বাগমারায় এনজিও কর্মকর্তার পীড়নে মাঠকর্মীর আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: রাজশাহীর বাগমারায় বিহেড ফাউন্ডেশন নামে এক এনজিও পরিচালকের মানষিক পীড়নের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন এক মাঠকর্মী। আত্মহননকারী ওই মাঠকর্মীর নাম নাজমুল রহমান সাফিন।
গতকাল শুক্রবার তিনি বিষপান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। নিহত নাজমুল রহমান সাফিন ছয়মাস পূর্বে বিহেড ফাউন্ডেশনে মাঠকর্মী হিসেবে বাগমারার তাহেরপুর শাখায় নিয়োগ নিয়েছিলেন।
জানাযায় নিয়গের পর নাজমুল রহমান মাদারীগঞ্জ-মোহনগঞ্জ এলাকায় দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ওই এলাকায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা বিতরণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতোপূর্বে যারা ওই এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করা হয়েছিল। ওইসব টাকা তুলতে না পেরে চাকরী ছেড়েছেন বেশ কয়েক জন। পরবর্তীতে তাহেরপুরের মৃত মিজানুর রহমানের ছেলে নাজমুল রহমান সিফান বিহেডের ওই তাহেরপুর শাখায় যোগদান করেন।
যোগদানের পর থেকে মাদারীগঞ্জ এবং মোহনগঞ্জ এলাকায় ঋণ উত্তোলনের দায়িত্ব প্রদান করা হয় তাকে। শতভাগ ঋণ তুলতে না পারায় প্রায়ই চাপ দিতেন বিহেডের পরিচালক আবু বক্কর। পরিচালকের চাপে পড়ে শতভাগ ঋণ উত্তোলন দেখাতে নাজমুল রহমান তার স্ত্রীর গহনা বিক্রি করেও ঋণের টাকা অফিসে জমা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পরিবারে ঝামেলাও হয়েছে নাজমুলের।
অবশেষে গত বৃহস্পতিবার বিষপান করেন নাজমুল রহমান। তার অবস্থা গুরুতর হলে তাহেরপুরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সুস্থ না হওয়ায় বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সেখানেই শনিবার মৃত্যুবরণ করেন নাজমুল রহমান। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে থানাকে অবহিত করা হলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয়।
জানাগেছে, বিহেড ফাউন্ডেশন বাগমারা, মোহনপুর এবং দুর্গাপুর উপজেলা ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এর কর্মী সংখ্যা ৩৬ জন। ৪টি অফিসের মাধ্যমে ঋণ পরিচালনা করছেন বিহেড ফাউন্ডেশন।
এদিকে নাজমুল রহমান সাফিনের অকাল মৃত্যুর জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বিহেডের পরিচালককে দায়ী করা হয়েছে। নাজমুল রহমান সাফিনের স্ত্রী পরিজান আক্তার নদী অভিযোগ করেন লোকজনের মাঝে বিতরণ করা ঋণ উত্তোলন করার জন্য প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োগ করতেন বিহেডের পরিচালক আবু বাক্কার। ঋণের টাকা উত্তোলন করতে পারলো কি না সেটা দেখার সময় নেই পরিচালকের। ঋণ টাকা অফিসে জমা দিতেই হবে। ঋণের টাকা জমা দিতে আমার গহনাও বিক্রয় করেছিল তিনি। অত্যধিক মানষিক চাপে পড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে আমার স্বামী। ৯ মাস হচ্ছে আমাদের বিয়ে হয়েছে।
এদিকে বিহেডের পরিচালক আবু বক্কর তার উপরে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে যে কয়জন মাঠকর্মী আছে তার মধ্যে নাজমুল রহমান সিফান সহজ সরল। সে সকল ঋণ উত্তোলন করতে পারে। তার সাইডে কোন ঋণ বকেয়া পড়ে না। পরিবারিক কারণে নাজমুল আত্মহত্যা করেছে বলে দাবী করেন তিনি।
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। লাশের ময়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেলে প্রেরণ করা হবে। ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হবে। কি কারণে আত্মহত্যা করেছে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২ | সময়: ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ