রাজশাহীতে সিনেমা হল চালুর উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে একে একে বন্ধ হয়েছে সব সিনেমা হল। শহর কিংবা উপজেলা কোথাও সিনেমা হল নেই। সিনেমা দেখার জন্য দর্শক পার্শ্ববর্তী জেলার হলগুলোতে ছুটছেন। তাদের আক্ষেপ দূর করতে রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠে পবা উপজেলার কাটাখালীর ‘রাজ তিলক’ সিনেমা হলটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজ তিলক হলে সবশেষ ২০১২ সালে সিনেমা প্রদর্শন করা হয়। এর পর থেকে হলটি বন্ধ হয়ে পড়ে ছিল। সম্প্রতি মালিকের কাছ থেকে পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়া এলাকার সাজ্জাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি হলটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন। বর্তমানে সংস্কারের কাজ চলছে।
সাজ্জাদ হোসেন মূলত চলচ্চিত্রে ‘প্রোডাকশন ম্যানেজার’ হিসেবে কাজ করেন। থাকেন ঢাকায়। রাজ তিলককে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সিনেমা হল করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, হলটির সংস্কার কাজ চলছে। অল্প দিনের মধ্যে চেয়ার বসানোর কাজ শুরু হবে। ব্যবসা ভালো হলে ভবিষ্যতে সিনেপ্লেক্সও করবেন। এ মাসের শেষ দিকে কিংবা নতুন মাসের শুরুতে নতুন কোনো চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি হলটি পুনরায় উদ্বোধন করতে চান। হলটিতে একসঙ্গে ৬০০ মানুষ বসে সিনেমা দেখতে পারবেন।
কাটাখালী পৌর এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে হলটির সামনে গিয়ে দেখা গেল, নামফলক পড়ে গিয়ে হয়ে আছে ‘রাজ তলক’। দু-একজন বলাবলি করছিলেন, ‘রাজ তলকের’ কপাল খুলছে, এবার ‘রাজ তিলক’ হবে। হলের সামনে টানানো ব্যানারে দেওয়া হয়েছে শিগগির হল চালুর ঘোষণা। শ্রমিকেরা হল সংস্কারের কাজ করছেন, যার দেখভাল করছেন হলের তত্ত্বাবধায়ক আক্কাস আলী।
১৯৯৮ সাল থেকে আক্কাস আলী হলটির সঙ্গে আছেন। সিনেমা হলটির ইতিহাস নিয়ে তিনি বলেন, নওগাঁর আজিজ খান নামের এক ব্যক্তি হলটি নির্মাণ করেছিলেন। আশির দশক ভালো ব্যবসা করেছেন। পরে ঢাকার শহিদুল হক সিকদার নামের এক ব্যক্তি হলটি কিনে নেন। তাঁর কাছ থেকে হলটি কিনে নেন রাজশাহীর রানা ও দুলু নামের দুই ভাই। তাঁদের কাছ থেকে আনোয়ারুল হক নামের আরেকজন হলটি কিনে নেন। সবশেষ ২০১২ সালে ‘কমন জেন্ডার’ সিনেমা চলাকালে হলটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রুম্মান আলী হলটি কিনে নেন। যদিও তাঁরপর আর হলটি চালু হয়নি।
আক্কাস আলী বলেন, তাঁরা আশা করছেন দ্রুতই কাজ শেষ করে হলটি চালু করতে পারবেন। বর্তমানে যিনি হলটির দায়িত্ব নিয়েছেন, তিনি খুব দ্রুত কাজ করছেন।
হলের মালিক রুম্মান আলী বলেন, চলচ্চিত্রের অবস্থা আর ভালো না হওয়ায় তিনি হলটি চালু করতে পারেননি। এখন চলচ্চিত্রের অবস্থা মোটামুটি ভালোর দিকে আছে। তাঁর কাছ থেকে তাই হলটি চালু করার জন্য সাজ্জাদ হোসেন পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছেন।
এ হলে সবশেষ ‘লালটিপ’ নামের সিনেমা দেখেছেন মনিরুল ইসলাম। তিনি ওই হলের নিচে একটি খাবার হোটেল চালান। মনিরুল বলেন, কয়েক দিন ধরে কাটাখালীতে আলোচনা হচ্ছে হলটি চালু হবে। এটা খুব ভালো সংবাদ। তিনি এই হলে অনেক সিনেমা দেখেছেন। হল চালু হলে কাটাখালী একটু জাঁকজমক হবে।
হলটি চালু হলে রাজশাহীর চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আক্ষেপ মিটবে বলে মনে করেছেন আলোচিত ‘শাটিকাপ’ চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম।
তিনি বলেন, রাজশাহী শিক্ষানগরী এবং সাংস্কৃতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখানে অনেক গুণী মানুষের জন্ম। এ জায়গার মানুষ ছিলেন ঋত্বিক কুমার ঘটক। এ রকম একটি জায়গায় একটি সিনেমা হল না থাকা মেনে নেওয়াই কঠিন। রাজশাহীতে একটি সিনেমা হল চালু হচ্ছে, এটা খুবই খুশির সংবাদ। বর্তমানে সিনেমার যে জোয়ার চলছে, তাতে এখানে সিনেমা হল থাকাটা খুব প্রয়োজন।


প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২২ | সময়: ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ