ধানের দামের সুফল পাচ্ছে না কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: রাজশাহীর বাগমারায় ধানের বাজার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষক। এখানে ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয় করলে বাজার ঠিক থাকছে আবার তারা ধান ক্রয় করা থেকে বিরতি দিলেই ধানের বাজার পড়ে যাচ্ছে। এদিকে উড়তি রোপা-আমন ধান উঠায় কৃষকরা বেশী বেশী ধান বাজারে সরবাহ করছে। ধানের সরবরাহ বাড়াই ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয়ে কৌশল করছে বলে ধানচাষীর অভিযোগ তুলেছেন। ফলে ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষকরা বিপকে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে মওসুমের রোপা-আমন প্রচলিত উন্নত জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে গত মওসুমে বোরো ও আউস ধানের ফলন বিপর্যয়ে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবারে এলাকায় অনেক বেশী জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। ধান কাটা-মাড়া শেষ প্রান্তে। এবারে অতিরিক্ত কীটনাশক ও সারের মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকটে অতিরিক্ত মুজুরীতে কৃষকের ধানচাষে খরচ অনেকটা বেড়েছে। ফলে বাজারে ধানের ন্যায্য মূল্য না পেলে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে কৃষকরা দাবি করেছেন।
উপজেলার মোহম্মাদপুর, গোপালপুর, বালানগর, দেউলিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতবছর বীজ সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধানের চাষে প্রায় অর্ধেক উৎপাদন হয়েছিল। এবারে রো-আমন চাষে কৃষকরা পুষিয়ে নিতে গত বছরের থেকে বেশী ধানচাষ ও উৎপাদনে ঝুঁকে। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে বিগত দিনের চেয়ে খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ মিলছে না।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ১ বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে ১৫-১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাজারে ১২-১৩শ’ টাকা দামে ধান বিক্রি চলছে। বর্তমানে বিঘায় মওসুমের ধান উৎপাদন ১৪-১৫ মণ হারে ফলন হয়েছে।
কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরীসহ উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিতে ধান চাষে বিঘা প্রতি ৩ হাজর থেকে ৪ হাজার টাকা লাভ মিলছে। দীর্ঘ প্রায় ৪ মাস ধরে মুলধন ও শ্রম দিয়ে তেমন লাভ না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশায় ভুগছেন। শুক্রবার উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ হাটবারে বাজারে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ধান বিক্রেতা মাড়িয়া গ্রামের লুৎফর রহমানের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়।
তিনি বলেন, সকাল ৭টার সময় বাজারে ধান নিয়ে এসেছি। ধানের ব্যাপক আমদানী ধানের সরবরাহ দেখে ধান ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয় করতে দেরি করছে। এছাড়া ধানের দাম কম দিতে দাম-দর করছে না। বাজারে ৭৫ জাতের ধান বেশী উঠেছে। অন্য ধান হাইব্রিড, বিআর-৪৯, বিআর-৫১, বিআর-৫২ এসেছে। হাইব্রিড ধান ১২শ’ টাকা ও ৭৫ জাতের ধান ১৩শ’ টাকায় বিক্রি চলছে।
বালানগর গ্রামের হেলাল উদ্দিন, দুলাল হোসেনসহ কয়েকজন কৃষক জানান, বাজারে সব জিনিসের দাম উর্দ্ধগতি সে হিসেবে ধানের বাজার কম। ধান উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে অনেক বেশী। ফলে ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
এ দিকে ধান বাজার নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা না থাকায় ধানের বাজার অস্থিতিশীল। এতে করে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হলেও রোদ্দ-বৃষ্টিতে খেটে খাওয়া উৎপাদনশীল কৃষকরা বরাবরের মতই বিড়াম্বনায় পড়ছেন বলে ধানচাষীরা জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল রাজ্জাক জানান, ব্যাপক আমদানির ফলে ধানের বাজার কিছুটা পড়ে গেছে। চাল কল মালিক ও বড় ব্যবসায়ীরা পুরোদমে ধান ক্রয় শুরু করলে বাজার আবারো চাঙ্গা হবে।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২২ | সময়: ৬:২১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ