দলীয় জোটের বৈঠকে প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই জোটের সঙ্গে তার এটি প্রথম বৈঠক। তার বক্তব্য অনেক প্রাণবন্ত ছিল এবং শরিক দলের নেতারা অনেক খোলামেলা আলোচনা করেন। বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি কী হতে পারে, এ সম্পর্কেও মতামত নেওয়া হয়। যদিও জোটের এই বিষয়ক প্রস্তুতি না থাকায় তারা সময় চেয়েছেন।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকটি দলের নেতা প্রশ্নের জবাবে উল্লেখ করেন, বিএনপির মহাসচিবের উপস্থিতিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত বৈঠকটিতে একটি বিব্রতকর ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা ঘটেছে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের পক্ষ থেকে।
নেতারা জানান, বৈঠকের এক পর্যায়ে ইরান প্রশ্ন করেন, ‘জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনে দৃশ্যমান নেই কেন। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ আছে কিনা? তার এই প্রশ্নের পরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। জবাবে ইরানকে উদ্দেশ্য করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আছে কী নেই, সেটা তোমাকে কেন জানাতে হবে। ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করার এখতিয়ার আছে কিনা’ এমন মন্তব্যও করেন তিনি।
জানতে চাইলে ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, বিএনপির সঙ্গে বৈঠক অন্যান্য দিনের মতো ভালো হয়েছে। জামায়াত প্রসঙ্গে বলার মতো কিছু হয়নি। তেমন কিছু হয়নি। আমি বৈঠকে উল্লেখ করেছিলাম—বিএনপি বৃহৎ আন্দোলন করতে চায়। সেক্ষেত্রে আরও অনেক দল আছে, বিশেষত জোটের সাবেক শরিক জামায়াত ছিল। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে কিনা। তখন তারা (বিএনপি) বললো, ‘তাদের মতো তারা যোগাযোগ রাখছে। বিষয়টা উনারা দেখবেন। এই ফোরামে এটা নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছেন না’।
১২ দলীয় জোটের একাধিক নেতার ভাষ্য, প্রাণবন্ত বৈঠকে মোস্তাফিজুর রহমানের ইরানের প্রশ্নে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা বিব্রত হয়েছি। এটা আমাদের আলোচনার মধ্যেও ছিল না, এজেন্ডার মধ্যেও ছিল না। পরে রবিবার বিকালে ১২ দলীয় জোটের ফলোআপ বৈঠকেও ইরানের প্রশ্নের বিষয়টি উঠে আসে। কেউ-কেউ এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে ১২ দলীয় জোটের প্রভাবশালী এক নেতা রবিবার সাড়ে চারটার দিকে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘জামায়াত নিয়ে তেমন কিছু হয়নি। একজন যখন প্রসঙ্গটি উঠিয়েছেন, অহেতুকভাবেই। তখনই নজরুল ইসলাম খান উত্তর দেন। ভালোই উত্তর দিয়েছেন তিনি। মির্জা ফখরুল কোনও কথা বলেননি।’
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে চারটি জোট ও কয়েকটি দল পৃথকভাবে যুক্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে মির্জা ফখরুল আলোচনা করেছেন। দ্বিতীয় জোট হিসেবে ১২ দলীয় জোট করেছে। ক্রমান্বয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যসহ এলডিপি, গণফোরামসহ আরও কিছু দলের সঙ্গে কথা বলবে বিএনপি।
রবিবার ১২ দলীয় জোটের বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে আভাস দেওয়া হয়েছে, ইতোমধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চসহ বাকি তিনটি জোটের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিএনপি লিয়াঁজো কমিটি করলেও সবগুলো জোট ও দল মিলিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত লিয়াঁজো কমিটি বা সমন্বিত লিয়াঁজো কমিটি হতে পারে। তবে, বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলন আরও কী প্রক্রিয়ায় সমন্বয় করে এগুনো যায়, সে বিষয়টিও ছিল। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে পরবর্তী যুগপৎ কর্মসূচি নিয়েও পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিএনপির কাছ থেকে সময় চেয়েছে ১২ দলীয় জোট।
বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘দুই ঘণ্টাব্যাপী বিএনপির সঙ্গে ১২ দলীয় জোটের বৈঠক হয়েছে। ১২ দলীয় জোট গঠনের পর এই প্রথম মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে তরান্বিত করা এবং দেশের মানুষকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্ত হতে কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য কর্মসূচি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।
১২ দলীয় জোটের দুই শরিক দলের নেতা জানান, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেছেন ১২ দলীয় জোটের নেতারা। গুলশানের একটি ব্যবসায়িক অফিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ‘বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও, তিতাস গ্যাস ঘেরাও, ঢাকা শহরে দীর্ঘ মানববন্ধন, রাজপথে গণ অবস্থান, টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া মহাসড়কে অবস্থান’ কর্মসূচি পালন করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির সঙ্গে আলোচনা ও আন্দোলনে সমন্বয় রাখতে লিয়াঁজো কমিটির জন্য ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ৭ জনের নাম দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি রবিবার বিকালে বৈঠকের পর চূড়ান্ত করে জোট। সাতজনের নাম হচ্ছে, মোস্তফা জামাল হায়দার, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সৈয়দ এহসানুল হুদা, শাহাদাত হোসেন সেলিম, মহিউদ্দিন ইকরাম, ক্বারী আবু তাহের।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘আজকের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মসূচি নিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা অবিলম্বে তাদের জানাবো। আমাদের সবদিকের প্রস্তুতি আমরা গুছিয়ে এনেছি।’


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ | সময়: ৭:০২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ