বাগমারায় কৃষকদের সর্বশান্ত করছে বরেন্দ্র কার্যালয়

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: রাজশাহীর বাগমারায় কৃষকদের গভীর নলকুপ স্থাপনের ছাড়পত্র আটকিয়ে অবৈধ ভাবে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বাগমারায় বিএমডিএ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তারা ছাড়পত্র নিতে আসা এলাকার কৃষকদের সর্বশান্ত করে ছাড়ছে। অফিসটি এখন দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি এসব অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারী ঘটনায় মাড়িয়া ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়নের নির্বাহী পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। তবে অবৈধ অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিএমডি’র সহকারী প্রকৌশলী ও সেচ কমিটির সদস্য সচিব শাহাদৎ হোসেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে তিনি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবেন বলে এই জানিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাগমারায় গভীর নলকুপ স্থাপনের ছাড়পত্র আটকিয়ে অবৈধ অর্থ আদায় ও অসহায় কৃষকদের হয়রানীসহ নানা ভাবে কালক্ষেপন করে আসছেন বাগমারা বিএমডিএর কর্মকর্তারা। গভীর নলকুপ স্থাপনের একাধিক আবেদনকারী কৃষকরা জানান, বেশ কিছু দিন পূর্বে উপজেলা সেচ কমিটির মাধ্যমে প্রায় অর্ধশতাধিক গভীর নলকুপ স্থাপনের ছাড়পত্র অনুমোদন করা হয়। সেই মোতাবেক বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আবেদনের অনুমোদনকারীদের খবর দেয়া হয়। আবেদনকারী কৃষকেরা তাদের ছাড়পত্র নিতে বাগমারা বরেন্দ্র অফিসের উপসহকারি প্রকৌশলী শামসুল ইসলাম ও পরিদর্শক জামাল উদ্দিন কৃষকদের কাছে বিশ হাজার টাকা করে দাবী করেন। কোন কোন কৃষক টাকা দিয়ে তাদের ছাড়পত্র বরেন্দ্র অফিস থেকে গ্রহন করলেও অনেকেই এখনো টাকার অভাবে তাদের ছাড়পত্র নিতে পারেন নি। ছাড়পত্র গ্রহন না করায় ইরি- বোরো চাষ নিয়ে ব্যাপক শংকার মধ্যে রয়েছেন বলে জানান এলাকার কৃষকেরা।
কৃষকদের অভিযোগ, নানা কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়। এরই মধ্যে দেলোয়ার হোসেন নামের এক কর্মকর্তাকে কৃষক হয়রানী ও অনিয়ম করার কারণে তাকে বদলী করা হয়েছে। এই কর্মকর্তা প্রায় এক বছরের অধিক সময় বাগমারায় অবস্থান করে বেআইনী ভাবে বরেন্দ অফিসে অবস্থান করেন। তিনি বিদ্যুত ও এসি ব্যবহার করে প্রায় লক্ষাধিক টাকার বিদ্যুত বিল বকেয়া রেখে রাজশাহী পবা উপজেলায় বদলী হয়েছেন। তার আমল থেকেই অফিসটি দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়। তিনি অফিসটিতে দূর্নীতির সিন্ডিকেট পরিণত করেন।
অফিসের উপসহকারি প্রকৌশলী শামসুল ইসলাম ও পরিদর্শক জামাল উদ্দিনকে নিয়ে কৃষক হয়রানীর ফাঁদ তৈরি করেন। তাদের সেই ফাঁদ এখনও বহায় তবিয়তে রয়েছে। বেড়েছে দূর্নীতির নানান কৌশল ও কৃষক হয়রানী। সম্প্রতি দেলোয়ার হোসেন নামের ওই কর্মকর্তা বদলী হলেও অফিসটির দূর্নীতির মাত্রা একবিন্দুও কমেনি বরং বেড়েছে। এখন শামসুল ইসলাম ও জামাল উদ্দিন পূর্বের স্টাইলে চালাচ্ছেন দূর্ণীতি ও কৃষক হয়রানী। তারা প্রতিটি সেচ সংযোগর ছাড় পত্রের জন্য ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, গভীর নলক’পের মিটার বাবদ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা, ট্যান্সফরমার মেরামত বাবদ ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায়ের মাধ্যমে বছরে প্রায় কয়েক কোটি টাকার দূর্নীতি করে চলেছেন।
বিএমডিএ অফিসের এই দুই কর্মকর্তা কৃষকদের কাছ থেকে টাকা দাবী করে বলেন, তাদের বস অর্থ্যাৎ সহকারি প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন ও সেচ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সম্মানী বাবদ এই টাকা দিতে হয় ? তা না হলে তাদের নামে ইস্যুকৃত ছাড়পত্র বাতিল বা অন্যের নামে দেওয়া হবে বলে তারা জানিয়ে দেন। ভটখালিব কৃষক এরশাদ আলী, আবুল কালাম আজাদ ও যোগিপাড়ার কৃষক এরফান আলী সহ ১০/১২ জন কৃষক জানান, তারা গভীর নলকুপ স্থাপনের জন্য বাগমারা বরেন্দ্র অফিসে আবেদনের পর থেকে পদে পদে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। ওই অফিসের পরিদর্শক জামাল উদ্দিন ইরিগেশন ফিল্ড পরিদর্শনে এসে দুই দফা মোটা অংকের টাকা নিয়ে গেছেন। টাকা নেওয়ার আগে তিনি তার স্যার সহকারি প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন ও উপজেলা সেচ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের ভাগ দেওয়া লাগবে বলে জানিয়েছেন। এদিকে বিলের পানি নেমে যাওয়ায় ইরি বোরো মৌসুম শুরু হওয়ায় কৃষকরা নতুন গভীর নলকুপ স্থাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই সুযোগে বরেন্দ্র অফিসের ঘুষখোর সিন্ডিকেট চক্র কৃষকদের পকেট কেটে তাদের সর্বশান্ত করতে ওঠেপড়ে লেগেছেন বলে জানান ভুক্তভোগি কৃষকরা।
জানতে চাইলে উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আব্দুল মুমিন জানান, গত মাসে তারা কিছু গভীর নলকুপ স্থাপনের ছাড়পত্রের অনুমোদন দিয়েছেন। তবে এর জন্য কোন টাকা পয়সার বিষয়ে আলোচনা হয়নি। তবে সেচ কমিটির নাম করে কেউ টাকা পয়সা দাবী করলে বিষয়টি খুবই নিন্দনীয়। বাগমারায় অবস্থানকালীন সাবেক সহকারি প্রকৌশলী (বর্তমানে রাজশাহী পবায় কর্মরত) দেলোয়ার হোসেনের কাছে তার অনিয়ম দূনীতির বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে একাদিক বার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বাগমারা বিএমডিএ’র অনিয়ম বিষয়ে জানতে চাইলে অফিসের উপ প্রকৌশলী শামসুল ইসলাম আগে কিছু অনিয়ম হয়েছে স্বীকার করে বলেন, এখন আমরা সবকিছু ঠিকঠাক ও স্বচ্ছতার সাথে চালাতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
অপর দিকে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা বিএমডিএ’র সহকারি প্রকৌশলী সেচ কমিটির সদস্য সচিব শাহাদৎ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকের সাথে মুখোমুখি কথা বলতে চান। তার পরও কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে যথাযত ব্যাবস্থা নিবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সদ্যযোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি এ,এফ,এম আবু সুফিয়ান বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এখনো বিএমডিএর কর্মকর্তাদের সাথে বসা হয়নি। কোন সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পেলে কঠোর ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।


প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২২ | সময়: ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ