বাঘা পৌর নির্বাচন : প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে আবারও পরাজিত হবে আওয়ামীলীগ

স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা : আগামী ২৯ ডিসেম্বর রাজশাহীর বাঘা পৌরসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রায় হাফ ডজন আওয়ামী লীগ নেতা। তবে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে আবারও পরাজিত হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। তাদের দাবি, গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নৌকা পেয়ে যে প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন, তাঁকে কোন ভাবেই যেন এবার দলীয় মনোনয়ন দেয়া না হয়। তাহলে আবারও আ’লীগের পরাজয় হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচিত হবে বিএনপি নেতা(সতন্ত্র) প্রার্থী কামাল হোসেন।
স্থানীয় একাধিক আওয়ামী নেতা-কর্মীরা জানান, গত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ছিলেন একাধিক বিতর্কিত কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ও চলতি বছরের ২১ মার্চ উপজেলা আ’লীগের সম্মেলনে হামলাকারি সেই আক্কাস আলী। যাকে ১৯৯৬ সালে দল থেকে বহিস্কার করা হয়ে ছিলো। তার কর্মী-সমর্থকদের মুখ থেকে শোনা যাচ্ছে, এবার পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তিনি আট-ঘাট বেধে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে তাঁকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা।
দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে বহুল আলোচিত বিবস্ত্র মামলার আসামী ও আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কালো পতাকা দেখিয়ে দলীয় পদ হারিয়ে ছিলেন আক্কাস আলী। পরবর্তী সময় ২০০০ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে আবারও দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়। মাঝ খানে তিনি একটি নির্বাচনে পাঁচ বছরের জন্য বাঘা পৌর মেয়র এর দায়িত্ব পেলেও পৌর সভাকে বর্ধিত করা সহ সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা সমস্যায় আদালতে মামলা হওয়ায় প্রায় ১২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্ণীতির অভিযোগ উঠে। যে কারনে গত নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরেও বিএনপি’র প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাকের কাছে পরাজিত হন। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে আব্দুর রাজ্জাক দু’দকে আয়কর, এডিপি অর্থ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ না করে বিল উত্তোলন-সহ নানা অভিযোগ এনে প্রায় ৮ কোটি টাকার আত্নসাৎ এর অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে, বাঘা পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে মেয়র পদে নির্বাচন করার লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে ভোট চাওয়া সহ পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ করছেন আ’লীগ নেতা সাবেক মেয়র আক্কাস আলী, পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান পিন্টু ও উপজেলা মহিলা আ’লীগের সভানেত্রী ফাতেমা মাসুদ লতা। তাঁরা প্রত্যেকেই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশা নিয়ে ইতোমধ্যে জেলা এবং কেদ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
তবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত মাঠে নামেননি হ্যাবি ওয়েটধারী বাঘার দুই নেতা আমানুল হাসান দুদু ও আশরাফুল ইসলাম বাবুল। তাঁরা মনে করছেন, দল তাঁদের দু’জনের যে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দিতে পারে। অত:পর দলীয় মনোনয়ন পেলে তাঁরা গনসংযোগে নামবেন।
বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, সিনিয়র সদস্য মাসুদ রানা তিলু, সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ নছিম উদ্দিন ও বাঘা পৌর সভার প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্ট জানান, আক্কাস আলী ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী রায়হানুল হক রায়হান এর বিরুদ্ধে কুলা প্রতীক নিয়ে ভোট করে বিএনপির প্রার্থী কবির হোসেনকে বিজয়ী করে আনন্দ উল্লাস করেন। এরপর ২০১৪ সালে তিনি একই ভাবে আ’লীগ দলীয় প্রার্থী আলহাজ শাহরিয়ার আলমের পক্ষে কাজ না করে বিদ্রোহী প্রার্থী রায়হানুল হক রায়হান এর পক্ষে ভোট চান। সর্বশেষ তিনি ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী আবু সাইদ চাঁদের সাথে হাত মেলান। তবে হলফ নামায় ত্রুটি এবং একাধিক মামলা থাকায় সেইবার আবু সাইদ চাঁদের মনোনয়ন বাজেয়াপ্ত হয়। এবার সেই আক্কাস বাঘা পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও নৌকা প্রতিক পাওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। তবে তৃণমুল আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা দাবি করেছেন এবার প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে আবারও নৌকার ভরাডুবি হবে।
বাঘা থানা পুলিশের একটি মুখপাত্র জানান, সাবেক পৌর মেয়র আক্কাছ আলী ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কালো পতাকা দেখিয়ে ছিলেন এটি সত্য। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিগত সময়ে বহুল আলোচিত বিবস্ত্র মামলা সহ একাধিক নারী নির্যাতন, সরকারী কাজে বাধা প্রদান, মদ্যপান, আদালতের নাজিরকে মারপিট, ধর্ষণ, বলৎকার, জমি দখল, শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে মাতলামি, সরকারি কাজে দুর্ণীতি ও হোটেল ভাংচুরসহ ২২টি মামলা এবং ২৫ টি জিডি রয়েছে। তাঁর নামে সর্বশেষ মামলা হয় গত ২১ মার্চ উপজেলা আ’লীগের সম্মেলনে হামলা ও ভাংচুর বিষয়ে।


প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২২ | সময়: ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ