সর্বশেষ সংবাদ :

নৌ-বন্দর স্থাপনে জটিলতা : রাজশাহীর চারঘাটে স্থলবন্দর স্থাপনের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর চারঘাটে স্থলবন্দর স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার সারদা ট্রাফিক মোড়ে সীমান্ত উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির ব্যানারে মানববন্ধনে সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন। এখানে স্থলবন্দর স্থাপনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও সায় দিয়েছেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ভারতের গঙ্গা আর এদেশের পদ্মা দুই দেশের অন্তরায়। রাজশাহী তার কোল ঘেসে দাড়িয়ে। ভারতের প্রস্তাবিত স্থান কাগমাড়ির সাহেব নগরের সঙ্গে সারদা ট্রাফিক মোড়ের দূরত্ব মাত্র ৫-৬ কিলোমিটার। ওই স্থানটি এক সময় ভারতের জলঙ্গী থানাধীন ছিল, যা বর্তমান সাহেব নগর থানার অধিনে রয়েছে। সেই সূত্র ধরে স্থল বন্দরটি সারদা ট্রাফিক মোড় এলাকায় স্থাপনার জন্য দাবি জানায় স্থানীয়রা।
রাজশাহী সীমান্ত উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা জানান, বর্তমান সরকার যদি সারদার ট্রাফিক মোড় সংলগ্ন এলাকাটি স্থলবন্দর স্থাপনের জন্য নির্বাচন করেন তাহলে সময়, অর্থ দুটই কম লাগবে। নদীপথে চার থেকে ৬ কিলোমিটারে একটি সেতু নির্মাণ করলেই সহজে গড়ে উঠতে পারে স্থল বন্দর।
স্থলবন্দর স্থাপনা নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি বলেন, চারঘাট উপজেলায় একটি স্থলবন্দর স্থাপনার জন্য তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছিলেন। যা স্থানীয়রা কখনও চিন্তা করতে পারেন নি। চারঘাট-বাঘা তথা রাজশাহীবাসির জন্য আর্শিবাদ হিসাবে কাজ করবে এই বন্দরটি। এই বিষয়ে ভারতের স্থানীয় সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে চিঠি দিয়েছেন, এখন দুই দেশের সরকারের সমিক্ষা পর্যায়ে আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত সেপ্টম্বরে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেছিলেন। ওই সময় স্থল বন্দরের বিষয়টি অনেক উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। তারা যদি মনে করেন এই বন্দরের ফিজিবিলিটি আছে তখনি পরের ধাপে যাবে। তবে অবশ্যই জনগনের দাবি থাকলে অনেক কঠিন কাজ সহজ হয়।
এদিকে খোজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীতে একটি নৌ প্রটোকল রুট চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ২০২০ সালের অক্টোবরে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক নির্ধারিত এলাকা পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আগামী এক মাসের মধ্যেই তারা পরীক্ষামূলকভাবে পণ্য আনা-নেওয়া শুরু করবেন।
এরপর একমাস পার হয়ে দুই বছর ঘুরতে চললো। এখন সেই নৌ-রুট চালু নিয়ে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ বলছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে পদ্মা নদী হয়ে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া পর্যন্ত নৌ প্রটোকল রুট হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি কাস্টম অফিস করে দিলেই পণ্য আনা-নেওয়া শুরু হবে। কিন্তু এনবিআর কাস্টম অফিস করেনি।
ফলে নৌ-রুট স্থাপনের আপাতত কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। কবে এই জটিলতা কাটবে সেটিও স্পষ্ট নয়। এ অববস্থায় চারঘাটে স্থলবন্দর স্থাপনের দাবি করেন সীমান্ত উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটারের একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও তা কার্যকর নেই। তাই নতুন পথটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত পণ্য চলাচলের উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ। এই পথের দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। অনেকটা আড়াআড়িভাবে পদ্মা নদী পাড়ি দেবে পণ্যবাহী নৌযান। ভারত-বাংলাদেশ পদ্মা নদীর এই নৌরুট চালু হলে ভারতের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য যোগাযোগ আরও সহজ হবে।
সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, নৌবন্দরটি চালু করতে এখনও আলোচনা চলছে। সম্প্রতি তিনি ঢাকায় এনিয়ে কথা বলেছেন। নদী খনন করে যাতে এই বন্দরটি চালু করা যায়, সেজন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছেন।
রাজশাহী সীমান্ত উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, তারা রাজশাহীর চারঘাটের সরদহ ট্রাফিক মোড়ে স্থলবন্দর স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। এটি বাস্তবায়ন হল ভারতের জলঙ্গির সঙ্গে রাজশাহী অঞ্চলের যোগাযোগ আরও উন্নয়ন হবে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এতে রাজশাহী অঞ্চল গড়ে উঠতে পারে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও।


প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২২ | সময়: ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর