বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপ করতে চায় ইইউ

সানশাইন ডেস্ক: ইউরোপে আশ্রয়ের অধিকার নেই এমন লোকজনকে আরও বেশি সংখ্যায় নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উপায় এবং এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা না করা উৎস দেশগুলোর বিরুদ্ধে ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপ করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই বিষয়ে আলোচনা করতে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রীরা।
অভিবাসন এবং আরও অধিকসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশের নেতাদের বৈঠকের দুই সপ্তাহ আগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যেসব দেশ নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার কাজে সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়, সেসব দেশের জন্য ভিসা সীমিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে তিন বছর আগে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল ২৭ জাতিরাষ্ট্রের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ওই সিদ্ধান্তের পর এ পর্যন্ত কেবল আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে শাস্তি দেওয়া হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন ইরাক, সেনেগাল ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও গাম্বিয়ার মতো একই ধরনের শাস্তির প্রস্তাব করেছে। যদিও ইইউর দুজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘প্রত্যাবাসন নিয়ে ঢাকার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটেছে।’
ইইউর পরিসংখ্যান বিষয়ক উইং ইউরো স্ট্যাটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে অবৈধ আশ্রয়প্রার্থী ফেরতের হার মোটা দাগে ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক কর্মকর্তা বলেছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর এই হারকে সদস্য রাষ্ট্রগুলো অগ্রহণযোগ্য কম বলে মনে করে।
ইউরোপের দেশগুলোর এই জোটের রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয় অভিবাসন। বৃস্পতিবারের বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের তত্ত্বাবধানের কাজ কীভাবে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায় তা নিয়ে তাদের তিক্ত দ্বন্দ্ব পুনরুজ্জীবিত করার চেয়ে বরং প্রত্যাবর্তন (ফেরত পাঠানো) বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রথমেই অনিয়মিত অভিবাসন হ্রাস করার বিষয়ে আলোচনা করবে।
মন্ত্রীদের আলোচনার বিষয়ে একটি নথি তৈরি করেছে ইউরোপীয় কমিশন, যা দেখেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইউরোপীয় কমিশনের ওই নথিতে বলা হয়েছে, অবৈধ আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠাতে কার্যকর এবং সাধারণ একটি ব্যবস্থাপনা দাঁড় করানোই হবে আস্থাযোগ্য অভিবাসন ও আশ্রয় ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় স্তম্ভ।
নেতাদের যৌথ বিবৃতির খসড়ায় বলা হয়েছে, ইইউর সমস্ত প্রাসঙ্গিক নীতিমালা মেনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ নিজ দেশে কার্যকর প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশের অপর্যাপ্ত সহযোগিতা এক্ষেত্রে অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ। তাদের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা, ভ্রমণের নথিও সমস্যা তৈরি করছে।
অতীতে ভিসা বিধি-নিষেধের মাধ্যমে কিছু তৃতীয় দেশকে শাস্তি প্রদানের বিষয়ে অভিবাসন প্রধানদের চাপ থাকলেও ইইউর পররাষ্ট্র ও উন্নয়ন মন্ত্রীরা এর বিরোধিতা করেছেন। অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশের পরস্পরবিরোধী অ্যাজেন্ডার কারণে সেটি ব্যর্থ হয়। যে কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একমাত্র গাম্বিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি কোনো দেশের বিরুদ্ধে ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপ করে, তাহলে সেই দেশের নাগরিকরা ওই ব্লকে প্রবেশের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা পান না, এমনকি ভিসা পাওয়ার জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতেও হতে পারে।
একের পর এক যুদ্ধ, দারিদ্র্য আর নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পালিয়ে বাঁচতে প্রতিবছর মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার লাখ লাখ মানুষ ইউরোপে যাওয়ার প্রধান পথ হিসেবে ব্যবহার করে ভূমধ্যসাগরকে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে কেবল ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে ঢুকেছে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ। এছাড়া যুদ্ধের কারণে প্রায় ৮০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী ইউরোপজুড়ে আশ্রয় নিয়েছে।
অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য সদস্যরা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অনিয়মিত মুসলিম অভিবাসনের বিরুদ্ধে জোরেশোরে প্রতিবাদ করছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী অবস্থান নিয়েছে জার্মানি। দেশটি ব্লকের বাইরের কর্মীদের জন্য তাদের চাকরির বাজার উন্মুক্ত করতে চাইছে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৩ | সময়: ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ