সর্বশেষ সংবাদ :

গ্রিড বিপর্যয়: ঢাকাসহ দেশের বড় এলাকা বিদ্যুৎহীন

সানশাইন ডেস্ক: জাতীয় গ্রিডের একটি সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দেওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বড় এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ২টার কিছু সময় পর এ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-পিজিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব এলাহী চৌধুরী বলেন, “যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনে বিপর্যয় ঘটেছে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে কমপক্ষে ২/৩ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। আমাদের টিম অলরেডি কাজ শুরু করেছে।” ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহের বড় এলাকা এই বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে, পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের আরো কিছু এলাকায় আংশিক বিদ্যুৎ চলে গেছে বলে জানান নির্বাহী পরিচালক।
তিনি বলেন, “এক এলাকায় সমস্যা হলে সেটা অন্য এলাকাকেও আক্রান্ত করে। তবে কোন অঞ্চল থেকে সমস্যার সূত্রপাত, সেটা টেকনিক্যাল কারণে আমরা এখনই বলছি না।” এক মাস আগেই জাতীয় গ্রিডের আরেকটি সঞ্চালন লাইনের বিভ্রাটে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা ৪০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকে।
বার বার কেন সমস্যা হচ্ছে-এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “কারিগরি ত্রুটির কারণেই এমনটি হয়েছে বলে আমরা মনে করি। ওভারলোডের কারণে সমস্যা হয়নি। তবে আরও কোনো কারণ আছে কিনা তা বুঝতে বেশ কিছুক্ষণ সময় প্রয়োজন।” ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ নেই মঙ্গলবার বেলা ২টা থেকে। চট্টগ্রামও আড়াইটার পর থেকে বিদ্যুৎহীন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, “আমরা যেটা জানতে পেরেছি ন্যাশনাল গ্রিডের ইস্টার্ন জোনে বিপর্যয় হয়েছে। তবে সমস্যা ঠিক কোথায়, সেটা আমরা এখনও জানতে পারিনি।” বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদের জানান, তাদের পুরো বিভাগেই বিদ্যুৎ নেই।
“সমস্যাটা জাতীয় গ্রিডে। তারা কাজ শুরু করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।” গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে মৌলভীবাজারেও দুপুর থেকে বিদ্যুৎ নেই বলে জানিয়েছেন পিডিবির জেলা কার্যালয়ের একজন প্রকৌশলী। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ময়মনসিংহ উত্তর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আনোয়ারুল হক বলেছেন, বেলা ২টা থেকে তার এলাকা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। সমস্যা মিটতে সময় লাগবে বলে তারা জেনেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, “সমস্যাটা আমাদের এখানে না। তবে গ্রিড ফেইল করেছে।” সমস্যার সমাধানে জাতীয় গ্রিডে কাজ চলছে জানিয়ে পিডিবির উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) শামীম হাসান বলেন, “আগামী ২/৩ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আমরা আশা করছি।”
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করতেও কিছুটা বিদ্যুৎ লাগে। আবার কোনো কারণে কোনো সঞ্চালন লাইনে লোড বেড়ে গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
কোনো কারণে কোনো কেন্দ্র বা সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো সিস্টেমে সরবরাহের ঘাটতি তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে কিছু এলাকা বিদ্যুৎহীন রেখে অথবা অন্য কোনো গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ এনে ‘লোড’ সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা করা না গেলে অর্থাৎ লোড সমন্বয় না হলে অন্য কেন্দ্রগুলোর ওপর চাপ বাড়ে।
এভাবে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেনারেটর বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর নতুন করে কোনো কেন্দ্র বন্ধ হলে সরবরাহে ঘাটতি আরও বাড়ে এবং একইভাবে অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রও বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দিলে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা ৪০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকে। ওই ঘটনায় পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী (সিস্টেম অপারেশন) বি এম মিজানুল হাসানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কিন্তু ঠিক কী ঘটেছিল, তা আর জানানো হয়নি।
কালবৈশাখী ঝড়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কালীপুরে একটি বিদ্যুতের টাওয়ার ভেঙে পড়ে ২৩০ কিলোভোল্টের সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে ২০১৭ সালের ২ মে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ জনপদের অন্তত ৩২ জেলার মানুষকে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়।
তার আগে ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সঞ্চালন কেন্দ্রে বিপর্যয় দেখা দিলে ভারতের সঙ্গে সঞ্চালন লাইন বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ভারতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রক্রিয়া। একই সময় দেশের উৎপাদনে থাকা সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র একযোগে বন্ধ হয়ে গেলে, ধস নামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ফলে সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়।


প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২২ | সময়: ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ