চারঘাটে বাণিজ্যিকভাবে তুলা চাষ, এক বছরে আবাদ বেড়ে তিনগুণ

চারঘাট প্রতিনিধি
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা। পদ্মা ও বড়াল তীরের প্রাচীন এ জনপদের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। বাঙালির হারানো ঐতিহ্য মসলিন কাপড়ের জন্য মিহি আঁশের কার্পাস তুলার উৎপাদন ও বিক্রির অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল এটি। বর্তমানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের সহায়তায় চারঘাটে আবারও বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে হারানো কার্পাস তুলা চাষ।
জানা যায়, আখ ও ধানসহ অন্যান্য ফসলে অব্যাহত লোকসানের কারণে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কৃষকেরা গত কয়েক বছর ধরে তুলা চাষে ঝুঁকছেন। শুধু এই উপজেলা থেকে গত বছর ২ হাজার ৮২০ মণ তুলা উৎপাদন হয়েছে। টাকার অংকে এই তুলার দাম কোটি টাকারও বেশি।

 

 

কৃষকরা বলছেন, তুলা দেরিতে ফলন দিলেও লোকসানের আশঙ্কা থাকে না। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা যায়। তাই তারা এই ফসলের আবাদ বাড়াচ্ছেন। অন্যদিকে তুলা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি তারা এই অঞ্চলের কৃষকদের দেশীয় তুলার বীজ সরবরাহ করছেন। অন্য ফসল চাষে লোকসান থাকায় কৃষকরা তুলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। রাজশাহীর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তুলা চাষ হচ্ছে চারঘাটে।

 

রাজশাহী তুলা উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে চারঘাট উপজেলায় ৩৮২ জন কৃষক ৪১৫ বিঘা জমিতে কার্পাস তুলা চাষ করেছিল। সরকারি ভাবে তুলার দাম নির্ধারণ করা ছিল ৩ হাজার ৬০০ টাকা মণ। কৃষকেরা লাভবান হওয়ায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৯৪ জন কৃষক প্রায় ১২৫০ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছেন। যা গতবারের চেয়ে তিনগুণ বেশি৷

 

উপজেলার থানাপাড়া গ্রামের কৃষক মুঞ্জুরুল কাদির জানান, বিগতে সময়ে কার্পাস তুলা চাষ করলেও লোকসানের কারনে প্রায় এক যুগ তুলা চাষ থেকে বিরত ছিলেন তিনি। কিš‘ গত বছর তুলার সঙ্গে সবজি আবাদ করে তিনি লাভবান হওয়ায় এবার তুলা চাষে জমির পরিমাণ বাড়িয়েছেন। গত বছর তুলা বিক্রি করে বিঘায় ৩০ হাজার টাকা লাভ করেছেন। এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছেন।

 

উপজেলার মিয়াপুর গ্রামের কৃষক সাজ্জাদ হোসেন জানান, গত বছর তিন বিঘা জমিতে তুলার আবাদ করে ১৪ মণ ফলন আকারে পেয়েছিলেন। খরচ পড়েছিল প্রায় ১২ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমেও একই পরিমান জমিতে আবাদ করেবেন।

 

তিনি বলেন, আখ ও ধান আবাদ করে লাভের মুখ দেখা যায় না। কষ্ট করে উৎপাদন করলেও মহাজনরা সব লাভ খেয়ে নেয়। তাই তিনি তুলার আবাদে ঝুঁকেছেন।

 

টেকস্ই তুলা উন্নয়ন প্রকল্পের (পিএসসিপি) ফিল্ড এক্সিকিউটিভ মারুফ আহমেদ বলেন, কার্পাস তুলার দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তুলার নির্ধারিত মূল্য ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩ হাজার ৬০০ টাকা মণ হয়েছে। এ মৌসুমে আরো বাড়তে পারে। মূলত নায্য মূল্য ও যথাযথ পরামর্শ পাবার কারণে তুলা চাষ বাড়ছে।

 

চারঘাট তুলা ইউনিটের প্রধান কর্মকর্তা আব্দুল গফুর বলেন, গত ৫-৬ বছর ধরে চারঘাটে কার্পাস তুলার আবাদ বাড়ছে। এখানকার চাষিদের দেশি বীজ সরবরাহ করেছি। এই বীজে বিঘায় ২১ মণ তুলা উৎপাদন হয়ে থাকে। আমরা চাষিদের বিজ ও সার কিনতে ঋণ দিয়ে থাকি। চাষিরা ঋণ সুবিধা পেয়ে আবাদ বাড়াচ্ছেন। আমাদের দেশে উৎপাদিত তুলা বিশ্বমানের বলে জানান তিনি।

 


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২২ | সময়: ৪:৫৯ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine