বরেন্দ্রে দার্জিলিং কমলায় স্বপ্ন বুনছে মাজহারুল

সেলিম সানোয়ার পলাশ, গোদাগাড়ী: সারি সারি কমলার গাছ। গাছে ঝুলছে কাঁচা সবুজ ও হলুদ রঙের কমলা। রসালো ও হলুদ রঙের কমলার ভারে প্রতিটি গাছ নুয়ে পড়ছে। এমনি এক কমলার বাগানের দেখা মিলবে বরেন্দ্র ভুমি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুর এলাকায়। বাগানের মালিক মাজহারুল ইসলাম দার্জিলিং জাতের এই কমলা চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন।
চোখ জুড়ানো হলুদ কমলার সৌন্দর্য্যরে সমারোহ দেখতে এসে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এই কমলা চাষে। কথা হয় বরেন্দ্রভূমির বেনপিুর এলাকায় দার্জিলিং জাতের কমলা চাষী মাজহারুলের সাথে। তিনি এউ প্রতিবেদককে জানাই “ চুয়াডাঙ্গা থেকে কমলার চারা ৭ বিঘা জমিতে দার্জিলিং জাতের কমলা চাষ করেছেন। কমলার গাছে ফুল ও ফল ধরেছে। প্রথম দিকে সে দুসচিন্তাই ছিল। তার কমলায় রস ও মিষ্ট হবে কি না? বরেন্দ্রের শুষ্ক মাটিতে এর আগে অনেকেই কমলা চাষের চেষ্টা করেছেন। তাদের কমলায় রস হয়নি, মিষ্টিও হয়নি। তবে এই দুর্ভাবনা এখন দূর হয়েছে তার। কমলায় রস হয়েছে, মিষ্টিও ভালো। একেকটি গাছে গড়ে ২০ কেজি করে কমলা ধরেছে।”
কমলা চাষী মাজাহারুল আরো জানায়, উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ২০১২ সালে কোরিয়ান ভাষা শেখেন। ২০১৩ সালে তিনি লটারির মাধ্যমে সুযোগ পেয়ে কোরিয়ায় যান। সেখানে তিনি একটি কোম্পানিতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে পাঁচ বছর পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি একটি সেন্টারে অন্যদের কোরিয়ান ভাষা শেখাতেন। সেখানে বেশ কিছু শিক্ষার্থী পেয়েছিলেন, কিন্তু করোনার মধ্যে তার সব শিক্ষার্থী চলে যায়। কোনো উপায় না দেখে তিনি গ্রামে ফিরে কৃষিকাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি কমলার চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের জুন মাসের শেষের দিকে তিনি চারা রোপণ করেন। প্রতিটি গাছের দাম ২১৫ টাকা। প্রতি বিঘা জমির ইজারা মূল্য বছরে ১০ হাজার টাকা। এই আড়াই বছরের মধ্যে তিনি কমলাবাগানের মধ্যে সাথি ফসল হিসেবে বলসুন্দরী কুল চাষ করেছেন। দুবার কুল তুলেছেন। তাতে তার কমলা চাষের খরচ উঠে গেছে। তবে কুলগাছের নিচে চাপা পড়ার কারণে এবার সব গাছে কমলা আসেনি। যেসব গাছে এসেছে, তাতে গড়ে ২০ কেজি করে কমলা ধরেছে।
সে আশা করছেন, আগামী বছর তার সব গাছ ফল ধরার উপযোগী হবে। তার কমলার আকার বড়। ৫/৬ টিতে এক কেজি হচ্ছে। বাগান থেকে ব্যবসায়ীরা ১৫০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার আশা, আগামী বছর তার ৮০০ গাছে কমলা আসবে। ২০ কেজি করে কমলা ধরলে ১৬ হাজার কেজি কমলা হবে। দাম কমিয়ে ১০০ টাকা করে ধরলেও কমলা থেকে তার ১৬ লাখ টাকা আসবে। এ আয় থেকে বাদ দিতে হবে জমির ইজারা মূল্য ও পরিচর্যা খরচ বাবদ সাড়ে তিন লাখ টাকা।
কমলার বাগান দেখতে এসেছেন স্থানীয় রাকিবুল হোসেন। তিনি বলেন, মাজাহারুলের বাগানে কমলা চাষের বিষয়টি বেশ কিছুদিন থেকে শুনছিলাম। মূলত দেখার জন্য এসেছি। এ কমলা বাগান দেখে তার মন ভরে গেছে। এত বেশি পরিমাণ ধরে আছে দেখতে খুবই ভালো লাগছে। এই ধরনের মাটিতে এত সুন্দর কমলা হবে, আসলে কল্পনার বাইরে।
গোদাগাড়ী উপজেলার উপসহকারী কৃষি অফিসার অতনু সরকার বলেন, এই অঞ্চল উচ্চ বরেন্দ্র-ভূমি শ্রেণীর মধ্যে পড়েছে। এই জমি সমতল জমির চেয়ে উঁচু। বর্তমানে এই জমিগুলো কমলা চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। কমলা চাষের জন্য যে ধরনের মাটি বৈশিষ্ট্য থাকার দরকার এই অঞ্চলে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ সব সময় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। কেউ এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে চাইলে কৃষি বিভাগ তাদেরকে স্বাগত জানায়। সে সব প্রশিক্ষণে ভূমি শ্রেণি অনুযায়ী কোন ফসল কোন জমিতে ভালো হবে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
যেসব উদ্যোক্তা ও বেকার যুবকরা কৃষিতে আসতে চায় তাদের নিজ নিজ উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে সে কি ফসল করতে চায় সেটার উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করলে আগামীতে কৃষি বিপ্লব ঘটবে। এই এলাকায় বড় ধরনের কমলা বিপ্লব ঘটবে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, ৬ ডিসেম্বর ওই বাগান পরিদর্শনে যান। মাজাহারুলের বাগানে দার্জিলিং জাতের কমলা হয়েছে। কমলাগুলো বেশ রসালো। তিনি নিজে খেয়ে দেখেছেন। তার কাছে এই জাতের কমলা চাষ খুবই সম্ভাবনাময় মনে হয়েছে। বাজারে একই মানের কমলা ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গোদাগাড়ীর সাড়ে তিন হেক্টর জমিতে দার্জিলিং জাতের কমলার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মাজাহারুল ইসলামের কমলাগুলো ভালো হয়েছে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২২ | সময়: ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ