সর্বশেষ সংবাদ :

সরকারের মহতী উদ্যোগ উপেক্ষিত, মাইকিং করে চলছে ভিক্ষাবৃত্তি !

নুরুজ্জামান,বাঘা : ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রাচীন কাল থেকেই মানব সমাজে ভিক্ষাবৃত্তি চলে আসছে। উপমহাদেশেও এর ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলের শোষন, বঞ্চনা ,নদী ভাঙ্গন, দারিদ্র্যতা, রোগ-বালাই, অশিক্ষা-কুশিক্ষা ইত্যাদি কারণে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। তবে বর্তমান সরকার চান এই ভিক্ষাবৃত্তি থেকে মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনেত। এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর নানা কর্মসূচি-সহ ভিক্ষুকদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে “ভিক্ষুক পূনর্বাসন প্রকল্প’’ বাস্তবায়নের লক্ষে উপজেলা পর্যায়ে ২০২০ সালে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এ উদ্যোগ এখন পর্যন্ত কাজে আসেনি।

শনিবার(১৭-ডিসেম্বর)সকাল ৮ টা। বাঘার আমোদপুর গ্রামে একটি ভ্যানে চড়ে প্রচার মাইকিং এর মাধ্যমে রেকডিংকরা কথা প্যানডাইপ এর সাহায়ে প্রচার করে ভিক্ষা করতে দেখাগেছে পার্শ্ববর্তী লালপুর উপজেলার গন্ডবিল গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক ভিক্ষুক আবুবক্কর-কে । তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, এ পেশায় প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গড়ে দশ কেজি চাল এবং এক হাজার টাকা আয় করেন তিনি। এ থেকে ভ্যান চালককে দিতে হয় দু’শত টাকা। বাঁকি সব মিলে তাদের বুড়ো-বুড়ির সংসারটা ভালই চলে। একটি সন্তান থাকলে তার নুন আনতে পান্ত ফুরায়। তাই তিনি ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছেন। এ সময় তিনি এবং তার স্ত্রীকে একটি বৃদ্ধাশ্রমে রাখার কথা বলে হলে,তাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ তালিকায় শুধু আবুবক্কর নয়, এ রকম অসংখ্য ভিক্ষুক এখন পথে প্রান্তরে। অথচ এদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, বয়স্ক ভাতা , বিধবা ভাতা ,মাতৃত্বকালিন ভাতা, ১০ টাকা কেজি চাল, সরকারি ভাবে বরাদ্দকৃত ও.এম.স, টি.সি.বি পন্য , এ ছাড়াও যাদের বাড়ি ঘর নেই, তাদের আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ইটের তৈরী পাকা বাড়ির ব্যবস্থা এবং জটিল রোগে আক্রান্ত অসহায়দের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে ৫০ থেকে লক্ষাধিক টাকা অনুদানের চেক। কিন্তু কোন ভাবেই এ সকল ভিক্ষুকদের পূণঃবাসন করা সম্ভব হচ্ছে না।

বাঘা উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার শাহিন রেজা জানান, বর্তমান সরকার একটানা তিন টার্ম ক্ষমতায় আছেন। এর আগে তাঁরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় ছিলেন। তখন ঢাকায় ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে “ভিক্ষুক পূনর্বাসন প্রকল্প’’ বাস্তবায়নের লক্ষে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারাদেশের ভিক্ষুকদের নিয়ে দু’দিন ব্যাপী কর্মশালার ব্যবস্থা করা হয়।তখন আমি বাঘা উপজেলায় চাকরি করার সুবাদে এ কর্মশালায় উপজেলার ৫০ জন ভিক্ষুককে একত্রিত করে এর কুফল সম্পর্কে জ্ঞানদান করি। তবে অনেক কষ্টে মাত্র ১৪ জনকে তাদের কর্ম সংস্থানের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারি । এরপর আমারা তাদের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তবেই ভিক্ষা থেকে সরিয়ে পূনর্বাসন করতে সক্ষম হয়।

এ বিষয়ে বাঘার সুশীল সমাজের লোকজন বলেন, দেশে দারিদ্র্য নিরসনে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং ভিক্ষাবৃত্তির মত অমর্যাদাকর পেশা থেকে মানুষকে নিবৃত করার লক্ষ্যে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য শুধু সরকার একা নয়, সমাজের স্বচ্ছল সকল মানুকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে এর কুফল সম্পর্কে বোঝাতে হবে।

বাঘা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোহাঃ নাফিজ শরিফ বলেন, ২০১০ সাল হতে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হলেও সেটি তেমন ভাবে ব্যাপকতা পায়নি। বর্তমান জনবান্ধব সরকার ভিক্ষাবৃত্তির মত সামাজিক ব্যধিকে চিরতরে নির্মূলের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। বিষয়টি বিবেচনায় এনে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে প্রথম বারের মত দেশের ৫৮ টি জেলায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের নিমিত্তে অর্থ প্রেরণ শুরু করেন। যা এখনও চলমান । তাঁর মতে, কোন মানুষ যদি ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে ইচ্ছে প্রশন করেন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চান তাহলে আমরা সরকারি ভাবে তাকে সহায়তা দেব।

তিনি আরো বলেন, আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করলেও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভিক্ষাবৃত্তির কারণে দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এটি প্রতিরোধে সামাজি আন্দোলন গড়ে তোলা সহ আমাদের সবাইকে এক যোগে কাজ করতে হবে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২২ | সময়: ৮:২০ পূর্বাহ্ণ | সানশাইন