সর্বশেষ সংবাদ :

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো স্থিতিশীলঃ আতিউর রহমান

 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সংকটের মুখে ফেলেছে বিশ্ব অর্থনীতিকে। প্রায় সকল দেশেই দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। বেড়েছে আমাদানি ও ভোগ্য পণ্যের দাম। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর কিছুটা প্রভাব পড়লেও এখনো অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে।’

গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ‘বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাংলাদেশের বাস্তবতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে মূখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক আতিউর রহমান বলেন, বড় আর নানামুখি সংকটের মধ্যে আছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। অতিমারির কারণে খাদ্যসংকটসহ শিল্প উৎপাদন ও সরবরাহে সংকট ছিল। সাপ্লাই চেইনগুলো ঝুঁকিতে ছিল। অতিমারির প্রকোপ কমে আসায় পুনরুদ্ধার শুরু হতে না হতেই শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার ফলে সাপ্লাই চেইনগুলোতে ব্যাপক ঝুঁকির সৃষ্টির মাধ্যমে খাদ্য ও কৃষি পণ্যসহ সবধরনের পণ্যের মূল্য বেড়েছে। সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছে মানুষ।

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক এই সংকট মোকাবেলায় গত ১২ মাসে প্রায় সকল দেশের অর্থনীতিতেই নিজস্ব মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। এর মধ্যে চীনের মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৫ শতাংশ, ভারতে ডলারের বিপরীতে রুপির দাম কমেছে ৬ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের পাউন্ডের দাম কমেছে ১২ শতাংশ, ইউরোর আরো বেশি প্রায় ১৪ শতাংশ। এমন সংকটের দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিরল। বিশ্বের এই সংকটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। দেশে পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সংকটটি মূলত আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যস্ফীতির। বর্তমানে আমাদের মাসিক বাণিজ্য ঘাটতি ২.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যদিও রেমিট্যান্স কিছুটা বাণিজ্য ঘাটতি সামাল দিচ্ছে। তারপরও মাসিক নিট বাণিজ্য ঘাটতি ১.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তিনি বলেন, নীতি সুদ হার না রেপো রেট বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ প্রয়োজনীয় প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তবে আরো এক ধাপ এগোতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উপর প্রদত্ত ঋণের উপর ৯ শতাংশের বেশি সুদ না নেওয়ার যে নির্দেশ রয়েছে, তা উঠিয়ে নিতে হবে। তা নাহলে রেপো রেট বাড়ানোর পুরো সুফল আসবে না। মনে হবে, মূদ্রানীতি অন হোল্ড রয়েছে।

তিনি বলেন, কেবল মূদ্রানীতি দিয়ে সংকট উত্তরণ হবে না, সরকারের বাজেটেও যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য বাজেটে সামাজিক খাতগুলোতে বরাদ্দে মনোযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে বাজেটের ৮ শতাংশ, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ড. আতিউর রহমান আরো বলেন, কৃষি আমাদের অর্থনীতির রক্ষাকবচ। তাই, কৃষির বিকাশ নিশ্চিত করতে বাজেটে উদ্যোগ রাখতে হবে। কৃষি ভর্তুকি তিনগুণ বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করতে হবে। কৃষি সংশ্লিষ্ট সরকারি জনবলের দক্ষতা সক্ষমতা বাড়াতে বরাদ্দ রাখতে হবে। কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে ও ব্যক্তিখাতে যারা কৃষি গবেষণা করছেন, তাদের জন্য প্রণোদনা দিতে হবে। আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি বাজারজাতকরণ ও তথ্য আদান-প্রদান বাড়াতে হবে। কৃষি অবকাঠামো ও অনলাইনে কৃষি বাজারজাতকরণ বাড়াতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

সেমিনার কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ- উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক (অব.) মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন।

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে রাবির বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা, অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. আব্দুল ওয়াদুদ, রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, রাবি অর্থনীতি এ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সাবেক ব্যাংকার আরিফুল হক কুমার প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

সানশাইন/তৈয়ব


প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২২ | সময়: ৮:২২ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine