পঞ্চগড়ে মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভ, ফেরত এল ‘ঘুষের’ টাকা

সানশাইন ডেস্ক: চাকরি দেওয়ার নামে দবিরুল থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়েছিলেন জুলফিকার। দবিরুলের মৃত্যুর পর তার লাশ নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যে জুলফিকার অর্ধেক টাকা ফেরত দেন। পঞ্চগড়ে ‘চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে হাতিয়ে নেওয়া’ ১২ লাখ টাকার অর্ধেক ‘প্রতারকের’ কাছ থেকে ফিরে পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ব্যতিক্রমী এক ঘটনার মধ্য দিয়ে।
একটি মাদ্রাসায় ছেলের চাকরির জন্য দুবছর আগে এক ব্যক্তিকে ১২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন পঞ্চগড়ের দবিরুল ইসলাম প্রধান (৫৭)। কিন্তু দুবছরেও সেই চাকরি না হওয়ায় তিনি প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের প্রধানপাড়া গ্রামের দবিরুল ইসলাম মারা যান।
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, প্রতারিত হওয়ার হতাশা আর প্রতারক জুলফিকারের হুমকি-ধমকিতে মানসিক চাপ সইতে না পেরে দবিরুল মারা গেছেন। সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার লাশ বাড়ি আনার পর পরিবারের সদস্যরা দবিরুলের মরদেহ নিয়ে জুলফিকারের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে টাকা ফেরতের দাবি জানান। এক পর্যায়ে জনপ্রতিনিধির হস্তক্ষেপে দবিরুলের পরিবারের সদস্যদের জুলফিকার এক লাখ টাকা নগদ এবং পাঁচ লাখ টাকার চেক দিলে বিষয়টির মীমাংসা হয়।
“দবিরুলের পরিবারের হাতে নগদ এক লাখ টাকা এবং পাঁচ লাখ টাকার চেক দেন জুলফিকার। বাকি টাকা আগামী দুই মাসের মধ্যে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন।”
মৃত দবিরুল প্রধানের ছেলে আব্দুস সবুর প্রধান (২৩) বলেন, প্রধানপাড়া দারুল ফালাহ দাখিল মাদ্রাসায় লাইব্রেরিয়ান পদে তার ভাই জাহিরুল ইসলামের চাকরির জন্য দুই বছর আগে জুলফিকার আলী প্রধানকে তার চাওয়া অনুয়ায়ী ১২ লাখ দেন তার বাবা। জুলফিকার আলী প্রধান সে সময়ে ওই মাদ্রাসার সভাপতির পদে ছিলেন বলে জানান সবুর।
সবুর বলেন, “মাসখানেক আগে তিনি বাবাকে জানিয়ে দেন নানা কারণে জাকিরুলের চাকরি হচ্ছে না। তাই গত ১৫ দিন আগে আমার বাবা ১২ লাখ টাকা ফেরত চাইলে জুলফিকার আর তার পরিবারে লোকজন তাকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করে।” টাকার চিন্তায় আর তাদের অপমান সহ্য করতে না পেরে দবিরুল হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং মারা যান বলে সবুরের অভিযোগ।
দবিরুলের বড় ভাই বদিরুল ইসলামের দাবি, গ্রামের বাসিন্দারা শুরু থেকেই এই চাকরির বিষয়ে টাকা দেওয়ার ঘটনা জানেন। তাই তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর এলাকার লোকজনও ক্ষুব্ধ হয়। বদিরুল ইসলাম বলেন, “বৃহস্পতিবার ভাই মারা গেলে তার লাশ নিয়ে জুলফিকারের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পরিবারের সবাই মিলে অনশন করি। চাপের মুখে জুলফিকার নগদ এবং চেকে ছয়লাখ টাকা ফেরত দেয়। বাকি টাকা দুই মাসের মধ্যে ফেরত দেবে বলেও মুচলেকা দিয়েছে।”
এরপর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে স্থানীয় ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিনের বাসায় বিষয়টি নিয়ে বৈঠকের পর দবিরুলের মৃতদেহ তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং শুক্রবার সকালে স্থানীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা বলে জানান বদিরুল। দবিরুলের ছেলে সবুর বলেন, “ছয় লাখ টাকা ফেরত দিতে রাজি হওয়ায় বাকি টাকা আমরা মাফ করে দিয়েছি। এ নিয়ে আমরা আর কোনো কথা বলতে চাই না।” সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, মৃতদেহ নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হলে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। দবিরুলকে দাফনে পর এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।


প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২২ | সময়: ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ