সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহীতে জামায়াতকর্মীর পক্ষ নিয়ে যুবলীগ নেতার বাড়িতে হামলা

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে এক জামায়াত কর্মীর পক্ষ নিয়ে একটি মামলায় পলাতক স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী রঞ্জু শেখ এবং তার ক্যাডাররা যুবলীগ নেতা দুরুল হোদার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর সপুরা বিসিক মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এসময় রাজশাহী মহানগর যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক দুরুল হোদা বাড়িতে ছিলেন না।
দুরুল হোদার অনুপস্থিতিতে তার ছেলে মিনহাজুল ইসলামকে সাত দিনের মধ্যে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেয় রঞ্জু শেখ। অন্যথায় গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং দশ লাখ টাকা চাঁদা দবি করে। এ ঘটনায় দুরুল হোদা এবং তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা চেয়ে মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দুরুল হোদা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় এলাকার বিশু শেখের ছেলে রঞ্জু শেখ এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ। আলিফ লাম ভাটার মোড়, সপুরা, বিসিক ম্যাচ ফ্যাক্টরির মোড়, পাশর্^বর্তী শাহ মখদুম থানার মোড়, ছোট ও বড় বনগ্রাম, মালদা কলোনি এবং পাশর্^বর্তী নওদাপাড়া এলাকায় রঞ্জু এবং তার সহযোগীরা চাঁদাবাজি করে।
বিশেষ করে এসব এলাকায় কেউ বাড়ি নির্মাণের জন্য ইট এবং বালু ফেললেই শুরু হয় রঞ্জু এবং তার ক্যাডার বাহিনীর চাঁদাবাজি। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। নির্মাণাধীন বাড়ি ভাঙচুর করে। মারপিটের ঘটনাও ঘটে। রঞ্জু এবং তার বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পান না। করতে পারেন না প্রতিবাদ।
এদিকে, লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত কর্মী মহানগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা আব্দুল বারীর নির্দেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী রঞ্জু শেখ এবং তার ক্যাডাররা বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুরুল হোদার বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় যুবলীগ নেতা দুরুল হোদার অনুপস্থিতিতে তার ছেলে মিনহাজুল ইসলামকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। এরপর রঞ্জু শেখ সাত দিনের মধ্যে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেয় এবং দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ নির্দেশ অমান্য করলে দুরুল এবং তার ছেলেকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়।
দুরুল হোদা জানান, আব্দুল বারী জামায়াতের কর্মী। তিনি প্রচুর অর্থ ও বিত্তের মালিক। বারী জামায়াতের অর্থ জোগানদাতা। জামায়াত-শিবিরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে বারী অর্থ দেন। আমি এ জমিটি লাকী বেগম নামের একজন নারীর কাছ থেকে কিনেছি। কিন্তু জামায়াত কর্মী আব্দুল বারী জমিটির জাল দলিল তৈরি করেছেন। তিনি জাল দলিলের মাধ্যমে জমিটি দখলের পাঁয়তারা করছেন। ইতোমধ্যে তার জাল দলিলটি আদালতে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং বোয়ালিয়া ভূমি অফিস কার্যালয় তার খারিজ ও খাজনা বাতিল করেছে। এছাড়া আদালত জালিয়াতির কারণে আব্দুল বারীর বিরুদ্ধে মামলা করার আদেশ দিয়েছেন। তারপরেও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বারী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী রঞ্জু শেখ এবং তার ক্যাডারদের দিয়ে জমি ও বাড়ি দখলের চেষ্টা করছেন।
অপরদিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী রঞ্জু শেখ সম্পর্কে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। রঞ্জু শেখের আপন বড় ভাই যুবদল নেতা হিরু শেখ ২০০৩ সালে আলিফ লাম মীম ভাটার মোড়ে সোহেল হত্যা মামলার প্রধান আসামি। যুবদল নেতা সোহেলকে ছুরিকাঘাত করে নৃশংসভাবে খুন করেন হিরু শেখ এবং তার সহযোগীরা। হিরু শেখ প্রায় এক যুগ রাজশাহী কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। সম্প্রতি তিনি কারাগার থেকে বের হয়ে তার ভাই রঞ্জু শেখের সাথে চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়েছেন। আলিফ লাম মীম ভাড়ার মোড় এলাকায় একটি জায়গা দখল করে দুই ভাই নির্মাণ করছেন মার্কেট।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী রঞ্জু শেখও একসময় যুবদল করতেন। তিনি ছিলেন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিবিরের সাবেক সভাপতি শাকিলের প্রধান সহযোগী। দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার শাকিল একসময় ‘শিবির শাকিল’ নামেই পরিচিত ছিলেন। শাকিল পরে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০১৩-১৪ সালে রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান, আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় এবং সাহেববাজার ও বাটার মোড় এলাকায় শাকিলের সাথে পুলিশের ওপর হামলাসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয় রঞ্জু। সে সময়ের রঞ্জু শেখের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ভিডিওসহ নানা তথ্য প্রমাণাদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত আছে।
চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি রঞ্জু এবং তার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল প্রামাণিকের ছেলে ব্যবসায়ী আবুল হাসেমকে ছুরিকাঘাত করে। আহত হাসেম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় সাতদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী বাদী হয়ে মহানগরীর চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার পলাতক আসামি রঞ্জু শেখ। রঞ্জু পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরলেও তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি সূত্র জানায়, রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন শীর্ষ নেতার প্রত্যক্ষ মদদে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে রঞ্জু এবং তার ক্যাডার বাহিনী। একারণে রঞ্জু এবং তার ক্যাডাররা চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে সহজেই ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। রঞ্জু এবং তার বাহিনীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না ভুক্তবোগীরা।
যুবলীগ নেতা দুরুল হোদার বাড়িতে হামলা এবং গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ সম্পর্কে মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল লতিফ শাহ বলেন, রাজশাহীতে খাদ্যমন্ত্রীর প্রোগ্রাম থাকায় ব্যস্ত ছিলাম। একারণে অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজ নিতে পারি নি। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২২ | সময়: ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ