আষাঢ়ের দ্বিতীয় দিনে স্বস্তির বৃষ্টি

নুরুজ্জামান,বাঘা : ঋতুচক্রে আষাঢ়-শ্রাবণ এই দু’মাস বর্ষাকাল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, বছরের প্রায় ৮০ শতাংশ বৃষ্টি হয় এই ঋতুতে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির সে রূপ এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। তার পরেও বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়েই আসে এ আষাঢ় মাস। কয়েক দিন থেকেই প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল জনজীবন। হটাৎ বর্ষার দ্বিতীয় দিনে নেমে এলো স্বস্তির বৃষ্টি।

ঘড়িতে যখন ২ টা ছুঁইছুঁই তখন থেকেই থেমে থেমে বয়ছিল শীতল হাওয়া। আকাশে জমেছিল কালো মেঘ। চায়ের দোকানে বসে কেউ আকাশপানে চেয়ে আছে। একটু দূরে কোনো রিকশাওয়ালা তার গলায় ঝুলে থাকা গামছা দিয়ে মুছল কপালের ঘাম। কারণ মধ্যদুপুর মানেই গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠার সময়। ঠিক সেই সময়েই গরমের অস্বস্তি কাটিয়ে স্বস্তি নিয়ে এলো বৃষ্টি।

স্থানীয়দের মতে, গ্রীষ্মের অগ্নিঝরা দিনগুলো যখন প্রকৃতিকে করে বিবর্ণ ও শুষ্ক এবং জনজীবনকে করে অসহনীয়, তখনই বর্ষা রিমঝিম বৃষ্টি ঝরিয়ে প্রকৃতিকে করে তোলে সজীব। বর্ষার মুষলধারার বৃষ্টিতে ভেজার জন্য তাই তৃষিত অপেক্ষাতুর প্রকৃতি উন্মুখ। সেই তৃষ্ণা কাটিয়ে বাংলা বর্ষপরিক্রমায় বর্ষা এলো। বর্ষার ভারী বর্ষণে শরীর ধুয়ে নেয় প্রকৃতি। পরিচ্ছন্ন হয়, নতুন করে জেগে ওঠে। বেলী, বকুল, গোলাপ,জুঁই, দোলনচাঁপা, গন্ধরাজ, রজনী গন্ধা ও হাসনাহেনার ঘ্রাণে ভরে ওঠে চারপাশ।

আর ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল-এর হাসি তো ভুবন ভোলানো! কী গ্রাম, কী নগর, সর্বত্রই বর্ষার আগমনীবার্তা দেয় কদম। বর্ষা আমাদের জন্য অপরিহার্য এক ঋতু। বৃষ্টি না হলে শস্যাদি জন্মাবে না, বেড়ে উঠবে না প্রাণ। বৃষ্টির অভাবে মাটি যখন অনুর্বর হয়ে যায়, তখন বর্ষা এসে তা উর্বর করে। আমাদের নদী, মাঠ, ঘাটের দেশ বর্ষায় ভরে ওঠে সবুজে শ্যামলে। বর্ষায় প্রাণ পায় গাছপালা। তৃষ্ণা মেটায় কৃষক।

বাঙালির মননে সবচেয়ে বেশি রোমান্টিকতার সুর বাজে এ বর্ষায়। বর্ষায় আবেগ ও অনুভূতির জোয়ারে ভাসেননি এমন কবি, সাহিত্যিক পাওয়া যায় না। শুধু যে কবি-সাহিত্যিক তা নয়, সাধারণ মানুষও বর্ষায় ফোটা কদমফুল হাতে অপেক্ষায় থাকে প্রেমিকার জন্য। কালীদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ থেকে নির্মলেন্দু গুণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে হুমায়ূন আহমেদ౼কেউ-ই বর্ষাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘আষাঢ়’ কবিতায় বলেছেন, ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর, আউশের ক্ষেত জলে ভরভর, কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিছে দেখ্ চাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।’

অপর দিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাছে বর্ষাকে মনে হয়েছে ‘বাদলের পরী’। তিনি লিখেছেন, ‘রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে/কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে।’


প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২২ | সময়: ৬:৪৮ অপরাহ্ণ | সানশাইন