সর্বশেষ সংবাদ :

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো অগ্নিঝরা মার্চ

ঢাকা অফিস: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো অগ্নিঝরা মার্চ মাস। একাত্তর সালের এ মাসেই বাঙালির মুক্তির জন্য সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  প্রথম প্রহরে গতরাতে ১২টা ১ মিনিটে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে আওয়ামী স্বেছাসেবক লীগ। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের ঐতিহাসিক বীরত্বপূর্ণ ঘটনাবলী স্মরণে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আজ  আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমীর  হোসেন আমু এই আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ধৈর্য্য ধরে বিচক্ষণতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আগানোর আহ্বান জানান। স্বাধীনতার শত্রুরা এখনো সক্রীয় আছে উল্লেখ করে  তিনি বলেন, জিয়ার ২৭ মার্চের রেডিও ঘোষণা যদি স্বাধীনতার ঘোষণা হয় তাহলে ১৯ মার্চ জয়দেবপুর সেনানিবাসে বাঙালি-অফিসার-সৈনিকরা বিদ্রোহ করেছিলেন কার আহ্বানে? তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা স্বাধীনতা আন্দোলনের গতিপথ সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছিল। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন, জাসদের সহ-সভাপতি নুরুল আকতার প্রমুখ। রাশেদ খান মেনন  বলেন,  ১৯৪৮ সাল থেকে ধাপে ধাপে বাঙালি জেগে উঠছিল। অগ্নিঝরা মার্চ হঠাৎ করে ঘটেনি কিংবা ইয়াহিয়ার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় ঘটেনি। বাঙালি জাতি স্বাধীনতার লক্ষ্যে উত্থিত হয়েছিল। ১ মার্চ ছাত্র-জনতা ‘স্বাধীন কর, স্বাধীন কর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ শ্লোগান দিয়ে কার্যত স্বাধীনতার সুনির্দিষ্ট পথ রচনা করে এবং ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের শাসন কর্তৃত্বভার গ্রহণ করেন। হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, স্বাধীনতার পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, জাতির পিতা, সমাজতন্ত্রসহ রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি-আদর্শ-চরিত্র এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শত্রু-মিত্র নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে, অগ্নিঝরা মার্চে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যাদের ভূমিকা নাই, যারা  সেদিন বাঙালি ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল তারা আজও বাংলাদেশ ও বাঙালির এগিয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না। তারা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথে বাঁধা তৈরি করে চলেছে। বাঙালি ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছে। ইনু বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চিরশত্রু স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী পাকিস্তানপন্থী গোষ্ঠী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এখনও যুদ্ধ করছে। অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এর মধ্য দিয়ে মার্চ মাসের কর্মসূচির সূচনা করল সংগঠনটি। সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এর আগে সংগঠনের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু’র নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা আলোর মিছিল ও শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। মার্চ মাস  বাঙালির স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতির মাস। ১৯৭১ সালে এসে যে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে যদিও তার গোড়াপত্তন হয়েছিল বহু বছর আগে। তারপরে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র শিক্ষা আন্দোলন এবং ’৬৯’র গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চে এসে বাঙালির সেই স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতিকে স্পর্শ করে। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের গহীনে লালন করা তখনো অধরা ‘স্বাধীনতা’ যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ‘তুমি যে সুরের আগুন ছড়িয়ে দিলে, মোর প্রাণে সেই আগুন ছড়িয়ে গেলো সবখানে, সবখানে’, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ¯্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ স্বাধীনতার অমর কাব্যের একটি পঙক্তি বাঙালি জাতিকে ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তায় বলীয়ান করে তোলে। এই মার্চেই পাকিস্তানকে বাঙালি বিদায় সম্ভাষণ জানায়। পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৫ মার্চ রাতে কামান, মর্টার, রাইফেল নিয়ে অতর্কিতে বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু তখন গ্রেফতার হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর সর্বশেষ বাণী বাংলার মানুষের কাছে পাঠান এই বলে, ‘এই হয়তো তোমাদের জন্য আমার শেষ বাণী। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। যে যেখানেই থেকে থাক, যে অবস্থায়ই থাক, হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তোল। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে, যতদিন পর্যন্ত না দখলদার পাকিস্তানিদের শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটিতে থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’  বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল বাঙালি জাতি।  নয়মাস সশস্ত্র সংগ্রামের  ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশের।


প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২২ | সময়: ৯:১১ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ