হতশ্রী ব্যাটিংয়ে জীর্ণ বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক: অগ্রহায়নের এই শেষ প্রান্তে এসে বিকেলেই যেন মরে আসতে থাকে আলো। সাগরিকায় তাই বিকেল চারটা থেকেই জ্বলে উঠল ফ্লাডলাইট। তাতে মাঠে আলোর রোশানাই এলো বটে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং দীনতার আঁধার দূর করবে কে! স্কিলের দুর্বলতা তো বটেই, আরও বড় ঘাটতি ফুটে উঠল লড়িয়ে মানসিকতা ও নিবেদনে। পরাজয়ের পথ তৈরি হয়ে গেল তাই টেস্টের স্রেফ দ্বিতীয় দিনেই।
নতুন বলে মোহাম্মদ সিরাজ ও উমেশ যাদবের সামনে খাবি খেল বাংলাদেশের ব্যাটিং। বল একটু রঙ হারানোর পর ব্যাটসম্যানরা যেন চোখে সর্ষে ফুল দেখল কুলদিপ যাদবের স্পিনে। ভারতীয় পেস-স্পিনের যৌথ আক্রমণে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের ব্যাটিং। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ১৩৩। ফলো-অন এড়াতে প্রয়োজন এখনও ৭২ রান। প্রথম ইনিংসে ভারত অলআউট হয় ৪০৪ রানে।
বল হাতে ৪ উইকেট শিকারি কুলদিপ ব্যাট হাতেও বাংলাদেশকে যন্ত্রণা দেন যথেষ্ট। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে তার জুটিতেই মূলত চারশ ছাড়াতে পারে ভারত। ৮২ রান নিয়ে দিন শুরু করা শ্রেয়াস আইয়ার ফেরেন আর স্রেফ ৪ রান যোগ করে। কিন্তু অশ্বিন ও কুলদিপ অষ্টম উইকেটে গড়েন ৯২ রানের জুটি। পাঁচটি টেস্ট সেঞ্চুরি করা অশ্বিনের ব্যাট থেকে আসে ৫৮ রানের ইনিংস। একসময় ব্যাট যিনি ছিলেন একদমই আনকোরা, সেই কুলদিপ খেলেন ক্যারিয়ার সেরা ৪০ রানের ইনিংস।
বাংলাদেশের দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজ নেন চারটি করে উইকেট। সেই স্পির মঞ্চেই ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ পড়ে যায় সিরাজ ও উমেশের পেস তোপের সামনে। উইকেটে তাদের জন্য সহায়তা সামান্যই ছিল। কিন্তু মন্থর উইকেটেও তারা যথেষ্ট প্রাণের সঞ্চার করেন গতি ও স্কিল দিয়ে।
তাদের সাফল্য আর বাংলাদেশের হতাশার শুরু ইনিংসের প্রথম বল থেকেই। সিরাজের অফ স্টাম্প ঘেঁষা ডেলিভারিতে উইকেটে পেছনে ধরা পড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। মূলত তিন নম্বরের ব্যাট করলেও এবার ওপেন করতে নেমে এই ব্যাটসম্যান টিকলেন না এক বলও। টেস্টের আগে ওয়ানডে নিরিজের প্রথম ম্যাচেও তিনি পেয়েছিলেন ‘গোল্ডেন ডাক।’
পরের উইকেট আসতেও সময় লাগেনি। নিজ শহরের মাঠে তিনে ব্যাট করার সুযোগ হেলায় হারান ইয়াসির আলি চৌধুরি। উমেশ যাদবের ডেলিভারি শরীর থেকে দূরে খেলে তিনি বল টেনে আনেন স্টাম্পে।
অভিষিক্ত জাকির হাসান অবশ্য শুরুটা মোটামুটি স্বস্তিতে করেন। ব্যাটিং পজিশনে পরিবর্তন দেখা যায় চার নম্বরেও। এই বছর দেশের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান লিটন দাসকে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার তুলে আনা হয় এই পজিশনে।
অষ্টম ওভারে বাংলাদেশ পায় প্রথম বাউন্ডারি। উমেশের টানা দুই বল বাউন্ডারিতে পাঠান লিটন। পরের ওভারে অশ্বিনের বলে দুটি বাউন্ডারি মারেন জাকির। এরপর লিটন আরেকধাপ এগিয়ে টানা তিন বলে দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি মারেন উমেশের বলে। কিন্তু পাল্টা আক্রমণের এই পালা দীর্ঘায়িত হয়নি খুব একটা। লিটনকে একটু স্লেজিং করে নাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সিরাজ। জবাব দিতে সময় নেননি লিটনও। কে জানে, তাতেই হয়তো নড়ে যায় তার মনোযোগ। পরের বলেই একটু নিচু হওয়া বলে লিটনের ব্যাট ছুঁয়ে বল স্টাম্পে (৩০ বলে ২৪)।
জাকিরের ইনিংসও থামে সিরাজের বলেই। অফ স্টাম্পের বাইরে ছেড়ে দেওয়ার মতো বলে তিনি আলতো খোঁচা মেরে বসেন। অভিষেক ইনিংসে তার প্রাপ্তি ৪৫ বলে ২০। বিপর্যস্ত দল তখন তাকিয়ে মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের ব্যাটে। কিন্তু অভিজ্ঞ এই দুজনও পারেননি দলের ভরসা হতে। বরং কুলদিপ আক্রমণে আসার পর আরও ভেঙে পড়ে ইনিংস।
বাঁহাতি এই রিস্ট স্পিনারে দ্বিতীয় বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আলগা শটে উইকেট ছুড়ে আসেন সাকিব। পাঁজরের অস্বস্তি নিয়ে ম্যাচ শুরু করা বাংলাদেশ অধিনায়ক এ দিন এক ওভারও বোলিং করেননি। ব্যাটিংয়েও তিনি ধুঁকছিলেন, পরাস্ত হচ্ছিলেন বারবার। শেষ পর্যন্ত বিদায় নেন ২৫ বলে ৩ রান করে। মুশফিক ও নুরুল হাসান সোহানের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। কিন্তু থিতু হয়েও দুজন রণেভঙ্গ দিয়ে ফেরেন কুলদিপের পরপর দুই ওভারে।
এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যাবে এ দিনই। তবে নবম উইকেটে দিনের শেষ ৯ ওভার কাটিয়ে দেন মিরাজ ও ইবাদত হোসেন। তাতে বাংলাদেশ এ দিন আর গুটিয়ে গেল না। তবে ব্যাটিং জীর্ণতাও ঢাকা পড়ল না। কঙ্কাল তো বেরিয়ে গেছে আগেই!


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২২ | সময়: ৫:১০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর